চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

বলাৎকারে অতিষ্ঠ হয়ে দুই সহযোগীকে নিয়ে এই খুন

আদালতে যুবকের স্বীকারোক্তি রাউজানে ব্যবসায়ী তাহের খুন জা

হেদুল আলম , রাউজান

১৮ জুন, ২০১৯ | ২:২৪ পূর্বাহ্ণ

রাউজানের ডাবুয়া ইউনিয়নের কলমপতি গ্রামে রাতের আঁধারে ব্যবসায়ী আবু তাহের (৫০) খুনের ঘটনার ৮দিন পর রহস্যের কিনারা পেয়েছে পুলিশ। এই ঘটনায় একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সে ও তার অপর দুই সহযোগী আবু তাহেরকে খুন করেছে বলে স্বীকার করেছে। ধৃত আসামি গত রবিবার আদালতে ১৬৪ ধারায় এ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। ধৃত আসামিকে বার বার বলাৎকার করার ঘটনায় বিরক্ত হয়ে ক্ষোভে এই খুনের ঘটনা ঘটায়। পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার আসামি নুরুল আজিম (১৮)। সে পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ছিটিয়াপাড়ার এজাহার মিয়ার ছেলে। আজিম রাউজানে এস.এস থাই এলুমনিয়ামের একটি দোকানে চাকুরি করে। থানার সেকেন্ড অফিসার নুরুন্নবী রবিবার রাতে সাংবাদিকদের কাছে তথ্য প্রকাশ করে বলেন, ‘শনিবার রাতে মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে তার বাড়ি থেকে মামলার তদন্তকারী অফিসার মেহের আলী ও সঙ্গীয় ফোর্স নুরুল আজিমকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পর তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে সে আবু তাহেরকে খুনের কথা স্বীকার করে এবং রবিবার ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাকে হাজির করা হয়। সেখানে সে ১৬৪ ধারায় হত্যার কারণ ও বিবরণ তুলে ধরে জবানবন্দী দেয়’।
স্বীকারোক্তি সম্পর্কে নুরুন্নবী বলেন, ‘নিহত আবু তাহের ৭-৮ বছর ধরে নুরুল আজিমের সঙ্গে বলাৎকার করতো। এ কাজের জন্য মাঝে মাঝে আজিমকে কমবেশি টাকাও দিতো আবু তাহের। বিগত দেড়বছর আগে এ কাজে অনিহা প্রকাশ করে আজিম। এজন্য ভিকটিম (আবু তাহের) আজিমের বাড়িতে গিয়ে তার মোবাইল নম্বর দিয়ে আসে এবং আজিমের বোনের মোবাইল নম্বর নিয়ে আসে। বলে আসে, তার সঙ্গে (আবু তাহেরের সঙ্গে) যোগাযোগ করতে। একসময় আজিমের বোনের বিয়ে হয়ে যায়। তারপরও ভিকটিম আজিমের বোনের শ্বশুর বাড়িতেও বার বার ফোন করে আজিমকে খুঁজতে থাকে। তখন বোন তার ভাই আজিমকে বলে তোর জন্য আমার সংসার ভাঙ্গবে। আমার প্রবাসী স্বামী সন্দেহ করবে বার বার ফোন করার কারণে। তখন আজিম ক্ষুব্ধ হয়ে আবু তাহেরকে মারার পরিকল্পনা করে। তারই অংশ হিসেবে গত ৭ জুন আজিম ভিকটিম আবু তাহেরের সাইকেলে করে জলিল নগর বাস স্ট্যান্ড এলাকা থেকে ঘটনাস্থলে যায়। আজিমের দোকানের অপর দুই সহযোগী ঘটনাস্থলে যায় মোটরসাইকেলে করে। তিনজন মিলে আবু তাহেরকে ছুরিকাঘাত করে হত্যার পর মোটরসাইকেলে তিনজনই ফিরে আসে’।
প্রসঙ্গত, পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের দলিলাবাদ এলাকার মৃত দুলা মিয়ার ছেলে আবু তাহেরের লাশ গত ৭ জুন রাত দশটার দিকে কলমপতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে পড়ে ছিল। নিহত ব্যক্তির শার্টটি তার গলায় পেছানো ছিল। তার গলায় ছুরি মেরে ফুটো করে ফেলে দুর্বৃত্তরা। ডাবুয়া কলমপতি এলাকার মেম্বার ওবায়দুল হক জানান, নিহত ব্যক্তির একশত ফুট দূরে জমিতে একটি পুরাতন সাইকেল, আরো এক শত ফুট দূরে ছুরি ও দুই জোড়া জুতো পাওয়া যায়। নিহতের স্ত্রী বাচু আকতার বলেন, ‘প্রতিদিনের অভ্যাস অনুযায়ী আবু তাহের ৭ জুন সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার দিকে ঘর থেকে বের হন। রাতে খবর পাই তার লাশ কলমপতি স্কুলের সামনে পড়ে আছে’।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নিহত আবু তাহের ৫ মেয়ে ও ১ ছেলের জনক। নিহতরা ৬ ভাই, ১ বোন। ব্যবসায়ী আবু তাহের হত্যার ঘটনায় পরদিন রাতে তার স্ত্রী বাচু আকতার বাদি হয়ে রাউজান থানায় মামলা দায়ের করেন।
নিহত আবু তাহের ডাবুয়ায় রাবার বাগান কিনে কষ সংগ্রহ করে শুকিয়ে বিক্রি করতেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট