চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

দিনে অভিযোগ, রাতে বাহাদুর ও কাদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ

পাঠানটুলিতে গোলাগুলির ঘটনায় বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীসহ আটক ২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক 

১৩ জানুয়ারি, ২০২১ | ১১:০৬ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম নগরীর ২৮ নম্বর পাঠানটুলি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর ও বিদ্রোহী প্রার্থীর অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে আজগর আলী বাবুল (৫৫) নামে এক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় কয়েকজন আহত হয়েছেন। এরমধ্যে গুলিবিদ্ধ মাহবুবকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ঘটনাস্থল ঘিরে রেখেছে।

জানা যায়, গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ডবলমুরিং থানাধীন মগপুকুর পাড় এলাকায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাহাদুর এবং বিদ্রোহী প্রার্থী ও সাবেক কাউন্সিলর আব্দুল কাদেরের অনুসারীদের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। নিহত আজগর আলী বাবুল (৫৫) ও আহত মো. মাহবুব (৩৬) দু’জনই নজরুল ইসলাম বাহাদুরের সমর্থক বলে দাবি করা হয়েছে।

এদিকে গতকাল রাত পৌনে ১টার দিকে মোগলটুলি মগপুকুর এলাকা থেকে কাউন্সিলর প্রার্থী আবদুল কাদেরসহ ২৫ জনকে আটক করেছে পুলিশ। পরে তাদের মনসুরাবাদ ডিবি কার্য়ালয়ে নিয়ে আসা হয়।

গতকাল বিকেল ৩টার দিকে কাউন্সিলর প্রার্থী আবদুল কাদের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাহাদুরের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দায়ের করেন। এর ৫ ঘণ্টার ব্যবধানেই সংঘর্ষের ঘটনায় আজগর আলী নিহত হন। অভিযোগে বলা হয়েছে, মতিয়ারপুল থেকে কদমতলী, আবেদীয়া স্কুল গলি পর্যন্ত কাদেরের নির্বাচনী পোস্টার ছিঁড়া ফেলা, গণসংযোগে বাধা-হামলা, কর্মী-সমর্থকদের নির্বাচনী প্রচারণায় না আসার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এজন্য বাহাদুর ও তার অনুসারীসহ সাত জনের নাম উল্লেখ করা হয়। বিকেলেই অভিযোগ করে সন্ধ্যায় দুই প্রার্থী সংঘাত-সংঘর্ষ ও গোলাগুলিতে জড়িয়ে পড়ে।

নগর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নজরুল ইসলাম বাহাদুর প্রয়াত সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও আব্দুল কাদের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনার জন্য নজরুল ইসলাম বাহাদুর ও আব্দুল কাদের একে অপরকে দায়ী করছেন।

নগর পুলিশের পশ্চিম জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) ফারুক -উল -হক জানান, পাঠানটুলি ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সমর্থিত প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাহাদুর এবং বিদ্রোহী প্রার্থী আবদুল কাদেরের সমর্থকদের মধ্যে রাত ৮টার দিকে সংঘর্ষ ও গোলাগুলি শুরু হয়। একপর্যায়ে দু’জন গুলিবিদ্ধ হলে একজন মারা যান। ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত হয়ে সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনে।

ঘটনার পরপরই নিহত আজগর আলীর মৃতদেহ চমেক হাসপাতালের মর্গে আনা হয়। মর্গের সামনেই বাবুলের মেঝ ছেলে ফরহাদ মাহমুদ শুভ দাবি করেন, ‘কয়েকদিন ধরে আব্দুল কাদের (মাছ কাদের) আমার বাবাকে ভয়ভীতি দেখাচ্ছিল। নজরুল ইসলাম বাহাদুুরের গণসংযোগ থেকে ফেরার পথে কাদের ও তার অনুসারীরা আমার বাবাকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। গুলি করার সময় কাদেরের সাথে হেলালও ছিলেন।’

ঘটনা সংক্রান্তে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাহাদুর দৈনিক পূর্বকোণকে অভিযোগ করে বলেন, ‘গণসংযোগ শেষে ফেরার পথে মগপুকুর পাড়ের সোবহান মঞ্জিলের সামনে বিদ্রোহী প্রাথী আব্দুল কাদেরের উপস্থিতিতে তার অনুসারীরা আমাদের উপর গুলি করে। তারা গুলি করে আমাকে হত্যা করতে চেয়েছিল। এ সময় আমি আত্মরক্ষার্থে পামের একটি বাড়িতে আশ্রয় নেই। প্রতিপক্ষের গুলিতে আমার সাথে গণসংযোগে থাকা মাছ ব্যবসায়ী আজগর আলী বাবুল (৪০) গুলিবিদ্ধ হন। তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। বাবুলের বাসা ডবলমুরিং থানার কাটা বটগাছতল এলাকায়।

নিহত আজগর আলী বাবুল মগপুকুর পাড় এলাকার আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক বলে জানান নজরুল ইসলাম বাহাদুর।

অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে বিদ্রোহী প্রার্থী ও সাবেক কাউন্সিলর আব্দুল কাদের বলেন, ‘মগপুকুর পাড় আজুশাহ মাজার লেন এলাকায় আমার নির্বাচনী গণসংযোগ ছিল। বিষয়টি আমি ডবলমুরিং থানায় আগেই অবহিত করেছি। নজরুল ইসলাম বাহাদুরের গণসংযোগ ছিল মোগলটুলি এলাকায়। সন্ধ্যার সময় মাজার লেনের একটি ঘরে গণসংযোগ করছিলাম। ওই সময় বাহাদুরের লোকজন দলবেঁধে সেখানে আসে। পরে জানতে পেরেছি মোগলটুলিতে তাদের নিজেদের মধ্যে মারামারি হয়েছে। সেখানকার ঘটনার জের ধরে মগপুকুর পাড়ে তারা ফের নিজেরাই মারামারি করেছে। ওদের গোলাগুলিতে ওই ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। ঘটনার পর পরই আমার বাসা, অফিস ও আমার সমর্থকদের বাসা বাড়িতে হামলা চালিয়েছে বাহাদুরের অনুসারীরা।’ আব্দুল কাদের পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, ‘বাহাদুরের লোকজন নিজেরা মারামরি করে আমার উপর দায় চাপিয়ে দিচ্ছে।’

ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সদীপ কুমার দাশ জানিয়েছেন, নিহতের নাম আজগর আলী বাবুল (৫৫)। তিনি বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এছাড়া মাহবুব নামে গুলিবিদ্ধ এক যুবককে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

পূর্বকোণ/পি-আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট