শুক্কুর ১৪ বছর বয়সে ২০১৬ সালে প্রথম গ্রেপ্তার হয়। বয়স কম থাকায় তাকে গাজীপুর কিশোর সংশোধানাগারে পাঠায় বিজ্ঞ আদালত। আড়াই বছর গাজীপুর কিশোর সংশোধনাগারে বন্দী জীবন কাটানোর পর জামিনে বের হয়ে ফের অপরাধে জড়ায়। ছিনতাই করতে গিয়ে ২০১৭ সালের জুলাই মাসে দ্বিতীয়বার গ্রেপ্তার হয়। দুই বছর দুই মাস কারাভোগের পর জামিনে বের হবার তিন মাসের মাথায় নিউমার্কেট এলাকায় মোবাইল ছিনতাই করতে গিয়ে ফের কোতোয়ালী থানা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়। সাড়ে তিনমাস জেল কাটার পর জামিনে বের হয়। গত ১৯ নভেম্বর রিয়াজ উদ্দিন বাজার আমতল এলাকায় একজন নারী পথচারীর ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে মোবাইল ছিনতাইয়ের সময় আবার ধরা পড়ে।
গ্রেপ্তারের পর পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের শুক্কুর জানিয়েছে, আগের দিনও নিউমার্কেট এলাকায় আরো এক নারীর কাছ থেকে মোবাইল ফোন ছিনতাই করেছিলো। কিশোর সংশোধানাগারে থাকলেও মূলত সেখানে তার কিছুই শেখা হয়নি। জামিনে বের হয়ে বিআরটিসি এলাকায় পুরনো বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে গিয়ে ফের ছিনতাইয়ে জড়িয়ে পড়ে।
কেস স্টাডি-২ : ২০১৯ সালে ইছহাকের বয়স ছিলো ১৪ বছর। ২০১৯ সালের ২৯ অক্টোবর তার বিরুদ্ধে কোতোয়ালী থানায় একটি দ্রুত বিচার আইনে মামলা দায়ের করেন কলেজ ছাত্র ইমন বিশ্বাস। গ্রেপ্তারের পর পরদিন ৩০ নভেম্বর তাকে আদালতের আদেশে কারাগারে প্রেরণ করেন পুলিশ। ওই বছরের ৭ নভেম্বর ইছহাককে একমাত্র আসামি করে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন কোতোয়ালী থানার উপ-পরিদর্শক আজহারুল ইসলাম।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কলেজ ছাত্র ইমন ঘটনার দিন বেলা বারোটায় জহুর হকার্স মার্কেট থেকে পায়ে হেঁটে নিউমার্কেট মোড়ের সামনে পৌঁছায়। সেখানে আগে থেকে থাকা কিশোর ইছহাকসহ তিনজনে মিলে ইমনের কাছ থেকে একটি মুঠোফোন ও তার বন্ধূ শ্রীকান্তের কাছ থেকে একটি মুঠোফোন ও দুই হাজার টাকা ছিনতাই করে। দুই বন্ধুর চিৎকারে আশেপাশের লোকজন ইছহাককে হাতেনাতে পাকড়াও করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। ইছহাককে আদালতে প্রেরণ করা হলে বিজ্ঞ আদালত তাকে গাজীপুর কিশোর সংশোধানাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়। জামিনে বের হয়ে ছিনতাই করতে গিয়ে গত ১৭ নভেম্বর ফের ধরা পড়ে ইছহাক।
কেস স্টাডি-৩ : কিশোর উজ্জ্বল, দেলোয়ার, তানজিদ, রবিউল, কিংবা সাকিব কারো বয়স পনেরো বছরের বেশি নয়। ২০১৮ সালের ২৫ নভেম্বর মধ্যরাতে ছিনতাই করতে গিয়ে চট্টগ্রাম রেলস্টেশন এলাকা কিশোর-তরুণ মিলে এগারোজন ধরা পড়ে পুলিশের হাতে। গ্রেপ্তার কিশোরদের আদালতের আদেশে কিশোর সংশোধানাগারে পাঠানো হয়। ২০১৯ সালের ১১ মে তাদের রিরুদ্ধে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতেয়ালী থানার উপ-পরিদর্শক শরিফুজ্জামান ভূঁইয়া। কয়েকমাস পরেই তারা কিশোর সংশোধানাগার থেকে জামিনে বের হয়ে আসে। গত ১৭ নভেম্বর দেলোয়ার ও উজ্জ্বল ছিনতাই করতে গিয়ে ফের পুলিশের হাতে ধরা পড়ে।
কেস স্টাডি-৪ : ২০১৯ সালের ২ নভেম্বর রাতে এগারোটায় নগরীর কদমতলী মোড় থেকে ছিনতাই করতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে ষোল বছরের কিশোর শফিক (ছদ্মনাম) ও এগারো বছর বয়সী অপু প্রকাশ হৃদয়। দুজনেই ভাসমান স্থায়ী কোন ঠিকানা নেই। আদালতের নির্দেশে তাদেরকেও কিশোর সংশোধানাগারে পাঠায় পুলিশ। ২০১৯ সালের ১২ ডিসেম্বর তাদেরকে অভিযুক্ত করে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামরুজ্জামান। জামিনে এসে ফের তারা ছিনতাইয়ে জড়িয়ে পড়ে। গত ১৭ নভেম্বর ছিনতাই করতে গিয়ে দুজনেই পুলিশের হাতে ধরা পড়ে।
কিশোর অপরাধীদের বার বার অপরাধে জড়ানোর এমন তথ্য সামান্য খবর নিলে পাওয়া যায়। তাদের সঙ্গে আলাপ করে দেখা গেছে, সংশোধনাগারে পাঠানো হলেও সংশোধন হচ্ছে না কিশোর অপরাধীরা। নগরজুড়ে ছিনতাইয়ে জড়িত কিশোরদের বিশাল বহর। বিশেষ করে মহিলাদের ভ্যানিটি ব্যাগ কিংবা পথচারীদের মুঠোফোন ছিনতাইয়ে জড়িতদের অধিকাংশ কিশোর। ছিনতাই করতে গিয়ে বাধার শিকার হলে পথচারীদের ছুরিকাঘাত করতেও দ্বিধাবোধ করছে না তারা। গ্রেপ্তারের পর আদালতের আদেশে তাদের কিশোর সংশোধানাগারে পাঠালেও জামিনে এসে তারা ফের একই অপরাধ করছে। কোনমতেই দমানো যাচ্ছে না তাদের। কিশোর অপরাধী নিয়ে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে নগর পুলিশ।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) মোস্তাক আহমেদ জানান, অপরাধে জড়িয়ে থাকার অভিযোগে বিভিন্ন সময় কিশোররা গ্রেপ্তার হচ্ছে। আদালতের আদেশে তাদেরকে কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। জামিনে আসার পর তাদের অনেকে স্বাভাবিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত হচ্ছে না। সংশোধানাগারে বন্দী থাকা অবস্থায় কোন কাজ শিখলেও বের হবার পর তারা সেই কাজ করছে না অথবা যে পরিবেশে থাকছে সে পরিবেশের কারণে শিশু কিশোররা বিপদগামী হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি শিশু কিশোর নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী ধণাঢ্য ব্যক্তিদের সহযোগিতায় বিপদগামী কিশোরদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে।
পূর্বকোণ/এএ