চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

শেষ হাসি রেজাউল করিমের

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন 

২৮ জানুয়ারি, ২০২১ | ১২:৩৫ অপরাহ্ণ

সহিংসতা, সংঘাত-সংঘর্ষ ও ঘটনাবহুল নির্বাচনে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরী বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছেন। বেসরকারি ফলাফলে বিজয়ী প্রার্থী রেজাউল করিম পেয়েছেন তিন লাখ ৬৯ হাজার ২৪৮ ভোট। ৭৩৫ ভোটকেন্দ্রে মধ্যে দুটি কেন্দ্রে নির্বাচন স্থগিত রয়েছে।  গতকাল বুধবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।

সরেজমিন দেখা যায়, সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হলেও ভোটার উপস্থিতি কম ছিল। শীত ও কুয়াশার কারণে সকাল বেলায় ভোটারের হার কম ছিল বলে জানান প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা। তারা জানান, সকাল ১০টার পর থেকে ভোটার উপস্থিতি বাড়তে শুরু করে। তবে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কম ছিল। বিভিন্ন কেন্দ্রে বিএনপি সমর্থিত মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের এজেন্ট বের করে দেওয়ার অভিযোগ ছিল বিএনপির। বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোটদানের গোপন কক্ষে অবাঞ্চিত লোকের উপস্থিতি দেখা যায়। এছাড়াও কেন্দ্র দখল, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, সহিংসতা ও খুনোখুনির ঘটনা ঘটেছে।

নির্বাচনী প্রচারণা থেকে শুরু সংঘাত-সহিংসতা লেগে ছিল। ২৮নং পাঠানটুলি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ প্রচারণায় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে আজগর আলী বাবুল নামে এক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছিলেন। নিহতের ঘটনায় শেষ হল ভোটগ্রহণ। চসিক নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন, ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে।’

আওয়ামী লীগও নির্বাচন নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে। দুপুরের আওয়ামী লীগ প্রার্থীর প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। আর বিএনপির দাবি, নির্বাচনের নামে জনগণকে নির্যাতন করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া সমালোচনা করে বিএনপি প্রার্থী দাবি করেছেন, নির্বাচন আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সঙ্গে হয়নি। নির্বাচন হয়েছে আওয়ামী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে।

আওয়ামী লীগ এ বিজয়কে দেশের ব্যাপক উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য বর্তমান সরকারের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতিফলন বলে দাবি করেছে। আওয়ামী লীগ প্রার্থী প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট এডভোকেট ইব্রাহীম হোসেন চৌধুরী বাবুল বলেছেন, এই বিজয়ের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে। মানুষ লাইন ধরে পছন্দনীয় প্রার্থীকে ভোট দিতে পেরেছে। কিন্তু ভোটারের উপস্থিতি দেখে বিএনপি ভীত-সন্তস্ত্র হয়ে পড়েছে। বহিরাগত এনে নির্বাচনে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা চেষ্টা চালিয়েছে।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে ৪১ ওয়ার্ডে ৭৩৫টি ভোটকেন্দ্র রয়েছে। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রেই ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএমে) ভোটগ্রহণ করা হয়েছে। গত রাতে ৭৩৩ কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা করা হয়। পাথরঘাটা ও পাহাড়তলী ওয়ার্ডে দুটি ভোটকেন্দ্র স্থগিত রয়েছে। ৭৩৩ কেন্দ্রের মধ্যে তিন লাখ ৬৯ হাজার ২৪৮ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে মেয়র নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের স্থলাভিষিক্ত হতে যাচ্ছেন।

তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বিএনপি প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন পেয়েছেন ৫২ হাজার ৪৮৯ ভোট।

নগরী এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেসিয়াম মাঠ থেকে সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়। রিটার্নিং অফিসার মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান মেয়র প্রার্থীদের বেসরকারি ফলাফল ঘোষণা করেন।

রিটার্নিং কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন, নির্বাচনী কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, গণমাধ্যমসহ সকলের সহযোগিতায় সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব হয়েছে। এজন্য সকলকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি।

এর আগে ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই নির্বাচনে ৪ লাখ ৭৫ হাজার ৩৬১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী আ জ ম নাছির উদ্দীন। তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী এম মনজুর আলম পেয়েছিলেন ৩ লাখ ৪ হাজার ৮৩৭ ভোট। ভোট পড়েছিল ৩৭ দশমিক ২৯ শতাংশ। সেই নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ এনে ভোট বর্জন করেছিলেন বিএনপি প্রার্থী।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট