চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

ইশতেহার বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ: পর্ব ১

জলাবদ্ধতা নিরসন খাল ও নালার স্থাপনা উচ্ছেদ

ইফতেখারুল ইসলাম

৩১ জানুয়ারি, ২০২১ | ১১:৫৪ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম শহরের সবচেয়ে বেশি আলোচিত বিষয় জলাবদ্ধতা। নবনির্বাচিত মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী নির্বাচনের আগে তার ইশতেহারে যে ৩৭টি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তার মধ্যে তিনটি দফায়ই জলাবদ্ধতা নিরসনের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন।

একইসাথে হালদা ও কর্ণফুলী নদীর নাব্যতা রক্ষা এবং খাল-নালা থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের কথা বলেছেন। বিশেষজ্ঞ এবং সচেতন মহলের অভিমত এসব প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন হওয়া উচিত। তবে মেয়রের একার পক্ষে এই কাজ করা সম্ভব হবে না। কারণ একেকটি কাজ একেক মন্ত্রণালয়ের অধীনে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহের সাথে সমন্বয়ের বিষয়টি সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে।

তাছাড়া জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্পের কাজ করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। সিডিএ এই প্রকল্পটি গ্রহণ করেছে। এখানে সিটি কর্পোরেশনের কী ই বা করার আছে। এমন প্রশ্নও জনমনে ঘুরপাক খাচ্ছে।

ইশহেতারে রেজাউল করিম বলেন, নির্বাচিত হলে জলাবদ্ধতা নিরসনে বিভিন্ন সংস্থার বাস্তবায়নাধীন মহাপ্রকল্প ঠিকভাবে বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ মনোযোগ দেবেন। জলাবদ্ধতা নির্মূলে মহাপরিকল্পনা ও নগর উন্নয়নে ডেল্টা প্ল্যান সঠিকভাবে বাস্তবায়নে বাধা দুর করতে প্রথম ১০০ দিন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করবেন। এছাড়া সংশ্লিষ্ট সেবা সংস্থা ও সেনাবাহিনীর দায়িত্বপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের সাথে বসে তা তদারকি করা, দখলকৃত খাল, নালা, নদী পুনরুদ্ধার ও পানি নিষ্কাশন উপযোগী করতে সব ত্রুটি ও প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করে তা নির্মূলে আইনের কঠোর প্রয়োগের কথাও বলেন।

কুমিল্লা ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. তোফায়েল আহমদ পূর্বকোণকে বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসন এবং নদীর নাব্যতা রক্ষা সিটি কর্পোরেশনের একার পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ চসিকের বিশেষায়িত জ্ঞান নেই, সেরকম দক্ষ লোক নেই। চট্টগ্রাম বন্দর, সিডিএ, চট্টগ্রাম ওয়াসা, পানি উন্নয়ন বোর্ড, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সব সংস্থাকে নিয়ে কাজটি করতে হবে। প্রতিমাসে সবাইকে নিয়ে পর্যালোচনা করতে হবে। যেখানে একটি সংস্থা নেতৃত্ব দেবে।

মেগাপ্রকল্পের কাজটি যেহেতু সিডিএ’কে দিয়েছে, তাদের উচিত এগিয়ে আসা। কর্ণফুলীর নাব্যতার জন্য বন্দরের সংশ্লিষ্টতা আছে। পাহাড় কাটার কারণে বালি এসে খালে পড়ে। সেনাবাহিনীর প্রকৌশল দক্ষতাকে কাজে লাগাতে হবে। হালদার নাব্যতা রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ড ভূমিকা রাখতে হবে। এককভাবে কোন সংস্থা কাজটি করলে তাতে সফলতা আসবে না। সিটি কর্পোরেশন-সিডিএ’র দ্বন্দ্বের কোন কারণ নেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান মেগা প্রকল্পের পরিচালক লে. কর্নেল শাহ আলী পূর্বকোণকে বলেন, শহরের ৫৭ খালের মধ্যে ৩৬টি খালের সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে এবং ত্রুটি চিহ্নিত করে সমাধানের কাজ চলছে। তবে নবনির্বাচিত মেয়র মেগা প্রকল্পের বাইরে যেসব খাল-নালা রয়েছে সেখানে কাজ করতে পারেন। তবে চসিকের ড্রেনের ডিজাইনে ত্রুটি আছে কিন্তু ওই এলাকার পানি যাবে কি যাবে না তা চিন্তা করে না। অনেক সময় ড্রেনের অর্ধেক কাজ করে। কিছুদিন পর বাকি অর্ধেক করে। তখন পানির স্রোত উল্টো হয়ে যায়।

নবনির্বাচিত মেয়রের প্রতিশ্রুতি প্রসঙ্গে বলেন, সিটি কর্পোরেশন যদি না চায় প্রকল্পের কাজ শেষ করলেও জলাবদ্ধতা নিরসন হবে না। খালে যাতে ময়লা না আসে তা সিটি কর্পোরেশনকে নিশ্চিত করতে হবে। আরো ২১টি খাল এবং অনেক ড্রেন আছে। ওইসব খাল নালা থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের উদ্যোগ নিতে পারে চসিক। কিছু খাল শহরের বাইরে দিয়ে গেছে। সেসব খালে রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণের প্রয়োজন নেই।

চলমান প্রকল্পের অধীনে ৫০ কিলোমিটার ড্রেন করা হয়েছে। তার বাইরেও ড্রেন আছে। চসিক ড্রেন করার সময় সেনাবাহিনীর পরামর্শ নিয়ে ডিজাইন করলে পানি নিষ্কাশন হবে। সবচেয়ে বড় কথা হল প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পর কেউ যাতে খালে আবর্জনা ফেলতে না পারে সেটি চসিককে নিশ্চিত করতে হবে।

পূর্বকোণ/পি-আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট