চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

মেয়রকে হতে হবে দক্ষ সেবক

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৪ জানুয়ারি, ২০২১ | ৩:৪৫ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়রগণ আগামীতে এমন মেয়র প্রত্যাশা করেন যিনি নাগরিক সেবা পরিপূর্ণভাবে নিশ্চিত করতে পারবেন। এক কথায় মেয়রকে হতে হবে দক্ষ সেবক। নাগরিকদের কাছে জবাবদিহিতার মানসিকতা থাকতে হবে আগামীর মেয়রকে। এছাড়া চলমান, অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকা গণমুখী প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে কাজ করতে পারবেন, নগরবাসী এমন মেয়রকেই আগামীতে চান বলে মন্তব্য করেন সাবেক মেয়রগণ। চসিককে দুর্নীতিমুক্ত ও স্বচ্ছ প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার উপরও গুরুত্বারোপ করেন তারা।

আগামীতে কেমন মেয়র চান এবং তাদের কাছে প্রত্যাশা কী- চার সাবেক মেয়রের সাক্ষাৎকার নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করেছেন পূর্বকোণ প্রতিবেদক মোহাম্মদ আলী, ইফতেখারুল ইসলাম ও মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন।

 

মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী

 

মেয়রের দরজা যেন সবার জন্য খোলা থাকে

মেয়র হচ্ছেন নগরপিতা। পিতৃত্বসুলভ স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও নৈতিকতাসম্পন্ন দক্ষ ব্যক্তিকেই মেয়র পদে দেখতে চাই।

দুর্নীতির উর্ধ্বে থেকে জনগণের সমস্যা সমাধান ও জনগণের অভাব-অভিযোগের প্রতি যাতে কর্ণপাত করেন-নতুন মেয়রের কাছে এমন প্রত্যাশা করছি। ফুটপাত হচ্ছে মানুষের চলাচলের জন্য। হকারদের পুনর্বাসন করে হকারমুক্ত ফুটপাত ও মেয়রের দরজা যেন সাধারণ মানুষের জন্য খোলা থাকে সেই প্রত্যাশা করি। সাধারণ মানুষ কোনো প্রতিবন্ধকতা বা দালাল ছাড়া মেয়রের কাছাকাছি যেতে পারলে নগরীর অনেক সমস্যার সমাধান করা যাবে। এছাড়াও সিনিয়র সিটিজেনদের পরামর্শ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবে-তাই আশা করছি।

 

মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন

 

নগরবাসীর প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত মেয়র চাই

১৯৯০ সালে সিটি কর্পোরেশনের উন্নীত হওয়ার পর বিএনপি থেকে মেয়র পদে দায়িত্ব পালন করেন সাবেক মন্ত্রী ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন। তিনি ১৯৯১ সালের ১২ মে থেকে ১৯৯৩ সালের ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন। আগামী ২৭ জানুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) নির্বাচনকে ঘিরে দৈনিক পূর্বকোণকে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন সাবেক মেয়র মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন। তিনি বলেন, নির্বাচন হতে হবে সম্পূর্ণ অবাধ, নিরপেক্ষ এবং ক্রটিমুক্ত। আমরা নগরবাসীর প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত মেয়র চাই। তাহলে তিনিই জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে পারবেন। নির্বাচিত সিটি মেয়র নগরবাসীর ‘অভিভাবক’ না সেজে নগর কর্মী হিসেবে সেবা প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। আমি মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে আমার কার্যক্রম জবাবদিহিতার আওতায় আনার জন্য চট্টগ্রামের একটি দৈনিকে ‘মেয়র সমীপে’ একটি কলাম চালু ছিল। যার ফলে নগরবাসীর সমস্যা ও দুঃখ জানার সহজ উপায় ছিল। এছাড়াও নগরীর উন্নয়ন কার্যক্রম বেগবান করার লক্ষ্যে প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের নেতাদের নিয়ে একটি উপদেষ্টা কমিটি গঠন করি। যেখানে বিশেষজ্ঞরাও ছিলেন। সেজন্য চসিকের সকল কার্যক্রম ছিল দুর্নীতিমুক্ত। মেয়রকে জনগণের সাথে বেশি করে সম্পৃক্ত থাকতে হবে। থাকতে হবে গণমাধ্যমের অবাধ প্রবেশাধিকারও। তাহলে প্রকৃত সত্য ও চাহিদা জেনে উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে।

এম মনজুর আলম

 

জনগণ মেয়র থেকে যেন কাঙ্ক্ষিত সেবা পান

মোহাম্মদ মনজুর আলম ২০১০ সালের ২০ জুন থেকে ২০১৫ সালের ২৭ মার্চ পর্যন্ত চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) নির্বাচিত মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন। এ সময়ে তিনি নগরীর বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করেন। আসন্ন চসিক নির্বাচন নিয়ে দৈনিক পূর্বকোণকে এক প্রতিক্রিয়ায় সাবেক এ মেয়র বলেন, ৬০ লাখ মানুষের সেবা কেন্দ্র চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। প্রত্যেক পাঁচ বছর অন্তর চসিক নির্বাচন হয়ে থাকে। এ নির্বাচনের মাধ্যমে একজন মেয়র নির্বাচিত হন। তারই ধারাবাহিকতায় এবারের নির্বাচনও হচ্ছে। আমরা আশা করি একটি অবাধ ও সুষ্ঠু পরিবেশে জনগণের ভোটের নির্বাচনের মাধ্যমে মেয়র নির্বাচিত হবেন। একমাত্র নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিই নগরবাসীর নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে পারবেন। জনগণ তার কাছ থেকে যেন কাক্সিক্ষত সেবা পান এটাই মূল প্রত্যাশা। নির্বাচিত মেয়র সঠিক ও সুন্দরভাবে তার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে যাবে নগরবাসী হিসেবে এটাই আমার প্রত্যাশা। একই সাথে নির্বাচিত মেয়রকে আমার পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে যাবো।

 

আ জ ম নাছির উদ্দীন

 

অব্যাহত রাখতে হবে চলমান প্রকল্পগুলো

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন তাঁর আমলের চলমান, অনুমোদিত এবং মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকা প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলোর কাজ আগামীর মেয়র অব্যাহত রাখবেন এমন প্রত্যাশার কথা পূর্বকোণকে জানিয়েছেন। তাতে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে। নাগরিক সুবিধা বাড়বে এবং সত্যিকারের পরিবেশবান্ধব শহর হিসেবে গড়ে উঠবে। দেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধির প্রয়োজন। এ কাজটি রেজাউল করিম চৌধুরীই করতে পারবেন উল্লেখ করে বলেন, তিনি তার মেয়াদে অনেক প্রকল্প হাতে নিয়েছিলেন। যার অনেকগুলোর কাজ এখনো চলছে। আধুনিক কসাই খানা, টার্মিনাল, ফুটওভারব্রিজ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, বিমানবন্দর থেকে সিমেন্ট ক্রসিং পর্যন্ত ফোর লেইন প্রকল্পসহ আরো তিনটি আধুনিক কসাইখানা নির্মাণের প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া আছে। কোন প্রকল্প তৈরি করতে এক বছরেরও বেশি সময় লেগে যায়। যেসব প্রস্তাবিত প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে আছে তা অনুমোদন করিয়ে এনে দ্রুত কাজ শুরু করতে পারেন। প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামের পরিকল্পিত উন্নয়নের জন্য উদগ্রীব হয়ে আছেন। সহযোগিতা চাইলেই তিনি আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করছেন। সেবা সংস্থাসমূহের সাথে সমন্বয় করে জনদুর্ভোগ যথাসম্ভব কমিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের পরামর্শ দেন।

সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের কাজ অব্যাহত রাখা ও ডোর টু ডোর বর্জ্য সংগ্রহ অব্যাহত রাখার পরামর্শ দিয়ে বলেন, সেখানে কোন ত্রুটি থাকলে তা চিহ্নিত করে কাজকে এগিয়ে নিতে পারলে নগরবাসী উপকৃত হবে। দেশের বন্দরনগরী এবং বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের ভৌগলিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক গুরুত্ব অনুধাবন করে এই শহরকে বাসযোগ্য পরিবেশবান্ধব নগরী গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০০৮ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার প্রদত্ত অঙ্গীকার অনুযায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। চসিক, চট্টগ্রাম ওয়াসা, সিডিএসহ বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করেছেন। নগরবাসীর প্রতি একজন মেয়রের যে দায়িত্ব তা যথাযথ এবং সঠিকভাবে পালনের জন্য সরকারি দল মনোনীত প্রার্থী নির্বাচিত হওয়া সময়ের দাবি। নগরবাসীর জন্য এটি অতীব জরুরি।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট