চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

তিনশ’ কোটি টাকা হাতিয়ে লন্ডনে পাড়ি

দুদকের অনুসন্ধান শুরু

ইমাম হোসাইন রাজু

৬ জানুয়ারি, ২০২১ | ১২:৪২ অপরাহ্ণ

বছর তিনেক আগে নগরীর আগ্রাবাদের ব্র্যাক ব্যাংক শাখা থেকে ঋণ নেন ইপিজেডের নব্য পোশাক ব্যবসায়ী নাজমুল আবেদিন। এএন্ডবি আউটওয়্যার নামে নিজ গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানের জন্য বিদেশ থেকে কাঁচামাল আমদানি করার নামে এ ঋণ সুবিধা নেন তিনি। অথচ এর জন্য তাকে কোনো বন্ধক দিতে হয়নি। চুক্তি অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সকল অর্থ পরিশোধ করার কথা থাকলেও তা পরিশোধ না করেই লাপাত্তা হয়ে গেছেন এ ব্যবসায়ী। উপায়ন্তর না দেখে ব্যাংকটি ইতোমধ্যে অর্থঋণ আদালতে ১০২ কোটি টাকা পাওনা আদায়ে মামলা দায়ের করেছে। শুধু একটি ব্যাংকই নয়, একই কায়দায় এ ব্যবসায়ী তার তিন প্রতিষ্ঠানের নামে সর্বমোট চার ব্যাংক থেকে প্রায় তিনশ’ কোটি টাকা ঋণ নেন। অথচ কোনো ব্যাংকের টাকাই পরিশোধ না করে লাপাত্তা হয়েছেন তিনি। ঋণপ্রদানকারী সব ব্যাংকই ওই ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, একসময়ে ব্যাংকে কর্মরত থাকা অবস্থায় সহজে ঋণ পাওয়ার কৌশল জেনেছিলেন নাজমুল আবেদিন। ফলে এসব ব্যাংককে ‘স্বল্প পুঁজি’ দেখিয়ে বড় অংকের অর্থ ঋণ নেন তিনি। আর ঋণখেলাপি হওয়ার পর থেকেই সপরিবারে পাড়ি জমিয়েছেন লন্ডনে। মূলত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম ভাঙিয়ে এসব অর্থ পাচার করেছেন বিদেশে। যা নিয়ে ইতোমধ্যে মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২ এর সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিনকে অনুসন্ধান কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে। দুদকের বিশ^স্ত সূত্রে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

দুদক সূত্রে জানা যায়, গত সেপ্টেম্বর মাসে দুদক প্রধান কার্যালয়ের মানি লন্ডারিং অনু বিভাগের নির্দেশনার প্রেক্ষিতে এ অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করে দুদক। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছে দুদক। একই সাথে ঋণ সংশ্লিষ্ট কর্মর্কতাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা।

অভিযোগে জানা যায়, একসময় স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে চাকরি করেন নাজমুল আবেদিন। যদিও পরবর্তীতে চাকরি ছেড়ে দিয়ে পাড়ি দেন লন্ডনে। কয়েক বছর বিদেশে থেকে ফের দেশে এসেই রাতারাতি চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চলে (ইপিজেড) শুরু করেন ব্যবসা। খুলে বসেন এএন্ডবি আউটফিট, নর্ম আউটফিট লিমিটেড এবং কোল্ড স্কুল প্লে লিমিটেড নামে তিনটি প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের নামে ব্র্যাক ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক ও ওয়ান ব্যাংক থেকে প্রায় তিনশ’ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণ করেন তিনি। প্রাথমিক পর্যায়ে এসব ব্যাংকে কিছু ঋণের টাকা পরিশোধ করলেও হঠাৎ করেই সপরিবারে দেশ ছাড়েন এ ব্যবসায়ী।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওয়ান ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখার এক কর্মকর্তা পূর্বকোণকে বলেন, ‘২০১৭ সালে ৫০ কোটি টাকার কমার্শিয়াল ঋণের আবেদন করেন নাজমুল আবেদিন। তার ব্যবসার অবস্থা ভালো দেখে খোঁজ খবর নিয়ে সেই ঋণের টাকা ছাড়ও দেয়া হয়। প্রথম পর্যায়ে কিছু টাকা পরিশোধ করলেও হঠাৎ করেই তার আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। উপায়ান্তর না দেখে ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে চট্টগ্রামের অর্থঋণ আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হয় তার বিরুদ্ধে। একই সাথে সামনে আরও একটি মামলা দায়ের করা হবে বলেও জানান তিনি।’

এদিকে অনুসন্ধানশেষে মানি লন্ডারিংয়ের প্রমাণ মিললে নাজমুল আবেদিনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন দুদকের (নাম প্রকাশ করা শর্তে) উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, নাজমুল আবেদিন কীভাবে ব্যাংকের এসব ঋণ পেলেন, ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তা এর সাথে জড়িত আছেন কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যদি তাদের বিরুদ্ধে গাফেলতির প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট