চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

‘জায়গা কিনে আদালতের অনুমতি নিয়ে বাড়ি বুঝে নিতে গিয়েছি’

নিজস্ব প্রতিবেদক

৭ জানুয়ারি, ২০২১ | ৫:৪১ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রামের রহমতগঞ্জে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত দেশপ্রিয় যাত্রা মোহন সেনগুপ্তের বাড়ি দখল করতে যাওয়া ফরিদ উদ্দিন চৌধুরীর পরিবারের দাবি, আদালতের নির্দেশে তারা বাড়িটি বুঝে নিতে গিয়েছিলেন। তবে সরকার চাইলে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বাড়িটি হস্তান্তর করা হবে বলে জানিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (৭ জানুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের এস রহমান হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পরিবারের পক্ষ থেকে তিনি এ কথা জানান। 

সংবাদ সম্মেলনে ফরহাদ দাবি করেন, ওই জায়গা তারা কিনে নিয়ে আদালতের অনুমতি নিয়ে দখলে গেছেন। তারা ‘দখলদার বা ভূমিদস্যু নন’।

তিনি বলেন, ‘আমি আইনগতভাবে এই জায়গা পেয়েছি। সেখানে আমি স্থিত থাকব। যদি সরকার মনে করে আমাদের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে জায়গাটি নেবে। তাহলে আমরা অবশ্যই আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তা হস্তান্তর করব। এতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই’।

যাত্রামোহন সেনগুপ্তকে ‘শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি’ হিসেবে বর্ণনা করে ফরহাদ বলেন, “তিনি বাংলার জন্য অনেক করেছেন। রহমতগঞ্জ এলাকার আশেপাশে উনাদের অনেক সম্পত্তি ছিল। ওই জায়গাটি যদি ঐতিহাসিক হয়, তাহলে আশেপাশের ফ্ল্যাট বাড়ি কেমনে হল, তখন তো প্রতিবাদ হয় নাই। বাড়িটি যদি ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অংশ হয়, তাহলে এই বাড়ির উঠান-পুকুরে কি করে ভবন উঠলো? তখন কেনো বাধা দেয়া হয়নি? আমরা ওই জায়গার জন্য ১৫ বছর ধরে আদালতে লড়েছি।”

ফরহাদ চৌধুরী বলেন, “উনি (রানা দাশগুপ্ত) শ্রদ্ধেয় হলেও অনেক বিষয়ে বিতর্কিত। ওই বাড়ি দখলে বাধা দিয়ে উনার কী লাভ? ব্যক্তিস্বার্থে উনি এসব কাজ করছেন।’’

রানা দাশগুপ্তকে উদ্দেশ করে ফরহাদ চৌধুরী বলেন, “ওই স্থানে রাজাকারপুত্র শিশুবাগ স্কুল পরিচালনা করছেন। তখন উনি কোথায় ছিলেন। একতরফা ডিক্রি নিয়েছি কীভাবে বলেন?  আমি, আমার পরিবার, আমার বংশ কখনো জায়গা দখল করিনি। জায়গা বুঝিয়ে দিয়েছে আদালত।

এর আগে সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে লিখিত বক্তব্যে বাড়িটির দখলদার ফরিদ উদ্দিন চৌধুরীর আইনজীবী এডভোকেট আরেফিন আলি বলেন, ‘২০১৯ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে রেজিস্ট্রিকৃত সাফ কবলা (নং- ১৭০২) দলিল মূলে শ্রী মিলন কান্তি সেনগুপ্তের পিতা শ্রী বীরেন্দ্র মোহন সেনগুপ্ত থেকে খরিদক্রমে আমার মক্কেল এম ফরিদ উদ্দিন নিম্ন তফসিলভুক্ত (আর এস জরিপ ২০১, ৩২১) সম্পত্তি ভোগদখলকার মর্মে স্থিত হয়েছেন।’

জেলা প্রশাসন থেকে ইজারা নিয়ে নগরীর রহমতগঞ্জ এলাকার ওই ভবনে এখন শিশুবাগ স্কুলের কার্যক্রম চলছে। আদালতের আদেশের কথা বলে গত সোমবার এম ফরিদ চৌধুরী বুলডোজার নিয়ে সদলবলে গিয়ে বাড়িটি ভেঙে ফেলতে উদ্যত হন।

ঐতিহ্যবাহী ভবনটির সামনের কিছু অংশ বুলডোজার দিয়ে ভেঙেও ফেলেন তারা। এ ঘটনা জানতে পেরে ঘটনাস্থলে যান যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত। তার নেতৃত্বে স্থানীয় জনতার প্রতিরোধের মুখে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে সেদিন বাড়িটি ভাঙার কাজ বন্ধ হয়।

জানা গেছে, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত দেশপ্রিয় যতীন্দ্র মোহন সেনগুপ্তের বাড়ি রক্ষায় আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। বুধবার (৬ জানুয়ারি) ঐতিহাসিক বাড়িটি না ভাঙার জন্য স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চেয়ে চট্টগ্রামের প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালতে জেলা প্রশাসনের দেওয়ানি মামলা শাখার পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছে। আদালত ভবনটি ভাঙার ওপর একমাসের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন।  

অপরদিকে বুধবার (৬ জানুয়ারি) এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত যাত্রামোহন সেনগুপ্তের বাড়ি দখল ও ভাঙার ওপর একমাসের স্থিতাবস্থা দিয়েছেন।

এর আগে মঙ্গলবার (৫ জানুয়ারি) চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে ‘চট্টগ্রাম ইতিহাস সংস্কৃতি গবেষণা কেন্দ্র’ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন জানানো হয়, রহমতগঞ্জ এলাকার যাত্রামোহন সেনগুপ্তের বাড়িটি ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত। এখানে অবস্থান করেছেন মহাত্মা গান্ধী, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু, মৌলানা শওকত আলী, ড. আনসারী, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, ব্যারিষ্টার আবদুল্লাহ রসুল প্রমুখ। সর্বভারতীয় কংগ্রেসের নেতা যাত্রা মোহন সেনগুপ্ত ১৯৩৩ সালের ২৩ জুলাই নিঃসন্তান অবস্থায় ব্রিটিশ ভারতের রাচিতে কারাবন্দি অবস্থায় মারা যান, তাঁর কোনো ওয়ারিশ কর্তৃক এই বাড়ি বিক্রির কোনো সুযোগ নেই। যাত্রা মোহন সেনগুপ্তের স্ত্রী নেলি সেনগুপ্ত ১৯৭০ সাল পর্যন্ত রহমতগঞ্জ এলাকার বাড়িটিতে ছিলেন। ওই বছর তিনি ভারতের কংগ্রেস সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর আমন্ত্রণে চিকিৎসার জন্য সেখানে যান। এর মধ্যে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। এরপর তিনি ভারতে চলে গেলে পাকিস্তান সরকার সেটিকে শত্রুসম্পত্তি ঘোষণা করে।

পূর্বকোণ/পিআর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট