চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

সিডনি, চবি, চমেক ও জেনারেল হাসপাতালের যৌথ গবেষণা

করোনায় আইসিইউতে মৃত্যু: অর্ধেকই ডায়াবেটিক রোগী

মৃতদের ৮৪.১০ শতাংশ পুরুষ আর ১৫.৯০ শতাংশ নারী

ইমাম হোসাইন রাজু

৫ জানুয়ারি, ২০২১ | ১১:০৭ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের আইসিইউতে মৃত্যুবরণকারী করোনা রোগীদের অর্ধেকের বেশিই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ছিলেন। সদ্যসমাপ্ত বছরের চার মাসের (এপ্রিল থেকে জুলাই) মধ্যে চট্টগ্রামের প্রধান দুটি কোভিড হাসপাতালের আইসিউতে ভর্তি হওয়া রোগীদের মৃত্যুর পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে এই তথ্য পাওয়া গেছে।

ইউনিভার্সিটি অফ নিউসাউথ ওয়েলস অস্ট্রেলিয়া, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের যৌথ গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। তথ্য বলছে, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত আইসিইউতে মৃত্যুবরণকারী কোভিড রোগীদের ৮৪ দশমিক ১০ শতাংশই পুরুষ আর ১৫ দশমিক ৯০ শতাংশ হচ্ছেন নারী। এদের ৬৫ দশমিক ৫ শতাংশের বসবাস শহর এলাকায়।

গবেষণায় নেতৃত্ব দেন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল কোভিড-১৯ আইসিউ’র জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. মোহাম্মদ মইনুল আহসান, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ডায়াবেটিস ও হরমোন রোগ বিভাগের প্রধান ডা. ফারহানা আক্তার ও আইসিইউ’র চিকিৎসক ডা. তারেক উল কাদের এবং সিডনির চিলড্রেন্স ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের গবেষক ড. অয়ন সাহা।

গবেষকরা জানান, গত বছরের পহেলা এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউতে মৃত্যুবরণকারী ১৬৮ কোভিড রোগীর মধ্যে এ গবেষণা চালানো হয়। যাতে দেখা যায় মৃত্যু হওয়া ৮৮ জনই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ছিলেন। অর্থাৎ মৃত্যুর ৫২ দশমিক ৪ শতাংশই বা অর্ধেকের চেয়ে বেশি আগে থেকেই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ছিলেন। যে সকল রোগীর ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত এবং যারা ইনসুলিনের উপর নির্ভরশীল ছিলেন, তাদেরই মৃত্যুহার তুলনামূলক বেশি ছিল।

মারা যাওয়া অধিকাংশ ডায়াবেটিক রোগীর বয়স ৫১ বছরের উপরে। এছাড়া ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মৃত্যু হওয়া ৮৮ জনের মধ্যে ৭৪ জন বা ৮৪ দশমিক ১০ শতাংশই পুরুষ। বাকি ১৪ জন বা ১৫ দশমিক ৯০ শতাংশ নারী। এ বিষয়ে গবেষকরা উল্লেখ করেন, পুরুষ ডায়াবেটিক রোগীরা তুলনামূলক বেশি মারা গেছেন।

আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রকাশনা সংস্থা এলসেভিয়ার-এর জার্নালে ‘ডায়াবেটিস এন্ড মেটাবলিক সিনড্রোম: ক্লিনিক্যাল রিসার্চ এন্ড রিভিউস’ শীর্ষক গবেষণা প্রবন্ধতে এই তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।

গবেষণার তথ্যমতে, চটগ্রামে ডায়াবেটিক রোগীদের আইসিউতে ভর্তির হার বিশ্বের অন্যান্য অনেক শহর থেকে বেশি ছিল। চট্টগ্রামে ৫২ দশমিক ৪ শতাংশ হলেও চীনের উহান এ সংখ্যা মাত্র ২০ দশমিক ৮ শতাংশ, আমেরিকার নিউইয়র্কে ৩৬ শতাংশ এবং ইতালিতে ৪৬ শতাংশ।

গবেষকরা জানান, আন্তর্জাতিকভাবেও ডায়াবেটিসকে করোনার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করা হয়েছে। পৃথিবীতে প্রতি ১০ জনে একজন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। বাংলাদেশে এই মুহূর্তে প্রায় এক কোটি লোক ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। চট্টগ্রামে প্রায় ১০ লাখের বেশি লোক ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। পৃথিবীতে ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ অষ্টম।

এমন বাস্তবতায় গবেষকরা মনে করেন, ডায়াবেটিসের তীব্রতার কারণে কোভিডের সঙ্গে ডায়াবেটিসের সম্পর্ক, প্রতিক্রিয়া, সুস্থ হতে জটিলতা ও চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে গবেষণা জরুরি। তারা বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যে সকল ডায়াবেটিক রোগীরা ৫০ বছরের উপরে, ডায়াবেটিকের পাশাপাশি উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, শ্বাসকষ্ট সমস্যা বিদ্যমান এবং যাদের ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত, ইনসুলিন নিতে হয় তাদের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। তাই এই জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) এর কোভিড-১৯ সংক্রান্ত নির্দেশনা কঠোরভাবে মেনে চলা উচিত।

গবেষণাটির সামগ্রিক তত্ত্বাবধানে ছিল চট্টগ্রামের ডিজিজ বায়োলজি এন্ড মলিকুলার এপিডেমিওলজি রিসার্চ গ্রুপ। গবেষণা তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্বে আরও ছিলেন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডা. এইচ এম হামিদুল্লাহ মেহেদী ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের করোনা ইউনিটের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডা. তারেকুল কাদের।

এছাড়া তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ ও বিশ্লেষণে সহায়তা করেন ডা. আরমান উল্লাহ চৌধুরী, ডা. হাসানুল করিম, ডা. তাজরীনা রহমান, ডা. আয়েশা পারভীন এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাবেকুন নাহার।

 

 

 

 

পূর্বকোণ/পি-আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট