২৩ জানুয়ারি, ২০২১ | ৭:৪৮ অপরাহ্ণ
তাসনীম হাসান
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের মতো উদ্যোগী হয়ে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়বেনÑএমন একজনকেই মেয়র হিসেবে দেখতে চান চট্টগ্রামের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। তাঁরা বলছেন, মেয়র যেন নির্বাচিত হয়েই দলীয় জার্সি খুলে ফেলেন। কাজের মাধ্যমে হয়ে উঠেন সবার মেয়র। আক্ষরিক অর্থেই মেয়র যেন নগরের পিতা হয়ে উঠেন সেটিই তাঁদের বড় চাওয়া।
আনিসুল হকের মতো গ্রহণযোগ্য মেয়র চাই
শাহরিয়ার হাসান শাকিল
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা
কেমন মেয়র চাইÑকেউ এই প্রশ্ন করলে আমার মাথায় একটা নামই ঘুরে। সেটি হলো আনিসুল হক। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের এই সাবেক মেয়র আজ নেই; কিন্তু ঢাকায় গেলে তাঁর কাজের ছাপ এখনো দেখতে পাই। তাই আমিও চট্টগ্রাম নগরীর জন্য এমন একজনকে মেয়র হিসেবে দেখতে চাইÑযিনি তাঁর কাজের মাধ্যমে মানুষের মনে চিরস্থায়ী জায়গা করে নেবেন। তিনি যে কোনো দলেরই হোক। কিন্তু তিনি যেন হয়ে উঠেন সবার কাছেই গ্রহণযোগ্য।
মেয়রের কাছে আমার প্রত্যাশাও অনেক। আমরা পতেঙ্গাবাসীরা চট্টগ্রাম শহরে বাস করি বটে, কিন্তু এখনো আমাদের দেখা হয় মফস্বলের চোখে। আমাদের বৃহত্তর অঞ্চলের মানুষদের জন্য নেই কোনো সরকারি হাসপাতাল। যার কারণে, প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরের হাসপাতালে নিয়ে যেতে অনেক রোগী মারা যায় এম্বুলেন্সেই, কেউ সন্তান প্রসব করেন গাড়িতে। সেজন্য এখানে একটি সরকারি হাসপাতাল হওয়া সবচেয়ে জরুরি হয়ে পড়েছে। যিনি মেয়র হবেনÑতিনি যেন এই বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখেন। ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়নও জরুরি। কারণ পথে পথে যানজট লেগে থাকে। মেয়র যেন এই সমস্যা নিরসনে পরিকল্পনা হাতে নেনÑএটাই কামনা।
জবাবদিহিতা চাইতে পারব এমন মেয়র চাই
নাসরিন আক্তার
শিক্ষক
একজন নাগরিক হিসেবে যার কাছে জবাবদিহিতা চাইতে পারবÑতাঁকেই আমি চট্টগ্রামবাসীর মেয়র হিসেবে দেখতে চাই। তাঁকে যেন আমাদের সমস্যার কথা বলতে না হয়, নিজ থেকেই যেন তিনি সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসেন। একজন শিক্ষক হিসেবে নতুন যিনি মেয়র হবেন তাঁর কাছে আমার অনেক প্রত্যাশা আছে। বিশেষ করে করোনার সময়ে বেসরকারি স্কুলগুলো বেশ সংকটে পড়েছে। এ ক্ষেত্রে মেয়রের কিছু করণীয় আছে কিনা সেটি যেন তিনি দেখেন। পতেঙ্গা-হালিশহরে কোনো সরকারি স্কুল-কলেজ নেই। যার কারণে বিশেষ করে মেয়েদের আগ্রাবাদ-চকবাজার-জিইসি এলাকার স্কুলগুলোতে যেতে অনেক কষ্ট হয়ে যায়। ৯টায় পরীক্ষা থাকলে সাড়ে ছয়টা-সাতটায় বাসা থেকে বের হতে হয়। এরপরেও অনেক সময় দেরি হয়ে যায়। তাই আমার প্রত্যাশা থাকবে যিনি মেয়র হবেন তিনি যেন এই অঞ্চলে সরকারি স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগ নেন।
মেয়রের কাছে জনদুর্ভোগ হয় এমন উন্নয়ন চাই না
ফাহাদ চৌধুরী
উদ্যোক্তা
দলের উর্ধ্বে উঠে যিনি সার্বিক উন্নয়নে কাজ করে যিনি আক্ষরিক অর্থেই একজন নগরের পিতা হবেনÑতাঁকেই আমি মেয়র হিসেবে দেখতে চাই।
নতুন মেয়রের কাছে আমার প্রত্যাশা থাকবে জনদুর্ভোগ হয় এমন উন্নয়নকাজ যেন তিনি না করেন। পোর্ট কানেক্টিং সড়কে আজ ৪-৫ বছর ধরে উন্নয়নকাজ চলছে। যে উন্নয়নকাজ হালিশহরবাসীর দুঃখের নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে। সারাবছরই ধুলাবালি আর জলাবদ্ধতার কষ্টে থাকতে হচ্ছে। এ থেকে তিনি যেন মুক্তি দেন।
কয়েকবছর আগেও চট্টগ্রামের সংস্কৃতির সঙ্গে কিশোর গ্যাং নামে কিছু ছিল না। কিন্তু আজকাল এদের দৌরাত্ম্যে স্বাভাবিকভাবে পথে চলা দায়। এর রেশ টানতে নতুন মেয়র যেন শহরে খেলাধুলা বাড়ানোর উদ্যোগ নেন। মাঠ সংকট নিরসনে এগিয়ে আসেন। যুবসমাজকে রক্ষা করতে এর বিকল্প দেখছি না।
মেয়র যেন বৈধ-অবৈধ খেলা থেকে মুক্তি দেন
মোহাম্মদ সাহেদ আলম
গাড়ি চালক
আমি একজন গাড়ি চালক। ছোট্ট পেশার সঙ্গে জড়িত বলে অনেকেই আমাদের সম্মানের চোখে দেখেন না। আমরা গাড়ি চালকেরাও যে মানুষÑসেটি যিনি অনুধাবন করতে পারবেন, যিনি আমাদের অধিকার নিয়ে ভাববেন তাঁকেই আমি মেয়র হিসেবে দেখতে চাই। স্বাভাবিকভাবে একজন নাগরিক হিসেবে মেয়রের কাছে আমারও অনেক প্রত্যাশা। বিশেষ করে দেখা যায় কিছু গাড়ি আছেÑ যেগুলো সড়কে চলার কিছুদিন পরেই অবৈধের দোহাই দিয়ে তুলে দেওয়া হয়। পতেঙ্গা এলাকায়ও এরকম প্রায় ৪০০ টমটম গাড়ি সড়ক থেকে তুলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমার প্রশ্ন হলোÑগাড়িগুলো যদি অবৈধই হয় সেগুলো আমদানি করা হলো কীভাবে? সব প্রক্রিয়া মেনে বৈধভাবেই তো দেশে ঢুকল। আমরা কিছুদিন চালালামও। এরপর বলা হলোÑএগুলো অবৈধ। কিন্তু গাড়ি চালকেরা তো লোন নিয়েই এসব গাড়ি কিনেছেন। এই মানুষগুলো এখন কী খায়, তাঁর পরিবারের সদস্যরা কীভাবে আছেন, লোন কীভাবে পরিশোধ করছেনÑএসব কী কেউ ভেবেছেন? নতুন মেয়রের কাছে তাই আমার একটাই প্রত্যাশা থাকবে আমাদের যেন তিনি এই বৈধ-অবৈধ খেলা থেকে মুক্তি দেন।
পোশাক শ্রমিকদের দুঃখ যেন মেয়র বোঝেন
দিদার ইসলাম
পোশাক শ্রমিক
যিনি সব পেশার মানুষকে একই চোখে দেখবেনÑতাঁকেই আমি মেয়র হিসেবে দেখতে চাই। একজন পোশাক কারখানার কর্মী হিসেবে মেয়রের কাছে আমাদের পেশাকেন্দ্রিক বেশ কিছু প্রত্যাশা ও দাবি আছে। বিশেষ করে চট্টগ্রামের দুটি ইপিজেডে আমরা প্রায় দেড় লাখ শ্রমিক কাজ করি। কিন্তু আমাদের জন্য নেই ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধাও। অধিক ভাড়ার কারণে অনেক শ্রমিককে ছোট্ট জায়গায় গিজগিজ করে থাকতে হয়। প্রয়োজনমতো গাড়ি না থাকায় বাসে উঠতে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয়। বেতন ভাতা নিয়েও সারাবছর অনেক শ্রমিক কষ্টে থাকেন। মেয়র যেন এসব বিষয়ের সমাধান খোঁজেনÑসেটিই আমার চাওয়া।
পূর্বকোণ/পি-মামুন
The Post Viewed By: 233 People