চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ভোট ঘনিয়ে আসতেই বাড়ছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন 

১৭ জানুয়ারি, ২০২১ | ৩:২৯ অপরাহ্ণ

নির্বাচন ঘনিয়ে আসতেই উত্তেজনা বাড়ছে মাঠে। পোস্টার ছেঁড়া, কর্মীদের ওপর হামলা-ভাঙচুর ও প্রচারে বাধার পর এবার সরাসরি হামলার ঘটনা ঘটল বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেনের ওপর। গতকাল (শনিবার) রামপুরা পানির কল এলাকায় জনসংযোগের পথে তাঁর গাড়ি বহরে হামলা চালানো হয়। তাঁর পক্ষে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করা হয়েছে।

রিটার্নিং কার্যালয় সূত্র জানায়, নির্বাচন ঘনিয়ে আসতেই অভিযোগের সংখ্যাও বাড়ছে। গতকাল একদিনেই অভিযোগ পড়েছে ৬টি। প্রচারণার শুরু থেকে এক সপ্তাহে ৩৩ অভিযোগ জমা পড়েছে নির্বাচন কমিশনে। এ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন প্রার্থী ও বিশিষ্টজনেরা।

চসিক নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন, ‘বিএনপি প্রার্থীর ওপর হামলার মৌখিক অভিযোগ পাওয়ার পরপরই দ্রুত পুলিশ পাঠানোর ব্যবস্থা করেছি। অভিযোগের তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে’।

গত মঙ্গলবার ২৮নং পাঠানটুলি ওয়ার্ডে সরকারদলীয় দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সংঘাতে আজগর আলী বাবুল নামে এক ব্যবসায়ী নিহত হন। এছাড়াও বাকলিয়া এলাকায় ছুরিকাঘাতে আহত আশিকুর রহমান রোহিত নামে এক ছাত্রলীগকর্মীর মৃত্যু হয়। এ ঘটনাটি ফেসবুক পোস্ট, নির্বাচনী দ্বন্দ্ব নাকি মাদকবিরোধী পোস্টার ছেঁড়া-তা নিয়ে রহস্যই রয়ে গেল।

চকবাজার এলাকায় সংঘাত-সংঘর্ষের মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হয়। সরকারদলীয় প্রার্থীর নৌকা প্রতীকের প্রচারণায় এই সংঘাত হয়েছিল। প্রতিদিনই বাড়ছে সংঘাত-সহিংসতার ঘটনা। গতকাল সন্ধ্যাও টাইগারপাস এলাকায় নৌকার প্রচারণায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষ হয়। এতে অন্তত ১৫ জন আহত হয়। এছাড়াও কাউন্সিলরদের মধ্যে ভয়ভীতি দেখানো, হামলার ঘটনাসহ অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ লেগে রয়েছে। নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসতেই উত্তেজনা বাড়ছে। বাড়ছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও।

রিটার্নিং কার্যালয় সূত্র জানায়, প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আওয়ামী লীগের রেজাউল করিম চৌধুরী ও বিএনপির ডা. শাহাদাত হোসেনের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ রয়েছে।

রিটার্নিং কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান দাবি করেছেন, অভিযোগগুলো তদন্তের জন্য সংশ্লিষ্ট থানা ও ম্যাজিস্ট্রেটদের কাছে পাঠানো হচ্ছে। তদন্ত করে প্রায় অভিযোগের নিষ্পত্তি করছেন। কিন্তু প্রার্থীদের অভিযোগ, অভিযোগগুলো আমলে নিয়ে ব্যবস্থা না নেওয়ায় প্রতিদিনই হামলা ও বাধা দেওয়ার ঘটনা বাড়ছে।

গতকাল বিএনপি দলীয় প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেনের পক্ষ থেকে তিনটি অভিযোগ দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনে। বিএনপি প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেনের ব্যক্তিগত সহকারী মারুফুল হক চৌধুরী এসব অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘২৩নং উত্তর পাঠানটুলি ওয়ার্ডে ধানের শীষ ও দলীয় কাউন্সিলরের পোস্টার সাঁটানোর সময় অতর্কিত হামলা চালানো হয়। এছাড়াও ১৮, ১৯ ও ২৫ নং ওয়ার্ডেও ধানের শীষ ও দলীয় কাউন্সিলরদের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা, প্রচারে বাধা, কর্মীদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে’। সরকারদলীয় কাউন্সিলর প্রার্থী ও দলীয় নেতাকর্মীদের দায়ী করেছেন তিনি।

নির্বাচন কমিশনে এ পর্যন্ত ছয়টি অভিযোগ দিয়েছেন বিএনপি প্রার্থী। বিএনপি প্রার্থীর বিরুদ্ধেও আওয়ামী লীগ প্রার্থী একাধিক অভিযোগ দায়ের করেছেন।

বিএনপিদলীয় প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা চাই সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন। নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারা ফিরে আসুক। নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন সুষ্ঠু নির্বাচনের উদ্যোগ না নিলে তা সম্ভব নয়। বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের দমন-পীড়ন থেকে সরে এসে সন্ত্রাসী ও গডফাদারদের গ্রেপ্তারের দাবি করেছেন তিনি। একই সঙ্গে বৈধ-অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারেরও দাবি করেন তিনি।

সংঘাতে পিছিয়ে নেই কাউন্সিলর প্রার্থীরাও :

অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগে পিছিয়ে নেই কাউন্সিলর প্রার্থীরা। সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী ছাড়াও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থীরা পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করে আসছেন।

রিটার্নিং অফিসার কার্যালয় সূত্র জানায়, ৩৩ নং ফিরিঙ্গীবাজার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী হাসান মুরাদ বিপ্লব আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী মো. সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন। এতে তিনি উল্লেখ করেছেন, প্রচারণার পোস্টার ও ব্যানারে সালাউদ্দিন নিজেকে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী বলে প্রচারণা চালাচ্ছেন। ৬নং ওয়ার্ডের সরকারদলীয় কাউন্সিলর প্রার্থী এম আশরাফুল আলম বিএনপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগে বলা হয়েছে, দলীয় প্রার্থী নৌকা প্রতীকের  পোস্টার, লিফলেট বিতরণের সময় অতর্কিত হামলা চালানো হয়েছে। ১১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মো. ইসমাইল প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মোরশেদ আকতার চৌধুরীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সম্পাদক এডভোকেট আখতার কবীর চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম এখন আতঙ্কের নগরীতে পরিণত হয়েছে। এ থেকে উত্তরণের জন্য রাজনৈতকি দল, প্রার্থী, নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনকে এগিয়ে আসতে হবে। না হলে অবস্থা আরও খারাপের দিকে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট