চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

উত্তর ও দক্ষিণ পতেঙ্গা এবং দক্ষিণ হালিশহর এলাকা

এলাকাবাসীরাই নেমেছেন কলেজ স্থাপনে

ধর্ণা দিয়েও লাভ হয়নি

তাসনীম হাসান

১৬ জানুয়ারি, ২০২১ | ১০:৫১ পূর্বাহ্ণ

উত্তর ও দক্ষিণ পতেঙ্গা এবং দক্ষিণ হালিশহর- এই তিন ওয়ার্ড মিলিয়ে ডিগ্রি শ্রেণি পর্যন্ত চালু থাকা কলেজ আছে একটি। কিন্তু সেটিও শুধুমাত্র ছাত্রীদের জন্যই বরাদ্দ। এর বাইরে আর যেসব কলেজ আছে সেগুলোর দৌড় উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত।

তাই দীর্ঘদিন ধরে এলাকাবাসী আরেকটি ডিগ্রি কলেজ স্থাপনের জন্য নানা জায়গায় তদ্বির করে আসছিলেন। কিন্তু কোনো সাড়া পাননি। সেজন্য এবার নিজেরাই নেমে পড়েছেন মাঠে। ২০২২ সাল থেকে চালু করতে চান একটি কলেজ। যেখানে ছাত্রদের পাশাপাশি পড়তে পারবেন ছাত্রীরাও। শহরের মধ্যে পড়া সুবিধাবঞ্চিত ওয়ার্ডের কথা কেউ মুখে আনলে প্রথমেই আসে এই তিন ওয়ার্ডের নাম। নগরীর অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার অবস্থান এখানে হলেও সুযোগ-সুবিধার দিক থেকে যেন এখানে নেই নেই হাহাকার।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের তিন বছর আগের হিসাব অনুযায়ী এই তিন ওয়ার্ডে জনসংখ্যা ৪ লাখ ৫৬ হাজার ৫২৩। কিন্তু বিশাল এই জনগোষ্ঠীর জন্য ওয়ার্ডগুলোতে নেই কোনো সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ। যেসব বেসরকারি স্কুল-কলেজ আছে তাও হাতেগোনা। এর ফলে অনেক শিক্ষার্থী ঝরে যায় এসএসসির পর, কেউবা এইচএসসি শেষে। কারণ, নগরীর প্রায় সব কলেজের অবস্থান চকবাজার এলাকায়। পতেঙ্গা থেকে যার দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার। এত দূরের কলেজে এসে পড়ার মতো সামর্থ্য অনেকের থাকে না। বিশেষ করে ছেলেদের প্রায় অর্ধেকেই আর ডিগ্রি কিংবা স্নাতক পর্যায়ে ভর্তি হন না। শিক্ষার্থীদের ‘ঝরে পড়া’ রোধে স্থানীয় সচেতন বাসিন্দারা গত এক বছর ধরে জোট বেঁধেছেন।

উদ্যোক্তাদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইতিমধ্যে তাঁরা উত্তর পতেঙ্গার ধুমপাড়ায় প্রায় ১ একরের একটি জায়গা চিহ্নিত করেছেন। সরকারি এই জায়গাটি দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। এই জায়গায় কলেজ স্থাপনের লক্ষ্যে নিয়ে এগোচ্ছেন তাঁরা। কলেজ স্থাপনের যাবতীয় অর্থ আসবে এলাকার বিত্তবান ব্যক্তিদের পকেট থেকে। এ জন্য ইতিমধ্যে উদ্যোক্তারা বিত্তবান ও সমাজসেবীদের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। সাড়াও পাচ্ছেন। তাঁদের লক্ষ্য ২০২২ সালের শুরুতে কলেজ স্থাপনের কাজ শুরু করে দেওয়া।

উদ্যোক্তাদের একজন উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে সমাজসেবী ও বিত্তবানদের নিয়ে দুটি বৈঠক করেছি। ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি। এর আগেও একইভাবে আমরা স্কুল ও কলেজ স্থাপন করেছি। পরে যা সিটি করপোরেশনের অধীনে যায়। এখনও ঠিক একইভাবে একটি ডিগ্রি কলেজ স্থাপন করতে চাই।’

কলেজ স্থাপনের উদ্যোগের বিষয়ে জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘আমরা দেখেছি তিন ওয়ার্ডে প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থীই এসএসসি ও এইচএসসির পর ঝরে যায়। শিক্ষাক্ষেত্রে এই ওয়ার্ডগুলো এমনিতেই পিছিয়ে। এভাবে চলতে থাকলে আরও পিছিয়ে পড়বে। তাই আরেকটি ডিগ্রি কলেজ স্থাপনের জন্য অনেক জায়গায় গিয়েছি। সফল হইনি। সেজন্য বাধ্য হয়ে নিজেরাই নেমে পড়েছি।’

অবশ্য জয়নাল আবেদীনদের পাশাপাশি আরও একটি পক্ষ কলেজ স্থাপনে মাঠে নেমেছেন। আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর দুটি পক্ষ বসে কলেজ স্থাপনের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।

এমন উদ্যোগে এলাকাবাসীর পাশাপাশি হাসি ফুটেছে ইপিজেড ও অন্যান্য স্থাপনায় কর্মরত শ্রমিকদের মুখেও। এখানে পড়া দুটি ইপিজেডে কর্মরত আছেন প্রায় দেড় লাখ শ্রমিক। পাশাপাশি অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতেও কর্মরত আছেন হাজারো শ্রমিক। কলেজ স্থাপন হলে তাঁদের সন্তানেরা এখানে পড়াশোনা করতে পারবেন। তাই দ্রুত উদ্যোগের সাফল্য দেখতে চান তাঁরাও।

উত্তর পতেঙ্গার বাসিন্দা মোহাম্মদ সাহেদের কণ্ঠে উঠে আসে সেই উচ্ছ্বাসের বর্ণনা। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘কলেজ স্থাপনের এমন উদ্যোগে আমরা সবাই খুশি। কারণ, কলেজ হলে আমাদের সন্তানেরা ঝরে পড়বে না। আবার অনেকে চকবাজার পর্যন্ত যাওয়া-আসার ধকল থেকেও মুক্তি পাবেন।’

পূর্বকোণ/পি-আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট