চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে ­বিদ্রোহীদের কাঁধে ভর ­দেয়ার কৌশল

চসিক নির্বাচন: মাঠে থাকতে মরিয়া বিএনপি

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

২১ জানুয়ারি, ২০২১ | ৪:৫৬ অপরাহ্ণ

৩৫ নম্বর বক্সিরহাট ওয়ার্ডে আইডিয়াল স্কুল কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীর কেন্দ্র কমিটিতে রাখা হয়েছিল বিএনপি ঘরনার দুই শ্রমিক নেতা। তা নিয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্র পরিচালনা কমিরি সভায় হট্টগোল ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছিল। ছাত্র ও যুবলীগের একটি অংশ তা নিয়ে প্রতিবাদ করেছিল। তবে শেষতক বিএনপি ঘরনার ওই দুই শ্রমিক নেতাকে কমিটিতে থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা মামুনুর রশিদ বলেন, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বৈঠক করে কেন্দ্র কমিটি গঠন করেছেন। নৌকা প্রতীকে কেন্দ্র কমিটিতে ঢুকে গেছে বিএনপি ঘরনার লোকজন। ছাত্র-যুবলীগের প্রতিবাদের কারণে তা বাদ দেওয়া হয়েছে।

তিনি দাবি করেন, কাউন্সিলর পদে মনোনয়নবঞ্চিত নেতারা কৌশলে বিএনপির এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন। এতে মেয়র পদ ছাড়াও দল সমর্থিত কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীরা ঝুঁকিতে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

শুধু তাই নয়, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীতে ভর করে ভোটে ঢুকে পড়ছে বিএনপি ঘরনার লোকজন। কাউন্সিলর পদে অনুষ্ঠেয় ৪০ ওয়ার্ডের মধ্যে ৩৪টিতে আওয়ামী লীগের দল সমর্থিত প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে। এরমধ্যে ১৭টি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ ও বিদ্রোহী প্রার্থী শক্ত অবস্থানে রয়েছে।

বিদ্রোহী প্রার্থীদের ঘিরে ভোটের মাঠে ঢুকে পড়ছে বিএনপি ঘরনার লোকজন। গত কয়েক দিন ধরে অন্তত ৪০ জন কাউন্সিলর প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে গেছে। আওয়ামী লীগ সমর্থিত একাধিক কাউন্সিলর প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিএনপি প্রার্থীরা কৌশলে এগোচ্ছেন। আওয়ামী লীগের অন্তর্দ্বন্দ্বের সুযোগ নিচ্ছে বিএনপি। আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের সঙ্গে প্রচার-প্রচারণায় মিশে যাচ্ছে। এমনকি কেন্দ্র কমিটির নেতৃত্বেও ঢুকে পড়ছে বিএনপি।

৮ নম্বর শোলকবহর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী মো. মোরশেদ আলম পূর্বকোণকে বলেন, ‘বিদ্রোহী প্রার্থীরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চ্যালেঞ্জ করেছেন। তারা অনেকটা বিএনপির এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন। বিদ্রোহীদের কাঁধে ভর করে কেন্দ্র কমিটিতে ঢুকে যাচ্ছে বিএনপির লোকজন। বিএনপির এই মিশন নিয়ে ভোটের মাঠে রয়েছে।’

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে সাতজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ১৪ সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৫৭ জন নারী কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছেন। ৪০টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১৭২ জন প্রার্থী রয়েছেন। ১৮ নং ওয়ার্ডে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন আ. লীগ প্রার্থী।
আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থী মিলে অন্তত ৪০ জন প্রার্থীর সঙ্গে কথা হয়।

অধিকাংশ কাউন্সিলর প্রার্থী বললেন, আওয়ামী লীগ মেয়র ও কাউন্সিলর পদে দলীয় প্রার্থী সমর্থন দিলেও মাঠে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। মেয়র প্রার্থীকে দল সমর্থিত প্রার্থীরা ওয়ার্ডভিত্তিক এক সঙ্গে প্রচারণা চালানো হয়েছে। এরপর তেমন আর সমন্বয় করা হচ্ছে না। যে যার মতো করে কেন্দ্র কমিটি গঠন করছেন।

৩ নম্বর পাঁচলাইশ ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী সাবেক কাউন্সিলর কফিল উদ্দিন খানের সঙ্গে রয়েছেন আট বিদ্রোহী প্রার্থী। মাঠে সক্রিয় রয়েছেন কয়েকজন। বিদ্রোহী প্রার্থীর মধ্যে মো. শফিকুল ইসলামের সমর্থক আবদুল্লাহ আলম মামুন দলীয় প্রার্থী কফিল উদ্দিনকে প্রকাশ্যে হুমকি দিয়েছেন। কুকুরের মতো দৌড়ায় দৌড়ায় পেঠানোর হুমকি দিয়েছেন। এনিয়ে এলাকায় উত্তেজনা ও ভীতি সঞ্চার হয়েছে। আতঙ্কে রয়েছেন ভোটাররা। ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে মামুনকে গ্রেপ্তারের দাবি করেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ। কফিল উদ্দিন দাবি করেন, বিএনপি ঘরনার লোকজন নিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন বিদ্রোহী প্রার্থী। বিএনপির লোকজন কৌশলে ভোটের মাঠে ঢুকে পড়ছে। এতে দলীয় প্রতীক নৌকার নিশ্চিত বিজয়কে চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থী।

৭ নম্বর পশ্চিম ষোলশহর আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী মো. মোবারক আলী দাবি করেন, ‘দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের সঙ্গে বিএনপির আঁতাত হয়েছে। কাউন্সিলর পদে ছাড় দিয়ে মেয়র পদের টার্গেট নিয়ে এগোচ্ছে বিএনপি।’

একাধিক কাউন্সিলর প্রার্থী বলেন, আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীর পক্ষে কেন্দ্র কমিটি গঠনের বিষয়ে অনেক ওযার্ডে দল সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের সম্পৃক্ত করা হচ্ছে না। ‘অদৃশ্য’ ইশারায় কমিটি গঠন করা হচ্ছে। কমিটিতে কাকে রাখা হচ্ছে বা বাদ দেওয়া হচ্ছে তা অনেক কাউন্সিলর প্রার্থীরাও অবগত নয়। দলীয় পুরোনো কোন্দল মাথাচাড়া দিয়ে ওঠেছে কেন্দ্র কমিটিতে। ভোটের দিন তা নিয়ে মেয়র ও দলীয় কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে মতবিরোধের আশঙ্কা রয়েছে।

৩৫ নম্বর বক্সিরহাট ওয়ার্ডের নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নগর আওয়ামী লীগের দুই নেতার অনুসারী। দলও দুইভাগে বিভক্ত। দুই পক্ষ এখনো এক হয়ে দলীয় মেয়র প্রার্থীর নৌকা প্রতীকের পক্ষে প্রচারণা চালাতে পারেনি। নৌকা প্রতীকের কেন্দ্র কমিটিতে ঢুকানো হয়েছে বিএনপি ঘরনার লোকজনকে। তা নিয়ে পুরোনো মান-অভিমান নতুন করে চাঙা হয়ে ওঠেছে। মূলত আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থীকে ধরাশায়ী করার কৌশল নিয়ে একপক্ষ বিএনপি ঘরনার লোকজনকে মাঠে নিয়ে আসছে।

৪ নম্বর চান্দগাঁও ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থী মো. সাইফুদ্দিন খালেদ সাইফু পূর্বকোণকে বলেন, ‘বিদ্রোহী প্রার্থীর প্রচারণা ও কেন্দ্র কমিটিতে বিএনপির লোকজন ঢুকে পড়েছে। এতে নৌকার বিজয় নিয়ে শঙ্কায় রয়েছি।’ ৫নং মোহরা ওয়ার্ডের প্রার্থী কাজী নুরুল আমিন মামুনও একই শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

২ নম্বর জালালাবাদ ওয়ার্ডের দলীয় ও বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীও বিএনপি সম্পৃক্ততার পরস্পরবিরোধী অভিযোগ করেছেন।

এদিকে, নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় সংঘাত-সহিংসতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ে বেশি উত্তাপ ছড়াচ্ছে ভোটের মাঠে। প্রচারণার শুরু থেকেই সংঘাত-সংঘর্ষ ও সহিংসতা লেগে রয়েছে। ২৮ নং পাঠানটুলি ওয়ার্ডে দলের দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে সহিংসতায় আজগর আলী বাবুল নামে নিহত হয়েছেন এক ব্যবসায়ী।

পূর্বকোণ/আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট