চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

আউটার রিং রোড: ফাঁকা সড়কে গতির প্রতিযোগিতা

তাসনীম হাসান 

১৪ জানুয়ারি, ২০২১ | ১:৪১ অপরাহ্ণ

ফৌজদারহাট হয়ে চট্টগ্রাম আউটার রিং রোডে ঢুকে পথ যতই সামনে এগিয়েছে ততই  যেন সুন্দর। এক পাশে দিগন্তবিস্তৃত বঙ্গোপসাগর, অন্যপাশে ঘন সবুজ গাছগাছালি যে কারও মন জুড়াবেই। কিন্তু সেই সৌন্দর্য থেকে একটু চোখ সরাতেই সড়কের কোথাও পড়ে থাকতে দেখা যায় গরুবাছুর, কোথাও বা কুকুরের নিথর দেহ। নিয়মিত এমন ঘটনা দেখায় আশপাশের এলাকার মানুষদের কণ্ঠে তাই ভর করছে একটি বাক্য ‘ আউটার রিং রোড আমাদের জীবনে দিয়েছে গতি, কেড়ে নিচ্ছে প্রাণ।’

মূলত দুই কারণে এই সড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে। ফুটওভার ব্রিজের মতো কিছু না থাকায় সড়কের ওপর দিয়েই দুই পাশে পারাপার করতে হয়। এর ফলে বেপরোয়া গতিতে আসা-যাওয়া করা গাড়ির চাকার তলায় পড়ছে মানুষ আর অন্য প্রাণীরা। আবার সড়কটি পুরোপুরি চালু না হওয়ায় অনেক জায়গায় এক পাশ দিয়েই গাড়ি আসা-যাওয়া করায় দুর্ঘটনা ঘটছে। অবশ্য পথচারীদের অসচেতনতাও দুর্ঘটনার পেছনে কম দায়ী নয়।

এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয়দের দাবি সড়কে দ্রুত গতির গাড়ির রাশ টানা হোক। সড়কের জনবহুল এলাকাগুলোতে গাড়ির গতি সীমিত করে দেওয়ার জন্য যেন নিয়ম করে দেওয়া হয়। আর প্রতিদিন হাজারো গাড়ি চলাচল করলেও এই সড়কে ট্রাফিক পুলিশের সেভাবে নিয়ন্ত্রণ নেই। তাই বেপরোয়া গতির গাড়িগুলো আইনের আওতায় আসছে না। এ জন্য দ্রুত ট্রাফিক পুলিশের কার্যক্রমের বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

দুর্ঘটনা

আউটার রিং রোডের পূর্ব পাশের ফুল চৌধুরী পাড়া, আব্বাসপাড়া, চৌধুরী পাড়া, ধুমপাড়াসহ প্রায় পুরো এলাকায় এখন ঘরে ঘরে গরুর খামার। আর এই গরুর বেশিরভাগ খাবারের জোগান আসে সমুদ্রতীরের উড়ি ঘাস থেকে। তাই প্রতিদিন হাজারো গরুকে সড়ক পেরিয়ে সমুদ্রের কূলে নিয়ে আসেন রাখালেরা। দিনভর সেই ঘাসে জাবর কাটার পর সন্ধ্যা হলেই ঠিক একইভাবে ঘরে ফিরে গরুর পাল। এই আসা-যাওয়ার পথে অনেক গরুই দুর্ঘটনায় পড়ে।

সম্প্রতি দুর্ঘটনায় গরু হারিয়েছেন এরকম কয়েকজনকে পাওয়া গেল আনন্দবাজার এলাকায়। প্রায় এক মাস আগে বাসের নিচে পড়ে মারা যায় মোহাম্মদ রফিক নামের এক খামারির বাছুর। তার আগে ট্রাকচাপায় মারা যায় মোহাম্মদ বেলাল নামের আরেক খামারির ষাঁড়। গরু হারানোর সেই কষ্টের ক্ষতে এখনো প্রলেপ পড়েনি বোঝা যায় বেলালের মন্তব্যে। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, কোরবানকে সামনে রেখে ভালো দাম পাওয়ার আশায় গরুটিকে বড় করছিলাম। আমার লাখ টাকার সেই গরু এক দুর্ঘটনায় শেষ।’ তাই বেলাল প্রশ্ন ছুঁড়েন ‘একটু ধীরগতিতে গাড়ি চালালে কি এমন ক্ষতি হয়?’

সরেজমিনে দেখা যায়, আউটার রিং রোডের কারণে এখন দুই নম্বর গেট থেকে বায়েজিদ-ফৌজদারহাট বাইপাস ধরে টোল রোডের মাধ্যমে আউটার রিং রোড ধরে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে যেতে ৪০ মিনিটও লাগছে না। যাতায়াত সহজ হওয়ায় এখন রাত-দিন পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে ভিড় লেগে থাকে। তরুণদের দল মোটরসাইকেল নিয়েই বেশিরভাগ সময় সেখানে যাচ্ছেন। ফাঁকা সড়ক পেয়ে তাঁদের অনেকেই গতির প্রতিযোগিতায় নামেন। এর সঙ্গে প্রাইভেটকার-সিএনজিচালিত অটোরিকশার পাশাপাশি কন্টেইনার মুভার, কাভার্ড ভ্যান, ট্রাকের মতো বড় গাড়ি তো আছেই।

এসব কারণে প্রায় সময় এক গাড়ির সঙ্গে আরেক গাড়ির সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। এর মধ্যে গত বছরের ৯ আগস্ট রাতে সড়কের মুসলিমাবাদ এলাকায় প্রাইভেটকার ও লরির মুখোমুখি সংঘর্ষে তিনজন গুরুতর আহত হন।

আবার স্থানীয়দের অনেকে শর্টকাটে পার হতে সড়কের মাঝখানের বিভাজকের দুই পাশে বালির বস্তা বসিয়েছেন। বিভাজকের ওপর দিয়ে এভাবে পার হতে গিয়েও কেউ কেউ দুর্ঘটনায় পড়ছেন।

ট্রাফিক বিভাগের (পশ্চিম) একজন টিআইর নেতৃত্বে বেশ কিছু কনস্টেবল ওই সড়কে নিয়মিত টহল দেন। তবে তাঁদের বেশিরভাগ কার্যক্রম থাকে টোল রোড এবং রিং রোডের সংযোগস্থলে। কারণ ওই জায়গায় যানজট বেশি থাকে।

তবে সম্প্রতি অন্যান্য সড়কেও তাঁরা তদারকির চেষ্টা করছেন বলে জানিয়েছেন ট্রফিক বিভাগের (পশ্চিম) সহকারী কমিশনার মো. মমতাজ উদ্দিন। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘সড়ক ফ্রি পেয়ে দ্রুতগতিতে গাড়ি চালায় অনেকে। এটি নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে দেখা যাবে পুলিশও মারা যাবেন। তবুও আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু লোকবলের সংকট থাকায় সবসময় পুরো সড়কে নজরদারি সম্ভব হয় না।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট