চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

চবি’র আইইআর: আন্দোলনের পর পরীক্ষাই স্থগিত

রায়হান উদ্দিন, চবি

২২ জানুয়ারি, ২০২১ | ১২:২০ অপরাহ্ণ

আন্দোলন করার পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) প্রথম বর্ষের পরীক্ষা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করেছে ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ। এর আগে গত বুধবার ক্লাসে উপস্থিতির হার কম থাকায় ১১ সহপাঠীকে পরীক্ষায় বসার অনুমতি না দেওয়ায় পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ওই ১১ জনকে পরীক্ষায় বাসার আশ্বাস দিলেও গতকাল পরীক্ষাই স্থগিত করে দেয় ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ। ফলে শিক্ষার্থীরা ২৪ মাস পর পরীক্ষা দেওয়ার বিষয়ে যে আশার আলো দেখছিলো তাও নিভে গেল।

বৃহস্পতিবার (গতকাল) দুপুরে ইনস্টিটিউটের পরিচালক ও প্রথম বর্ষের পরীক্ষা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বশির আহাম্মদ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে পরীক্ষা স্থগিতের বিষয়টি জানানো হয়। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বরাবর শিক্ষার্থীদের পাঠানো আবেদনপত্র আটকে রেখে কোনো ধরনের সমন্বয় ছাড়া এই সিদ্ধান্ত নেয় ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ। এছাড়া বিজ্ঞপ্তিতে পরীক্ষা স্থগিতের কোনো কারণ উল্লেখ না করলেও ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ স্বেচ্ছাচারিতা খাটিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে ১২০ শিক্ষার্থীকে হয়রানি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এদিকে হঠাৎ পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন খোদ ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক। প্রক্টরের সুপারিশেরও তোয়াক্কা করেনি আইইআর কর্তৃপক্ষ। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বরাবর শিক্ষার্থীদের আবেদনপত্র পাঠানোর কথা থাকলেও সেটা পাঠায়নি ইনস্টিটিউট।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. রবিউল হাসান ভুঁই‌য়া বলেন, ‘বুধবার কলা অনুষদের ডিন কার্যালয়ে আইইআরের পরিচালক ও শিক্ষকদের সঙ্গে মিটিংয়ে বসেছিলাম। মানবিক আবেদন বিবেচনায় সবাইকে পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়ার আবেদন জানিয়েছিলাম আমরা। আইইআর পরিচালক ও প্রক্টরের মাধ্যম দিয়ে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বরাবর শিক্ষার্থীদের একটি আবেদনও পাঠিয়েছিলাম’।

পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক চৌধুরী আমীর মোহাম্মদ মূছা বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের পাঠানো আবেদনপত্র এখনও হাতে পাইনি। তাছাড়া ইন্সটিটিউটের পক্ষ থেকেও আমাদেরকে কিছু জানানো হয়নি। আমাদেরকে জানালে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে পারতাম’।

এদিকে আন্দোলন করে পরীক্ষা নিতে বাধ্য করার কারণেই শিক্ষার্থীদের জীবন নিয়ে ‘ছিনিমিনি করা হচ্ছে’ বলে মনে করছেন ইনস্টিটিউটটির শিক্ষার্থীরা। স্থগিতের ঘোষণা শুনেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তারা। নাম প্রকাশ না করা শর্তে আইইআরের প্রথম বর্ষের একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, ‘বুধবার আমরা যখন ১১ শিক্ষার্থীর বিষয়ে আবেদন নিয়ে গেছি, সেটা আইইআরের পরিচালকের মাধ্যমে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরে যাওয়ার কথা। কিন্তু পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক সেটা পাননি। বুধবার একাধিক শিক্ষক আমাদের পরীক্ষা স্থগিত করে দিবেন বলে হুমকি দিয়েছিলেন। আজ তাই হলো। তাঁরা আমাদেরকে বলেছিলেন, ‘তোমরা আন্দোলন করে আমাদের সম্মান হানি করতেছ। আমরা চাইলে তোমাদের পরীক্ষা স্থগিত করে দিতে পারবো। তখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তো দূরের কথা, আরও উপরের কেউ আসলেও আমাদের পরীক্ষা নেওয়াতে পারবে না। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাদের কি করতে পারবে? আমাদের কাছে আগে সম্মান বড়’।

এ বিষয়ে জানতে শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বশির আহাম্মদকে কয়েক দফা কল দিলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। এরপর একে এক ইনস্টিটিউটের আট শিক্ষকের সাথে কথা বলার চেষ্টা করে পূর্বকোণ। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে অনেকে মুখ খুলতে নারাজ। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলতে বলেন তাঁরা।

তবে ইনস্টিটিউটির দুই প্রভাষক আমানউল্লাহ ও রোবেল আহম্মেদ পূর্বকোণকে বলেন, ‘১১ শিক্ষার্থীর উপস্থিতির হার ৬০ শতাংশের কম থাকায় তাদেরকে পরীক্ষা দেওয়ার অনুমতি দেয়া হয়নি। এর প্রেক্ষিতে বাকি ১০৯ শিক্ষার্থী পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলনে নামে। আমাদের অডিন্যান্সের বাইরে কিছু করার থাকে না। তারপরও শিক্ষার্থীদের দাবি দাওয়া আমলে নিয়ে প্রশাসনিক কার্যক্রম চলছে’।

অনির্দিষ্টকালের জন্য পরীক্ষা স্থগিত রাখার বিষয়ে তাঁরা বলেন, ‘স্থগিত মানে এই নয় যে বাতিল। প্রক্রিয়া শেষ হয়ে গেলেই পরীক্ষা নেওয়া হবে’।

প্রসঙ্গত, ইন্সটিটিউটটিতে পাঁচটি বর্ষের বিপরীতে বর্তমানে চলমান রয়েছে সাতটি ব্যাচ। ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষের পরীক্ষা শুরু না হলেও ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছেন আরও ১০৫ জন শিক্ষার্থী। এদিকে ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে যথাসময়ে পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব হয়নি, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের পরীক্ষার ফলাফল যথাসময়ে না হওয়ায়। সামনে ভর্তি পরীক্ষা শুরু হলেও ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে আরোটি নতুন ব্যাচ যুক্ত হবে। এতে করে তিনটি ব্যাচ হবে শুধু প্রথম বর্ষেই। এভাবেই পরীক্ষা ও ফলাফল প্রকাশের দীর্ঘসূত্রিতায় শিক্ষার্থীদের নিয়ে যাচ্ছে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে। সেশনজটের এ করাল গ্রাস থেকে মুক্তি পেতে প্রশাসনের দিকে তাকিয়ে আছে এ ইন্সটিটিউটটের শিক্ষার্থীরা।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট