চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

চালের মূল্যের ভার সইতে পারছে না গরিব-নিম্নবিত্ত

আল-আমিন সিকদার 

৪ জানুয়ারি, ২০২১ | ১২:১০ অপরাহ্ণ

গেল কয়েক সপ্তাহ ধরে লাগামহীন চালের বাজার। বাজারে নতুন চাল এসে সরবরাহ বাড়লেও অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে চালের দাম। চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা এ দাম বৃদ্ধির জন্য উত্তরবঙ্গের মিল মালিকদের দিকে আঙুল তুলে ধরলেও দিনশেষে কঠিন সময়ের সম্মুখীন হয়েছে নিম্ম আয়ের মানুষ।

বস্তাপ্রতি আড়াইশ থেকে তিনশ টাকা বাড়ায় চাল কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন নিম্নবিত্ত ও দিনমজুররা। গরিবের চালখ্যাত মোটা সিদ্ধ চাল কেজি প্রতি কিনতে হচ্ছে ৪০ থেকে ৪২ টাকায়। নিম্ম আয়ের মানুষের জন্য ভর্তুকিমূল্যে কিংবা নিদেনপক্ষে ন্যায্যমূল্যে চাল বিক্রির কোন উদ্যোগ নেই সরকারের। করোনাকালে ভর্তুকি দিয়ে ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি করা হলেও চালের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির এই সময়ে সেরকম বিশেষ উদ্যোগ নেয়া জরুরি বলে অভিমত দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

খবর নিয়ে জানা যায়, নতুন আতপ চাল বিক্রি হচ্ছে বস্তাপ্রতি দুই হাজার ১৫০ টাকা। পুরনো আতপ এক সপ্তাহের ব্যবধানে মানভেদে ২১শ-২৩শ টাকা থেকে বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ২৩-২৬শ টাকায়। পুরো সিদ্ধ (মোটা) বিক্রি হচ্ছে ২১শ টাকা। জিরাশাইল মানভেদে ২৬-২৭শ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২৮শ-৩ হাজার টাকায়। মিনিকেট আতপ ২৩শ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২৬শ টাকা দরে।

চালের এ দামই বলে দিচ্ছে খেটে খাওয়া দরিদ্র মানুষগুলোকে কেজিপ্রতি চাল কিনতে হচ্ছে ন্যূনতম ৪২ থেকে ৪৫ টাকায়। চাল কিনতে গিয়ে তাই দিশেহারা হয়ে পড়ছেন নিম্ম আয়ের মানুষেরা। তবে এ নিয়ে এখনও কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি সরকারের দুই মন্ত্রণালয় বাণিজ্য ও খাদ্য মন্ত্রণালয়।

এদিকে, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে চট্টগ্রামের খোলাবাজারে (ওএমএস) ৩০ টাকা কেজি দরে প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে ১৫ টন চাল। যদিও এ চাল বিক্রি নিয়েও ডিলারদের বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অভিযোগ। বরাদ্দের পুরোটাই ওএমএসের উপযুক্ত ভোক্তাদের কাছে বিক্রি না করে ডিলাররা তা বাজারে বিক্রি করে দেন।

অবশ্য ওএমএস ডিলাররা বলছেন, খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ কম পাওয়ায় তারা কম বিক্রি করছেন। এম এস সবুর নামে এক ডিলার পূর্বকোণকে বলেন, ‘নগরীতে ৩৩টি পয়েন্টে ওএমএসের চাল বিক্রি করার স্থান রয়েছে। তবে বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১৫টি স্থানে। যেখানে করোনার সময় দৈনিক ১০ থেকে ১৫ টন চাল বরাদ্দ পেয়েছি সেখানে এখন দুই দিনে বরাদ্দ কেবল এক টন। বরাদ্দ পাওয়া এক টন চাল মিলছে দুই দিনে একবার। একদিন ওএমএসের ১৫ জন ডিলার পেলে পরের দিন পায় বাকি ১৫ জন। প্রতিজন ক্রেতার জন্য বরাদ্দ রয়েছে ৫ কেজি করে চাল। চালের দাম এখন একটু বেশি এবং বরাদ্দ কম হওয়ায় দ্রুতই উত্তোলিত চাল শেষ হয়ে যায়।’

কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘অন্যান্য সময়ে চালের দাম বাড়লে আমরা দেখেছি, খাদ্য অধিদপ্তর ওএমএস ও টিসিবির মাধ্যমে চাল বিক্রি করতো। কিন্তু এবার চালের দাম বাড়তি থাকা সত্ত্বেও খাদ্য অধিদপ্তর ও টিসিবি কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। ফলে নিম্ন আয়ের মানুষের চাল কেনার সামর্থ্য নেই। অন্যদিকে, ভাত হচ্ছে আমাদের প্রধান খাদ্য। ভাত ছাড়া আমাদের চলে না।

নাজের হোসাইন বলেন, সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে এখনই এ বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া দরকার। গরিব-নিম্নবিত্ত যাতে সহজে ও ন্যায্যমূল্যে চাল কিনতে পারে, সেই ব্যবস্থা দ্রুত নেয়া উচিত। বিক্রির স্পট বাড়িয়ে এবং ডিলারদের পর্যাপ্ত বরাদ্দ দিয়ে এমন দুঃসময়ে গরিব ও নিম্নবিত্তের পাশে না দাঁড়ালে কষ্টে পড়বেন অসহায় মানুষেরা।

 

পূর্বকোণ/পি-মামুন

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট