চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

জেএমসেনের ঐতিহাসিক বাড়ির বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে জানাব: নওফেল

নিজস্ব প্রতিবেদক

৯ জানুয়ারি, ২০২১ | ১০:৫১ অপরাহ্ণ

নগরীর রহমতগঞ্জে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত যাত্রামোহন সেনগুপ্তের বাড়ি ভাঙার পেছনে ‘দুরভিসন্ধি’ রয়েছে বলে উল্লেখ করছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তিনি জানান, জায়গাটির ঐতিহাসিক মূল্য রয়েছে থাকায় এটি রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টিগোচর করা হবে।

শনিবার (৯ জানুয়ারি) বিকেলে নগরীর রহমতগঞ্জে ভেঙে দেয়া ঐতিহাসিক বাড়িটি পরিদর্শনে যান স্থানীয় চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী-বাকলিয়া) আসনের সংসদ সদস্য উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। এ সময় তার সাথে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ এবং ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

নওফেল বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে এসে যাত্রামোহন সেন মানে জে এম সেন হলে অনুষ্ঠান করেছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকাবস্থায়ও এখানে এসেছিলেন। তাই এটির একটি ঐতিহাসিক মূল্য আছে সেটি উনি অনেক আগে থেকেই অবগত আছেন। স্বাভাবিকভাবেই আমি বিষয়টি উনার ও আমাদের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টিগোচর করব। জাদুঘর করার বিষয়ে সেখান থেকে একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তবে দখল বুঝিয়ে দেয়ার নামে হঠাৎ করে ভেঙে ফেলা হয়েছে, এটা একেবারেই আমার কাছে দুরভিসন্ধিমূলক মনে হয়েছে।”

ঐতিহাসিক স্থাপনায় জাদুঘর করার দাবিতে একমত ও স্থাপনাটি ভাঙার পেছনে ‘অন্য উদ্দেশ্য’ রয়েছে মন্তব্য জানিয়ে শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, “জাদুঘর করার ব্যাপারে আমার অবশ্যই ভূমিকা থাকবে। এখানে একটা পক্ষের মতে তারা আদালত থেকে রায় পেয়েছেন। আদালত থেকে রায় হওয়ার পর জায়গা বুঝিয়ে দেয়া হয়। বুঝিয়ে দেয়ার প্রেক্ষাপটে কীভাবে ভাংচুর হল, পুরাতন একটা স্থাপনাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করা হয়েছে, তা দেখে মনে হচ্ছে এখানে অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে। রায়টা কতটুকু কী হয়েছে, তা পর্যালোচনা করতে হবে। রায়ের ভিত্তিটা কী তা দেখতে হবে, অবস্থান এ রকম থাকবে কি থাকবে না সেটা আদালত কর্তৃক নির্ধারণ হবে। কিন্তু হঠাৎ করে ঐতিহাসিক ভবন ভেঙে দেয়া হয়েছে সেটা গর্হিত ও আমার দৃষ্টিতে আইনবিরোধী একটা কাজ হয়েছে।”

যাত্রামোহন সেনগুপ্তের বাড়িটি ঐহিতাসিক স্থাপনা হিসেবে ‘হেরিটেজ মূল্য’ রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “সেটাকে সম্মান দেখানো উচিৎ ছিল। সেটা ভেঙে দেওয়ার ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে। এখানে একটা স্কুল ছিল। দেখতে হবে কিসের ভিত্তিতে কবে থেকে তারা এখানে অবস্থান করছেন।”

অপর এক প্রশ্নের জবাবে নওফেল বলেন, যেকোন ঐতিহাসিক স্থাপনা, মালিকানা সূত্রে যিনি পান বা না পান, এটা ভেঙে ফেলার অধিকার কারও নেই। সরকার সেটা সংরক্ষিত ঘোষণার আগ পর্যন্তও যদি কেউ ভেঙে ফেলার চেষ্টা করে সামাজিকভাবে সেটা প্রতিহত করার একটা রেওয়াজ এদেশে রয়েছে। তবে এই জায়গাটি নিয়ে যে আলোচনাটা সামনে এসেছে, কাগজপত্র আরও দেখতে হবে। এটা একটা অর্পিত সম্পত্তি এবং জেলা প্রশাসনকে পক্ষভুক্ত না করে, জেলা প্রশাসনের সাথে আলোচনা না করে কীভাবে এই জায়গাটা বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছিল তা নিয়ে আমার সন্দেহ হচ্ছে।”

স্থাপনা ভাঙাকে ষড়যন্ত্রমূলক কাজ মন্তব্য করে উপমন্ত্রী বলেন, “একজন নাজিরের ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার না থাকা সত্ত্বেও অর্পিত সম্পত্তি কীভাবে সরকারের মালিকানা থেকে ব্যক্তি মালিকানায় গেল, সেটা তদন্ত করে দেখতে হবে। ওই স্থানে একটা স্কুল ছিল। স্কুলের যখন অনুমতি থাকে, পাঠদানের অনুমতি থাকে, একাডেমিক অনুমোদন থাকে- এতগুলো সরকারি স্বীকৃতি থাকার পরও কীভাবে হঠাৎ করে সেটাকে উচ্ছেদ করা হয়েছে যেখানে জেলা প্রশাসন অবগত নয়?”

প্রসঙ্গত, গত সোমবার (৪ জানুয়ারি) নগরীর রহমতগঞ্জে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত যাত্রামোহন সেনগুপ্তের বাড়িটি ভাঙার চেষ্টা করে একটি পক্ষ। বুলডোজার দিয়ে ভবনের সামনের অংশ ভেঙেও ফেলা হয়। এ সময় মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত স্থানীয় ছাত্র-জনতাকে নিয়ে তা থামিয়ে দেন। তিনি বলেন, বাড়ির দখল নিতে আসা পক্ষটি ‘জাল দলিল’ করে আাদলতের আদেশ এনেছিল। পরবর্তীতে ওই স্থাপনাটি রক্ষায় আন্দোলন করে আসা বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক সংগঠন ও বিশিষ্টজনরা ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিধন্য জায়গাটি রক্ষা করে জাদুঘর করার দাবি তুলেছেন। ইতিমধ্যে ওই স্থাপনাটি রক্ষা করে জাদুঘর করার প্রস্তাব দিয়ে চসিক প্রশাসকের পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব বরাবর চিঠিও দেয়া হয়েছে। হাইকোর্টের পক্ষ থেকে একটি রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে ওই জায়গার ওপর স্থিতাবস্থা দেয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও আদালত থেকে ওই ভবন ভাঙায় নিষেধাজ্ঞা নেয়া হয়েছে।

 

 

 

পূর্বকোণ/আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট