চট্টগ্রাম বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৪

চসিক নির্বাচন: প্রতিশ্রুতির কতটুকু বাস্তবায়নযোগ্য?

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

১৬ জানুয়ারি, ২০২১ | ১০:৫৪ পূর্বাহ্ণ

২০১৫ সালের নির্বাচনে চট্টগ্রামকে মেগাসিটি, বিশ্বমানের আধুনিক শহর, জলাবদ্ধতা মুক্ত-সর্বোপরি স্মার্টসিটি গড়ার ইশতেহার প্রকাশ করেছিলেন সরকারদলীয় মেয়র প্রার্থী আ জ ম নাছির উদ্দিন। একইভাবে আসন্ন নির্বাচনেও চট্টগ্রামকে স্মার্টসিটি, আধুনিক ও বিশ্বমানের চট্টগ্রাম গড়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন মেয়র প্রার্থীরা। অতীতের মতো এবারও নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার জন্য আকাশ-কুসুম স্বপ্ন দেখানো হচ্ছে। এসব প্রতিশ্রুতি সিটি করপোরেশনের আইন ও আওতার বাইরে বলে মন্তব্য করেছেন নগর বিশেষজ্ঞ ও সুশীলসমাজ।

আসন্ন সিটি নির্বাচনে প্রচার-প্রচারণায় সরগরম হয়ে উঠেছে নগরী। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দলীয় প্রার্থী প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি ছড়াচ্ছেন। চট্টগ্রাম নগরীকে ফের বিশ্বমানের নগরী ও স্মার্টসিটি গড়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তাঁরা। বিশেষ করে সরকারদলীয় প্রার্থী চট্টগ্রামকে স্মার্টসিটি ও সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় নৌকা প্রতীকে ভোট চাচ্ছেন। অপরদিকে বিএনপি দলীয় প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেনসহ অন্য মেয়র প্রার্থীও প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরিতে পিছিয়ে নেই।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) চট্টগ্রামের সভাপতি প্রফেসর সিকান্দর খান বলেন, ‘দুঃখের বিষয় হচ্ছে, আইন, বিধি-বিধান না পড়েই স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে যান। দায়িত্ব, ক্ষমতা বা আওতাভুক্ত আইনে উল্লেখ রয়েছে। না বুঝে, না জেনে ওয়াদা দেন। পরে বাস্তবায়ন করতে না পেরে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে যান। এজন্য সংযত হয়ে প্রতিশ্রুতি দেওয়া ভালো। মুখে যা আসে বলে দিলেই হল না’।

নগর বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া বলেন, ‘নির্বাচনগুলোতে ফাও প্রতিশ্রুতি দিয়ে জনগণকে বোকা বানানোর চেষ্টা করা হয়। মেগাসিটি, জলাবদ্ধতামুক্ত, ট্রাফিকব্যবস্থার উন্নয়নসহ নানা ধরনের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন প্রার্থীরা। কিন্তু তা বাস্তবায়নের ক্যাপাসিটি তো সিটি করপোরেশনের নেই। রাস্তা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা, নালা-ড্রেন সংস্কার করাই হচ্ছে প্রধান কাজ। ক্ষমতার বাইরে গিয়ে ভোটের জন্য স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। মেগাসিটি বা স্মার্টসিটির স্বপ্ন না দেখিয়ে মেগাসেবা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিতে পারেন’।

সরকারদলীয় মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী স্মার্টসিটি ছাড়াও সরকারের উন্নয়নের ধারাবারিকতা রক্ষায় নৌকা প্রতীকে ভোট চাচ্ছেন। এছাড়াও মাদক, সন্ত্রাসমুক্ত নগরী গড়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তিনি।

অপরদিকে, বিএনপি দলীয় প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন আন্দোলনের অংশ হিসেবে মানুষের ভোটারাধিকার ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন। এছাড়াও চট্টগ্রাম নগরীকে জলাবদ্ধতামুক্ত, শিক্ষা-স্বাস্থ্যসেবাসহ চট্টগ্রামকে আধুনিক নগরী গড়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। দুই প্রার্থীর কয়েক দিনের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, রেজাউল করিম স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার অনুরোধ করেছেন ভোটারদের। চসিকের দুয়ার সকলের জন্য খোলা থাকবে বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

বিএনপি প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন এলাকাভেদে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। পতেঙ্গা, হালিশহর এলাকায় প্রচারণায় পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতকে দৃষ্টিনন্দন, চট্টগ্রাম বন্দরে স্থানীয়দের অগ্রাধিকারভিত্তিতে চাকরির সুযোগ ও চট্টগ্রামে করোনা বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাচ্ছেন।

ইসলামী ফ্রন্টের মেয়র প্রার্থী মাওলানা এম এ মতিন বন্দরের নিয়োগে স্থানীয়দের প্রাধান্য দেওয়ার দাবি করেছেন। এছাড়াও ৩৭ ও ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডে জলাবদ্ধতা নিরসনে দীর্ঘমেয়াদি মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সভাপতি প্রফেসর সিকান্দর খান বলেন, ‘নির্বাচন আসলে মানুষকে আকর্ষণ করার জন্য আকাশ ছোঁয়া স্বপ্ন দেখান প্রার্থীরা। অতীতের নির্বাচনগুলোতে তা দেখা গেছে। লাগাম টেনে ধরার সংস্কৃতি না থাকার কারণে প্রতিশ্রুতির জন্য প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। কারণ ভোটে জয়ী হওয়ার পর তো আর জনগণের মুখোমুখি হতে হয় না। প্রতি বছর জনগণের মুখোমুখি হলে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন বা পূরণ নিয়ে প্রশ্ন করার সুযোগ ছিল। এখন তো তা নেই। তাই মুখে যা আসে তাই বলে দিচ্ছেন প্রার্থীরা। বরং ওয়াদা দেওয়া উচিত, প্রতি বছর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি নিয়ে জনগণের সামনে দাঁড়াবে প্রার্থীরা।

চকবাজার এলাকার ভোটার নজরুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, অতীত নির্বাচনেও প্রার্থীরা চটকদার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। বিশেষ করে চট্টগ্রাম নগরীকে জলাবদ্ধতামুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আগেরকার মেয়রগুলো। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। গত নির্বাচনে জলাবদ্ধতামুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সব প্রার্থীরা। কিন্তু জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পই চসিকের হাতছাড়া হয়ে যায়। তা এখন বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। এছাড়াও চট্টগ্রামকে ওয়াইফাই জোনসহ নান্দনিক চট্টগ্রাম গড়ারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তার বদলে মিলেছে আবর্জনার ভাগাড়।

পূর্বকোণ/পি-আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট