চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

হাতের মুঠোয় কাঙ্ক্ষিত টিকা

নিজস্ব প্রতিবেদক 

১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ | ১:৫৪ অপরাহ্ণ

অবশেষে বহুল প্রতীক্ষিত করোনার ভ্যাকসিন পৌঁছেছে চট্টগ্রামে। গতকাল (রবিবার) ভোর ৬টা ৪৫ মিনিটে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ে এসে পৌঁছায় ৪ লাখ ৫৬ হাজার ডোজ বহনকারী গাড়ি।

সকাল ৭টা ১০ মিনিটে বেক্সিমকো ফার্মার শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কাভার্ডভ্যান থেকে নামানো হয় ভ্যাকসিনের ৩৮ কার্টুন। যা সাথে সাথেই ইপিআই কোল্ড রুমে ওয়ার্ক ইন কুলারে রাখা হয়। এসব টিকা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির ও জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে ভ্যাকসিন মনিটরিং মেশিন দিয়ে কার্টুনে রাখা টিকার তাপমাত্রা যাচাই করা হয়। সংশ্লিষ্টরা জানান, টিকার গুণগতমান সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে যেভাবে আনা হয়েছে, ঠিক একইভাবে তা ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে আনা হয়।

সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে জানানো হয়, ঢাকার টঙ্গীর সেন্ট্রাল ওয়ারহাউজ থেকে গাড়ি বহরে সকাল সাতটায় সিভিল সার্জন কার্যালয়ে এসে পৌঁছায় এসব টিকা। যা পুলিশি পাহারায় নির্ধারিত সময়ের আগেই পৌঁছে যায়। ৩৮ টি কার্টুনে আসে এসব টিকা। এতে সর্বমোট টিকা রয়েছে ৪ লাখ ৫৬ হাজার পিস। যা আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে নির্ধারিত টিকাদান কেন্দ্রগুলোতে পৌঁছানোর বিষয়ে প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে বলে জানান কর্তৃপক্ষ।

সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, চট্টগ্রামবাসী অধীর অপেক্ষায় ছিল এ ভ্যাকসিনের জন্য। অবশেষে তা এখন হাতের মুঠোয়। আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে টিকাগুলো নগরীর সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন এলাকার নির্ধারিত হাসপাতাল কেন্দ্র এবং বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হবে।

এদিকে, শুধু চট্টগ্রাম জেলাতেই নয়, একইদিন পৃথক গাড়িতে টিকা পৌঁছায় তিন পার্বত্য জেলায় এবং কক্সবাজার জেলাতেও। সব মিলিয়ে এ বৃহত্তর চট্টগ্রামের পাঁচ জেলায় এদিন ৫ লাখ ৭৬ হাজার ডোজ টিকা এসেছে গতকাল। আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে টিকাদান কার্যক্রম শুরু করার কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির বলেন, তিন পার্বত্য জেলা ও চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার জেলায় টিকা পৌঁছেছে। সব কিছু ঠিক থাকলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই টিকাদান কার্যক্রম শুরু করা হবে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের টিকাদান কার্যক্রম সম্পন্ন করতে ইতোমধ্যে ট্রেনিং শুরু হয়েছে।

নগরীতে টিকাদানের প্রশিক্ষণ শুরু আজ : নির্ধারিত সময়ে টিকাদান শুরু এবং সঠিকভাবে এ কার্যক্রম সফল করতে ইতোমধ্যে প্রস্তুতি নিয়েছে সিটি কর্পোরেশন। এমন বাস্তবতায় আজ (সোমবার) থেকে দুই দিন ব্যাপী প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। যাতে ২১ জন অংশ গ্রহণ করবে। যারা পরবর্তীতে স্থানীয় পর্যায়ে পুনরায় প্রশিক্ষণ প্রদান করবে বলে জানিয়েছেন চসিকের করোনা ভ্যাকসিন প্রদান কমিটির সদস্য সচিব ও চসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী। তিনি বলেন, নগরীর ১৫ টি কেন্দ্রে টিকাদান কার্যক্রম চলমান রাখতে ২১ জনকে প্রথমে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। পরবর্তীতে তারা সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে নিয়োজিতদের প্রশিক্ষণ দিবেন।

৭ ফেব্রুয়ারিই শুরু টিকাদান : নির্ধারিত তারিখ (৭ ফেব্রুয়ারি) টিকাদান কার্যক্রম শুরু করতে চায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে কেন্দ্রও নির্ধারণ হয়েছে। ঠিক হয়েছে উদ্বোধনের দিন ও সময়। তবে প্রথম দিন কাদের টিকা দেয়া হবে তা নির্ধারণ না হলেও সম্মুখসারির যোদ্ধাদের দিয়ে শুরু করতে চায় কর্তৃপক্ষ। যার জন্য আগামী দু-একদিনের মধ্যে পুনরায় বৈঠকে বসবেন টিকা কার্যক্রম বাস্তবায়নের সাথে সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকরা। এমনটিই জানিয়েছেন চসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী।

টিকা পৌঁছেছে তিন পার্বত্য জেলা ও কক্সবাজারে : চট্টগ্রাম জেলা ছাড়াও করোনার ভ্যাকসিন পৌঁছেছে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলাতেও। রবিবার (গতকাল) সকাল ও দুপুরে সদর হাসপাতালের ইপিআই সেন্টারে পৌঁছায় টিকা বহনকারী গাড়ি।

পূর্বকোণের প্রতিনিধিরা জানান, পৃথক পৃথক গাড়ি করে এসব টিকা পৌঁছায়। এরমধ্যে ভোর ৫টায় বান্দরবান সদর হাসপাতালের ইপিআই স্টোরে এসে পৌঁছায় প্রথম পর্যায়ে বরাদ্দকৃত ১২ হাজার ডোজ ভ্যাকসিন। যা গ্রহণ করেন বান্দরবানের সিভিল সার্জন ডা. অং সুই প্রু মারমা।

সকাল ১০ টায় পুলিশ পাহারায় একটি ভ্যানে করে কক্সবাজার জেলার জন্য বরাদ্দ হওয়া ৮৪ হাজার ডোজ টিকা পৌঁছায়। যা সিভিল সার্জন ডা. মাহাবুবুর রহমান গ্রহণ করেন। তিনি জানান, প্রথমে কক্সবাজারে সদর হাসপাতালে এই টিকা দেয়ার কার্যক্রম শুরু হবে। পাশাপাশি উপজেলায়ও চলবে কার্যক্রম। ৮৪ হাজার টিকার মধ্যে ৭২ হাজার কক্সবাজারের, বাকি ৮ হাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মী থেকে শুরু করে পুলিশ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দেয়া হবে।

১২ হাজার ডোজ টিকা পৌঁছেছে খাগড়াছড়ি জেলাতেও। দুপুর আড়াইটার দিকে বেক্সিমকো ফার্মার শীততাপ নিয়ন্ত্রিত কাভার্ডভ্যান সদর হাসপাতালের ইপিআই সেন্টারে পৌঁছায়। এছাড়া সমপরিমাণের টিকা পৌঁছেছে রাঙামাটিতেও। যা সদর হাসপাতালের ইপিআইটি কোল্ড চেইন স্টোরে রাখা হয়েছে।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট