চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

বিশিষ্টজনের চাওয়া

মেয়রকে হতে হবে জনবান্ধব

ইমরান বিন ছবুর ও তাসনীম হাসান

২১ জানুয়ারি, ২০২১ | ৫:০৫ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে যিনি নির্বাচিত হবেন তিনি যেন চট্টগ্রামের সমস্যাগুলো অনুধাবন করেন- এমনটাই প্রত্যাশা বিশিষ্ট নাগরিকদের। তাঁরা মেয়রের কাছ থেকে কথার ফুলঝুরি চান না, চান তিনি যেন জনবান্ধব হন। আর মেয়র যেন শাসক না হয়ে এই শহরের প্রকৃত অভিভাবক হয়ে উঠেন, সেটিই তাঁদের কামনা।

বিশিষ্টজনেরা বলেন, সবকিছু মেয়রকেন্দ্রিক না হয়ে সিটি কাউন্সিলকেন্দ্রিক হওয়া উচিত। ৪১টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের নারী কাউন্সিলরদের সক্রিয় করতে মেয়রকে উদ্যোগ নিতে হবে।

 

জনগণের প্রত্যাশা মেটাবে এমন মেয়র চাই

প্রফেসর ড. অনুপম সেন

প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. অনুপম সেন বলেন, আমরা এমন মেয়র চাই, যিনি জনগণের প্রত্যাশা মেটাবে। চট্টগ্রামের মানুষ যাতে সিটি কর্পোরেশন থেকে স্বাস্থ্য ও শিক্ষার সুবিধা পায়, সে ব্যবস্থা করতে হবে। সিটি কর্পোরেশনের মেয়র শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতের জন্য নানাভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারেন এবং এ কাজে তিনি শহরের মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে পারেন। সিটি মেয়রের নিত্যদিনের কাজের বাইরে গিয়ে মানুষের কল্যাণে যেন তারা কাজ করতে পারেন।

এই শহরটিকে তারা নান্দনিক করার পাশাপাশি জলাবদ্ধতা সমস্যা দূর করবেন। ধুলোবালিমুক্ত নগরী উপহার দেবেন। এসব কাজ তো করবেনই। এর বাইরে আমি চাই তারা যেন সাধারণ মানুষের দুঃখ কষ্ট লাগবে তারা সচেষ্ট থাকবেন। আমাদের তিনবার নির্বাচিত সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী সাধারণ মানুষের জন্য হাসপাতালের ব্যবস্থা করেছেন, এম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করেছেন। এছাড়াও তিনি বস্তিবাসীর জন্য বিভিন্ন কাজ করেছেন।

তিনি আরো বলেন, আমাদের সন্তানদের জন্য মানসম্মত শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের খেলাধুলার জন্য মাঠের ব্যবস্থা করতে হবে। নগরীতে তো শিশুদের খেলার উপযোগী কোন মাঠ নেই। যে কয়েকটি মাঠ আছে, সব সময় সেখানে সভা-সমাবেশ বিভিন্ন মেলায় অনুষ্ঠিত হয়। তাই শিক্ষার্থী ও শিশুদের খেলার জন্য মাঠের ব্যবস্থা করতে হবে।

 

পরিবেশবান্ধব নগরী গড়তে নিতে হবে দ্রুত পদক্ষেপ

প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার বলেন, আমরা জনবান্ধব একজন মেয়র চাই। যিনি চট্টগ্রাম নগরীর সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে দূরীকরণে পদক্ষেপ নিবেন। সাবেক মেয়ররা জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা সমাধান করতে পারেননি। তাই প্রথমেই জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানে কাজ করতে হবে।

একটি নগরীর সুন্দর পরিবেশ গড়ে তুলতে যে সব পদক্ষেপ নেয়া উচিত, সময় ক্ষেপণ না করে তা দ্রুত নিতে হবে। এছাড়া, চট্টগ্রামকে একটি নান্দনিক শহর করতে যা যা উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন আগামী দিনের মেয়র দ্রুত সময়ের মধ্যে সে উদ্যোগ নেবেন বলে আমরা আশা করছি।

তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যে সব লক্ষ্য রয়েছে, সে লক্ষ্য বাস্তবায়নে আগামী দিনের মেয়র তৎপর হবেন। তা বাস্তবায়নের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।

 

চট্টগ্রামবাসীর জন্য একজন অভিভাবক চাই, শাসক নয়

অধ্যাপক মুহাম্মদ সিকান্দার খান

কেমন মেয়র চাই এর উত্তরে আমি চারটা শব্দই উচ্চারণ করব সবসময়। সেই শব্দগুলো হলো-আমরা একজন ভদ্রলোক চাই। সেটি ব্যাখ্যা করলে এমন-যিনি মেয়র হবেন তিনি যেন তাঁর অধীনস্তদের কাজে উদ্বুদ্ধ করতে কখনো মুখ খারাপ না করেন। আবার তিনি নগরবাসীকে দেখবেন গ্রাহকের চোখে। সেই গ্রাহকেরা তাঁকে জ্বালাতন করবেই-এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তাতে তিনি যেন মনক্ষুণ্ন না হন, যেন না ভাবেন- আমি সেবা দিচ্ছি, আমিই সব। উল্টো ভালো ব্যবহার দিয়ে মানুষকে যেন বোঝান- কোনটা তাঁর সাধ্যের মধ্যে আছে, কোনটা নেই। সবমিলিয়ে আমি চট্টগ্রামবাসীর জন্য একজন অভিভাবক চাই, শাসক নয়।

প্রত্যাশার ক্ষেত্রে আমার মনে হচ্ছে একটা বিষয় স্পষ্ট করা উচিত। যিনি মেয়র হবেন তিনি যেন- সব সমস্যার সমাধান করে দেবেন এমন কথা না শোনান। স্থানীয় সরকারের জন্য যেসব দায়িত্ব নির্ধারিত আছে সেগুলোই যেন তিনি বলেন, প্রকৃষ্টভাবে করেন। কিন্তু অনেকে লম্বা লম্বা প্রতিশ্রুতি দেন, কিন্তু দিনশেষে দেখা যায়- সেটি তাঁর দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে না। এসবের ফলে মানুষের কাছেও তিনি গুরুত্ব হারান।

মেয়রের কাজ বিশেষ করে ফুটপাতগুলো দখলমুক্ত করা, পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা, শহরটা পরিচ্ছন্ন রাখা, সড়কের সংস্কারকাজ ঠিক মতো হয়েছে কিনা তা তদারকি করা, অন্য সেবাসংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করা, যাতে এক সড়কে বারবার কোপ না পড়ে। শহরের শান্তি- শৃঙ্খলার জন্যও তিনি কাজ করতে পারেন। তাঁর কর্মীবাহিনীদের বুঝিয়ে শহরটাকে ভালো রাখতে পারেন।

 

সিডিএর সঙ্গে সমস্যা নিরসনে যেন উদ্যোগ নেয়া হয়

অধ্যাপক ড. তোফায়েল আহমেদ

চট্টগ্রামের সমস্যাগুলো যিনি অনুধাবন করবেন এবং সেগুলো সমাধানের জন্য যিনি উদ্যোগ নেবেন-এমন একজনকেই আমি মেয়র হিসেবে দেখতে চাই। কারণ, চট্টগ্রাম অনেকদিক দিয়ে পিছিয়ে আছে। এই শহরকে এগিয়ে নিতে এমন কাউকেই দরকার।

আর প্রত্যাশা হল, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) সঙ্গে সিডিএ’র (চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) যেসব সমস্যা আছে সেগুলো নিরসনে যেন উদ্যোগ নেন। বিশেষ করে জলাবদ্ধতা সমস্যা নিরসন হওয়া উচিত। তবে এক্ষেত্রে শুধু সিটি করপোরেশন একা পারবে না। কারণ সমুদ্রপৃষ্টের উচ্চতা বাড়ছে। এর ফলে সমুদ্রের পলি ঢুকে নালা-খাল ভরাট হয়ে যাচ্ছে। যার কারণে জোয়ারের সময় পানি উঠে যায়। তাই সরকারিভাবে যৌথ বাস্তবভিত্তিক উদ্যোগ নিয়ে এর সমাধান করা দরকার।

আর সবকিছু মেয়রকেন্দ্রিক না হয়ে সিটি কাউন্সিলকেন্দ্রিক হওয়া উচিত। তাই ৪১টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের নারী কাউন্সিলরদের সক্রিয় করতে মেয়রকে উদ্যোগ নিতে হবে। যে কাউন্সিলের নেতৃত্ব দেবেন মেয়র। এভাবে হলে মেয়রের একার ওপরও চাপ হবে না, আবার কাজও ভালোভাবে হবে।

আর একটা কথা- মেয়র যেন কাউন্সিলর, শহরের বিশিষ্ট নাগরিক, সরকারি কর্মকর্তাদের কথা শোনেন- এটাই চাওয়া।

 

পূর্বকোণ/পি-আরপি-মামুন

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট