চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

মিটারের মূল্য ভাড়াটিয়ার ঘাড়ে!

তাসনীম হাসান 

১১ জানুয়ারি, ২০২১ | ১:২২ অপরাহ্ণ

বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটার গ্রাহকদের স্বস্তি দিয়েছে, রেহাই দিয়েছে ভুতুড়ে বিল থেকে। কিন্তু এর উল্টো পিঠে আছে নানা ভোগান্তি আর খরচপাতির ধকল। এর  মধ্যে গ্রাহকের সবচেয়ে বড় অভিযোগের জায়গা হলো মিটার ভাড়া বাবত টাকা কেটে নেওয়ার বিষয়। প্রতি মাসেই মিটার ভাড়া হিসেবে গ্রাহককে গুণতে হচ্ছে ৪০ টাকা করে।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি), চট্টগ্রাম সূত্র জানিয়েছে প্রায় সাড়ে ১০ বছর ধরে দিতে হবে মিটার ভাড়া। আর এর পুরোটাই পড়ছে ভাড়াটিয়াদের ঘাড়ে। অথচ মিটারের মালিক তারা নন। হবেন না কোনদিনও।

বিতরণ দক্ষিণাঞ্চল হিসেবে এই জোনের পাঁচটি পরিচালন ও সংরক্ষণ সার্কেলের অধীনে ২১টি নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তর এবং ১৬টি বিদ্যুৎ সরবরাহ দপ্তরের আওতায় বর্তমানে ১১ লাখ ৭৮ হাজার ৮৩৭ জন গ্রাহক রয়েছেন। এসব গ্রাহকদের মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ৪ লাখ ৬০ হাজার মতো গ্রাহকের প্রিপেইড মিটার আছে। পিডিবি চট্টগ্রামের কর্মকর্তারা জানান, প্রিপেইড মিটারগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই স্থাপন করা হয়েছে চট্টগ্রাম নগরীতে। আর এই মিটারগুলো ভবনের মালিকের নামেই তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু মিটারের দাম দিতে হচ্ছে ভাড়াটিয়াকে। সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা না থাকায় এভাবে ভাড়াটিয়াকেই মিটারের ভাড়া গুণে যেতে হচ্ছে।

চট্টগ্রাম নগরীর বাসিন্দাদের মধ্যে বেশিরভাগ বিভিন্ন ভবনে ভাড়াটিয়া হিসেবে থাকেন। তাঁদের মধ্যে স্বাভাবিকভাবে প্রয়োজনের কারণে এই এলাকা থেকে ওই এলাকায় বাসা বদলাতে হয়। তাই দেখা যাচ্ছে হয়তো বাসা বদলানোর কারণে সারাজীবনই মিটারের ভাড়া গুণে যেতে হবে ভাড়াটিয়াদের। এজন্য ভাড়াটিয়াদের দাবি যেহেতু মিটারটি মালিকের নামেই বরাদ্দ দেওয়া হয়, তাই মালিকদের কাছ থেকেই এককালীন মিটারের দাম কেটে নেওয়া হোক।

পিডিবি সূত্র জানায়, তাদের প্রতিটি প্রিপেইড মিটারের কেনা দাম পড়েছে প্রায় ৫ হাজার টাকার মতো। এখন প্রতি মাসে মিটার ভাড়া হিসেবে ৪০ টাকা করে কাটা হচ্ছে। এভাবে ৫ হাজার টাকা তুলতে হলে ১২৫ মাস টাকা কাটতে হবে। যা বছরের হিসেবে ১০ বছর ৫ মাস।

২০১৬ সালের ২৮ অক্টোবর ‘প্রিপেমেন্ট মিটারিং প্রজেক্ট ফর ডিস্ট্রিবিউশন সাউদার্ন জোন’ এর আওতায় চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ, স্টেডিয়াম, পাহাড়তলী ও খুলশী এই চার বিতরণ বিভাগে প্রিপেইড মিটার স্থাপনের কাজ শুরু করা হয়। প্রথম পর্যায়ে চারটি বিভাগে ১ লাখ ৩৯ হাজার গ্রাহককে প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনা হয়। এরপর ধাপে ধাপে পাথরঘাটা, কালুরঘাট, ষোলশহর, বাকলিয়া, মাদারবাড়ী, হালিশহর, নিউমুরিং, রামপুর বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের গ্রাহকেরা প্রিপেইড মিটারের আওতায় আসতে থাকে। এর মধ্যে দ্বিতীয় পর্যায়ে দেড় লাখ এবং তৃতীয় পর্যায়ে ১ লাখ গ্রাহক প্রিপেইড মিটার পান। এই ৩ লাখ ৮৯ হাজার প্রিপেইড মিটার স্থাপন কাজ শেষ হয় ২০১৮ সালের শুরুতেই। এরপর মাঝে মাঝে কিছু কিছু মিটার স্থাপন করা হয়। এসব মিলিয়ে বর্তমানে ৪ লাখ ৬০ হাজার গ্রাহক এই মিটার পেয়েছেন। ১৪০ কোটি টাকায় এসব মিটার কেনা হয়েছে চীন থেকে। সেদেশের ‘হেক্সিং ইলেকট্রিক্যাল কোম্পানি’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান এসব মিটার সরবরাহ করে।

মিটার ভাড়ার পাশাপাশি ৩০ টাকা করে ডিমান্ড চার্জ, ২৩ টাকার ওপর ভ্যাটসহ নানা খাতে প্রতিমাসে গ্রাহক থেকে টাকা কেটে নেওয়া হয়। এসব চার্জ দিতে সেরকম আপত্তি না থাকলেও গ্রাহকেরা মিটারের ভাড়া নিয়ে জোর আপত্তি জানিয়ে আসছেন।

প্রথম পর্যায়ে প্রিপেইড মিটারের আওতায় আসার মধ্যে এক গ্রাহক হলেন পাহাড়তলী এলাকার আব্দুর রহমান। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘চার বছর ধরে প্রিপেইড মিটার ভাড়া দিয়ে এসেছি। গত বছরের শেষের দিকে চাকরির কারণে কালুরঘাটে বাসা নিতে হয়েছে। এখানে এসেও মিটার ভাড়া দিচ্ছি। এভাবে কী সারাজীবন মিটার ভাড়া দিয়েই যেতে হবে?

নগরীর বিভিন্ন এলাকার আরও অন্তত ১০ জন গ্রাহকের সঙ্গে কথা হয় পূর্বকোণের। সবার বক্তব্যই একই। তাঁরা বলেন, মিটারটি যেহেতু তুলে নিয়ে অন্য জায়গায় স্থাপন করার সুযোগ নেই; তাই মিটারের দাম ভবনের মালিক থেকে এককালীন আদায় করতে হবে। কারণ তার ভবনেই তো মিটারটি সবসময় থাকবে।

গ্রাহকদের অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে পিডিবি চট্টগ্রামের প্রধান প্রকৌশলী মো. শামছুল আলম পূর্বকোণকে বলেন, ‘এককালীন মিটারের দাম নিয়ে নেওয়ার পদ্ধতিও আছে আমাদের। যেহেতু মালিকের নামে মিটার দেয়া হয় তাই তাঁদের কাছ থেকেই কোনো কোনো এলাকায় মিটার বসানোর সময়ই দাম নিয়ে ফেলা হচ্ছে। কিন্তু অনেকে নানা অজুহাত দেখান। এ জন্য মাসে মাসে মিটার ভাড়া কাটতে হচ্ছে। কারণ মিটারের দাম তো তুলতে হবে।’

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট