চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

বেড়িবাঁধ নির্মাণে উপ-ঠিকাদারি পেতে ‘আবদার’

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

৬ জানুয়ারি, ২০২১ | ১২:০০ অপরাহ্ণ

আনোয়ারা উপকূলীয় বেড়িবাঁধ প্রকল্পের কাজ শুরু করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। প্রকল্প এলাকায় ব্লক তৈরির মালামাল পৌঁছানো হলেও কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। প্রকল্প এলাকায় ভূমি মালিকদের বাধার কারণে পিছিয়ে যাচ্ছে প্রকল্পের কাজ। অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় কয়েকজন নেতা উপ-ঠিকাদারি পেতে কৌশলে চাপ দিচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, উপকূলীয় বেড়িবাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের সম্প্রসারিত ৬ প্যাকেজের কাজের ছাড়পত্র দেওয়া হয়। পারকী অংশে কাজ কাজ করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। প্রকল্প এলাকায় মেশিন, বালু, পাথর, শ্রমিক ও অন্যান্য সরজ্ঞামাদি পৌঁছানোর পর বাধা দেয় স্থানীয়রা। মূলত জমির মালিকেরা বাধা দেওয়ার কারণে কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। পারকী সমুদ্র সৈকত এলাকায় সরকারি খাস জমি ও ব্যক্তি মালিকানা এলাকায় সিসি ব্লক নির্মাণ কাজ শুরু করার পরিকল্পনা নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু কাজ শুরু করতে গিয়ে স্থানীয় কিছু লোকের বাধার কারণে কাজ বন্ধ রয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড ও প্রকল্পের ঠিকাদারদের অভিযোগ, প্রকল্পের মালামাল এলাকায় পৌঁছানোর পর থেকে কৌশলে বিভিন্নভাবে চাপ সৃষ্টি শুরু হয়। মূলত কাজের উপ-ঠিকাদারি পেতে আবদার করে আসছেন স্থানীয় কিছু নেতা। তাদের আবদার রক্ষা করতে না পারায় কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। গতকাল মঙ্গলবার সিসি ব্লক নির্মাণ ও প্রকল্পের কাজ শুরু করার জন্য সমুদ্র এলাকায় জায়গার ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট লিখিত আবেদন করেছেন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান।

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জোবায়ের আহমদ পূর্বকোণকে বলেন, ‘ব্লক নির্মাণ ও তৈরি ব্লক রাখার জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গা হলেও তা ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।’

 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তয়ন কুমার ত্রিপুরা পূর্বকোণকে বলেন, ‘মাননীয় ভূমিমন্ত্রীর নির্দেশে উপকূলীয় এলাকা সুরক্ষা প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে। এখন ব্লক নির্মাণ ও প্রকল্পের কাজ শুরু করতে গিয়ে বিপত্তি দেখা দিয়েছে। এতে প্রকল্পের কাজ পিছিয়ে যাচ্ছে।’

 

তিনি বলেন, ‘আগামী বর্ষার আগে সমুদ্র অংশে যাতে পানি না ঢুকে সেলক্ষ্য নিয়ে এগুচ্ছি। কিন্তু কাজ শুরু করতে না পারলে সেই লক্ষ্যমাত্রা কিছুটা ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যার কারণে এলাকাবাসী দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ লাঘব আরও বিলম্বিত হতে পারে।’

একাধিক সূত্র জানায়, প্রকল্প এলাকায় মালামাল পৌঁছানোর পর থেকে স্থানীয় কিছু নেতা পাথর, বালু ও ইট সরবরাহের উপ-ঠিকাদারি পাওয়ার জন্য আবদার করে আসছেন। সরবরাহের কাজ পেতে নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করছে।

প্রকল্পের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মেসার্স রহমান ইঞ্জিনিয়ারিং এর আবদুর রহমান পূর্বকোণকে বলেন, ‘প্রকল্প এলাকায় বালু, পাথর, মেশিন, শ্রমিক ও অন্যান্য সরজ্ঞাম পৌঁছেছে। কিন্তু কাজ শুরু করতে পারছি না।’

পাউবো জানায়, আনোয়ারা, পতেঙ্গাসহ উপকূলীয় বেড়িবাঁধ পুরোপুরি সুরক্ষায় ৩২০ কোটি টাকার প্রকল্প সম্প্রসারিত হয়ে এখন ৫৭৭ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। সংশোধিত প্রকল্পের দুই দশমিক ১৫ কিলোমিটার স্থায়ী প্রতিরক্ষা ও ৫টি রেগুলেটর নির্মাণ করা হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, আনোয়ারায় উপকূলীয় এলাকা রয়েছে ১৩ কিলোমিটার। সাঙ্গু নদীর মোহনা থেকে রায়পুর ইউনিয়নের পারকী পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার অংশে স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। সংশোধিত প্রকল্পে এখন পুরো উপকূলীয় বেড়িবাঁধ সুরক্ষা করা হবে। আনোয়ারায় আর উপকূলীয় বেড়িবাঁধের জন্য দুর্ভোগ পোহাতে হবে না।’

চলমান প্রকল্পে ৬৪ দশমিক ৩২৯ কিলোমিটার বাঁধ মেরামত, উচ্চতা উন্নীতকরণ করা হবে। ১১ দশমিক ৬৫২ কিলোমিটার নদীর তীর ও সী ডাইক সংরক্ষণ করা হবে। সংশোধিত প্রকল্পে তা বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ১৩.৮০২ কি. মি। পানি নিয়ন্ত্রণে রেগুলেটর মেরামত ও নির্মাণ ৩৫টি থেকে বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৪০ টি। ১৭.৬৯০ কিমি খাল পুনঃ খনন করা হবে। পুরো প্রকল্পে ৬৭ হাজার গাছ রোপণ করা হবে।

 

পূর্বকোণ/পি-মামুন

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট