৫ জানুয়ারি, ২০২১ | ১২:১১ পূর্বাহ্ণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
নগরীর কোতোয়ালী থানাধীন রহমতগঞ্জ এলাকায় ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতি বিজড়িত যাত্রা মোহন সেনগুপ্তের শত বছরের পুরনো বাড়ির একাংশ বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে একটি মহল। ওই বাড়িতে প্রায় চার যুগ ধরে ‘শিশুবাগ’ নামের একটি স্কুলের কার্যক্রম চলছিল। উচ্ছেদের সময় স্কুলে ভর্তি হতে আসা শিক্ষার্থী-অভিভাবক এবং স্কুলের শিক্ষক ও কর্মচারীদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
সোমবার (৪ ডিসেম্বর) দুপুরের দিকে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর এডভোকেট রানা দাশগুপ্ত স্থানীয়দের নিয়ে ভবনটির সামনে অবস্থান নেন। দীর্ঘক্ষণ উভয়পক্ষের মাঝে উত্তেজনার পর চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট সেখানে উপস্থিত হন। একপর্যায়ে তিনি উচ্ছেদ বন্ধ করে ভবনটি সিলগালা করে দেন।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ওই জায়গার দাবিদার ফরিদ উদ্দিনের ছেলে ফরহাদ ও ফয়সালের সঙ্গে যুবলীগ নেতা পরিচয়দানকারী গিয়াসউদ্দিন সুজনের নেতৃত্বে অর্ধশত তরুণ ও যুবক স্কুলে প্রবেশ করেন। তাদের সাথে ছিল অসংখ্য শ্রমিক। পুলিশের উপস্থিতিতেই তারা স্কুলে ভর্তি হতে আসা শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবক এবং শিক্ষক-কর্মচারীদের স্কুল থেকে করে দেন। স্কুল থেকে আসবাবপত্র এনে সামনের মাঠে রাখেন। এরপর তারা স্কুলের ভবনের একাংশ বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেন।
‘কেন ভবন ভাঙা হচ্ছে’ রানা দাশগুপ্ত জানতে চাইলে নিজেকে এম ফরিদ চৌধুরীর মেয়ের জামাই পরিচয় দিয়ে গিয়াস উদ্দিন সুজন জানান, আদালতের নির্দেশে জেলা প্রশাসনের লোকজন তাদের ভবনের দখল বুঝিয়ে দিয়েছে এবং সেজন্য তারা ভবনটি ভাঙছেন।
রানা দাশগুপ্ত উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘আংশিক গুঁড়িয়ে দেয়া ভবনটি বৃটিশবিরোধী সংগ্রামের স্মৃতিবিজড়িত ভবন। এই ভবন আমাদের ঐতিহ্য। আমরা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের এই স্মৃতির সংরক্ষণ চাই। এটা ভাঙতে হলে আমার গায়ের উপর বুলডোজার চালাতে হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘ভবন ভাঙতে-আসাদের দাবি, মিলন সেনগুপ্ত থেকে তারা জমিটি কিনেছেন। কিন্তু যতীন্দ্র মোহন সেনগুপ্তের ভাগ্নে পরিচয়দানকারী মিলন সেনগুপ্ত মানসিকভাবে অসুস্থ। জমিটি অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে সরকার লিজ দিয়েছে। তাহলে সেটি বিক্রয়যোগ্য নয়। একটা অপকৌশল করে তারা আদালতের আদেশ এনেছে বলে আমাদের মনে হচ্ছে।’
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশরাফুল হাসান বলেন, ‘সরকার জমিটি বরাদ্দ দিয়েছে। এখন বরাদ্দ দেওয়া জমি নিয়ে আদালতের কোনো আদেশ আছে কিনা সেটা আমরা যাচাই-বাছাই করে দেখব। এরপর জেলা প্রশাসক মহোদয় পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানাবেন।’
জানা যায়, আঠারো শতকের খ্যাতিমান বাঙালি আইনজীবী যাত্রামোহন সেনের গড়ে তোলা এই বাড়ির জমির পরিমাণ প্রায় ২০ গণ্ডা। অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে ঘোষিত বাড়িসহ জমিটি জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে ইজারা নিয়ে শামসুদ্দিন মো. ইছহাক নামে এক ব্যক্তি ‘বাংলা কলেজ’ নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। সর্বশেষ সেখানে ‘শিশুবাগ’ নামে একটি স্কুলের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছিল।
এদিকে আগামীকাল মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে ‘চট্টগ্রাম ইতিহাস সংস্কৃতি গবেষণা কেন্দ্র’ এ সংক্রান্তে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছে। সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষাবিদ ড. অনুপম সেন, কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন এবং রানা দাশগুপ্ত বক্তব্য রাখবেন বলে জানিয়েছেন সংগঠনের সভাপতি আলীউর রহমান।
পূর্বকোণ/পি-আরপি
The Post Viewed By: 1276 People