চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

প্রস্তাবিত বাজেটে ৫ শতাংশ আগাম করারোপের নেতিবাচক প্রভাব

কারও পৌষমাস, কারও সর্বনাশ

খাতুনগঞ্জ

কামরুল ইসলাম

১৯ জুন, ২০১৯ | ২:৩৩ পূর্বাহ্ণ

প্রস্তাবিত বাজেটে সব ধরনের আমদানি পণ্যের ওপর ৫ শতাংশ হারে আগাম কর আরোপের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। দেশের বৃহত্তম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে ইতিমধ্যে ভোগ্যপণ্য ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ কোটি কোটি টাকা মুনাফা করেছে, আর অনেকে ফতুর হয়ে গেছে লোকসানে। অপরদিকে, তৈরি পোশাক শিল্পসহ বহু প্রতিষ্ঠানের আমদানি পণ্য চালান খালাসের অপেক্ষায় বন্দরে পড়ে আছে।
বাজেট ঘোষণার পর প্রথম কার্যদিবসে খাতুনগঞ্জে ভোগ্যপণ্যের বাজারে ভয়ানক অস্থিরতা তৈরি হয়। বিশেষত চিনি, তেল, গম এবং মসলার দর বেড়ে যায়। শনি, রবি এবং সোম এই ৩দিনে প্রতি মণ গমে দর বেড়ে যায় ৫০ টাকা। চিনির দর বৃদ্ধি পায় প্রতি মণে ১০০ টাকা। ভোজ্য তেলেও দর বাড়ে ১০০ টাকা প্রতি মণে। মসলাজাত পণ্যে দর বৃদ্ধি পায় প্রতি কেজিতে ৫ টাকা। অনুসন্ধানে জানা যায়, ৫ শতাংশ হারে আগাম করারোপ হলেও তা কার্যকর হওয়ার পরবর্তী কোন পণ্য বাজারে আসেনি। তার আগেই দর বৃদ্ধি করে দেয়া হয়। যাদের হাতে পণ্য ছিল তারা বর্ধিত দরে বিক্রি করেন। আরও অধিক মুনাফার সম্ভাবনায় অন্যরা কিনে নেন। এ প্রসঙ্গে কয়েকজন জানালেন, ঐ আগাম কর কার্যকর হওয়ার পর খালাস হওয়া পণ্যের দর পাইকারি বাজারে যা হওয়ার কথা সেই তুলনায় অনেক বেশি বৃদ্ধি করে দেয়া হয়। আর এই প্রক্রিয়ায় বাড়তি দরে ভোগ্যপণ্যসমূহ বেচাকেনা হয়েছে তিন দিন। তবে, সোমবার বিকেল থেকে জানাজানি হয় যে আগাম করারোপের বিষয়টি সংশোধন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাতে বাজার হয়ে পড়ে নি¤œমুখী। যাদের হাতে পণ্য ছিল তারা বেচে দেয়ার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন। গতকাল সব পণ্যের দর পতনের পর আবার পূর্বের অবস্থায় ফিরে এসেছে। পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাজেটের পর যে উথাল-পাতাল হলো তাতে কেউ কেউ মুনাফা করলেও লোকসান গুণতে হয়েছে অনেককে। এখন তাদের মাথায় হাত।
খাতুনগঞ্জের এক আমদানিকারক জানালেন, তাদের পণ্য চালান পড়ে আছে বন্দরে। কারণ, এখন শুল্কায়ন করা হলে তাতে আগাম করসহ যোগ হবে। প্রত্যাহার হলে পরবর্তীতে ফেরত বা সমন্বয়ের বিধান রাখা থাকলেও সেটা যে কত জটিল তা প্রত্যেক ভুক্তভোগীর জানা। তাই অপেক্ষায় রয়েছেন বলে জানালেন তারা।
চিটাগাং চেম্বার সভাপতি ও খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী মাহবুবুল আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে জানান যে প্রস্তাবিত বাজেটে আমদানির ওপর আগাম করারোপের বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়েছে ভোগ্যপণ্যের বাজারসহ সর্বত্র। বিষয়টি নিয়ে তিনি কথা বলেছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য ( ভ্যাট ) এর সাথে। তিনি এটা কার্যকর নাও হতে পারে এবং বাজেট পাশের আগে এ খাতে আদায় করা কর পরবর্তীতে ফেরত দেয়া হবে বলে উল্লেখ করেন। মাহবুবুল আলম বলেন, অগ্রিম করের বিষয়টি পুনর্বিবেচনার সম্ভাবনায় অনেক আমদানিকারক শুল্কায়ন না করে পণ্য চালান নিয়ে অপেক্ষায় রয়েছেন।
তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন -বিজিএমইএ’র প্রথম সহ-সভাপতি মো. আবদুচ ছালাম জানান, রপ্তানির বৃহত্তর স্বার্থে তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য আমদানি করা ক্যাপিটাল মেশিনারিজ, ফায়ার ডোর, ফায়ার ফাইটিং ইকুইপমেন্ট, স্প্রিংকলার সিস্টেম ইত্যাদি পণ্যের চালান ৫ শতাংশ আগাম করারোপ ছাড়া খালাসের ব্যবস্থা প্রয়োজন। তা জানিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড চেয়ারম্যান বরাবরে পত্র দেয়া হয়েছে। যোগাযোগ করা হলে তিনি এ প্রসঙ্গে জানান, শতভাগ রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠানের আমদানি করা ঐসব পণ্য খালাসে আগাম কর কর্তন করা হচ্ছে। শতভাগ রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠান কর্তৃক এসআরও’র আওতায় যন্ত্রপাতি আমদানিতে ১ শতাংশ শুল্ক এবং অগ্নি নিরাপত্তা সংক্রান্ত উপকরণ আমদানিতে ৫ শতাংশ হ্রাসকৃত হারে শুল্কায়ন প্রযোজ্য। প্রস্তাবিত বাজেটে নতুনভাবে আরোপিত আগাম কর এই শিল্পের জন্য কোনভাবে প্রযোজ্য নয়। তিনি এ ব্যাপারে কাস্টম হ্উাসে জরুরি ভিত্তিতে নির্দেশনা পাঠানোর জন্য আহ্বান জানিয়েছেন রাজস্ব বোর্ডকে।
নতুন ভ্যাট আইনের ৩১ ধারা সংশোধন করে সব ধরনের আমদানি পণ্যের ওপর ৫ শতাংশ হারে আগাম কর আরোপ করা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে বলা হয়েছে, ‘করযোগ্য আমদানির ওপর ৫ শতাংশ আগাম কর আদায় করতে হবে। প্রত্যেক নিবন্ধিত আমদানিকারক নির্ধারিত পদ্ধতিতে সংশ্লিষ্ট কর মেয়াদে মূসক দাখিলপত্রে পরিশোধিত আগাম করের সমপরিমাণ অর্থ সমন্বয় করতে পারবেন। যারা নিবন্ধিত নয়, তারা কমিশনারের কাছে আগাম কর ফেরত পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন।’এই নিয়ে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের মধ্যে। তারা বলেছেন, সরকার যেখানে ব্যবসা সহজ করার জন্য নানা ব্যবস্থা নিচ্ছে সেখানে এই আগাম কর তার পরিপন্থী। সহজ করার পরিবর্তে ব্যবসাকে এটা জটিল করবে। এভাবে আগাম কর আদায় হয়রানি ছাড়া আর কিছু নয়।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট