চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

বসতঘর ভাঙা ও মাটি ব্যবহারের প্রাক্কলন না থাকলেও

ঠিকাদারের চাহিদায় বসতহারা চন্দ্রঘোনার ২২ জেলে পরিবার

কর্ণফুলী নদী ভাঙন প্রতিরোধ প্রকল্প

কাপ্তাই সংবাদদাতা

৩ জানুয়ারি, ২০২১ | ৫:২৪ অপরাহ্ণ

কর্ণফুলী নদীর ভাঙন প্রতিরোধ প্রকল্পে চন্দ্রঘোনা শ্যামাপাড়া গ্রামে জেলে পরিবার অধ্যুষিত প্রায় অর্ধ কিলোমিটার এলাকায় সিসি ব্লক স্থাপনের কাজ চলছে। প্রকল্পের পরিকল্পনায় প্রকল্প এলাকার কোন বসতঘর ভাঙার প্রাক্কলন না থাকলেও বাড়তি সুবিধা আদায় করতে ঘরবাড়ি ভেঙে ভিটের মাটি খুঁড়ে প্রকল্পের ভরাট কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে বসতঘর হারিয়েছে চন্দ্রঘোনা কদমতলী ইউনিয়নের শ্যামাপাড়া গ্রামের ২২ জেলে পরিবার।

জানা যায়, দীর্ঘদিনের নদী ভাঙনের দুর্ভোগ লাঘবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে কর্ণফুলী নদীর ভাঙন প্রতিরোধে মেগা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এ কার্যক্রমের আওতায় জেলে পরিবার অধ্যুষিত চন্দ্রঘোনা শ্যামাপাড়া গ্রামে প্রায় অর্ধ কিলোমিটার এলাকায় সিসি ব্লক স্থাপন প্রকল্পের কাজ চলছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গোলাম রাব্বানী কনস্ট্রাকশন। প্রকল্পের পরিকল্পনায় বসতঘর ভাঙার কোন প্রাক্কলন না থাকলেও বাড়তি সুবিধা আদায় করতে ঘরবাড়ি ভেঙে ভিটের মাটি খুঁড়ে প্রকল্পের ভরাট কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। ঠিকাদারের স্কেভেটর লাগিয়ে ভেঙে দেয়া হয়েছে তাদের বাড়িঘর।

গ্রামবাসীর অভিযোগ, ব্লক স্থাপনে ব্যবহার করা হচ্ছে নিন্মমানের কংকর। বালির স্থলে মাটির ব্যবহারসহ প্রকল্পের কাজে ব্যাপক কারচুপি চলছে। প্রকল্পের সিসি ব্লক স্থাপনে নদীতে গ্রাম মহল্লা বরাবর সিঁড়ি তৈরিতে ও পানি নিষ্কাশনের জন্য প্লাস্টিকের পাইপ স্থাপনের ক্ষেত্রে কারচুপির আশ্রয়ে ঠিকাদারের লোকজন অন্যায়ভাবে টাকা আদায় করছে। শ্যামাপাড়া গ্রামের বিধবা বাসনা বালা দাশ জানান, যন্ত্র দিয়ে ঘর ভেঙে দিয়ে মাটি খুঁড়ে নিয়েছে। দেবরের দয়ার আশ্রয়ে সাময়িকভাবে রয়েছি। স্থায়ী বসবাসের নিশ্চয়তা নেই। গ্রামের সাধন দাশ, পরিমল দাশ, বটন দাশ, লিটন দাশ ও সাধন দাশসহ গৃহহারা অনেকে বলেন, সরকারি কাজে বাধা দিলে সেনা ও পুলিশী হামলা-মামলা হবে বলে ভয় দেখিয়ে আমাদের বাড়িঘর ভেঙে দেয়া হয়েছে। আপত্তি কিংবা বাধা দেয়ার সাহস পাইনি।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী জমির উদ্দিন জানান, প্রকল্পের কাজের স্বার্থে ঘর ভাঙতে হয়েছে। পানি নিষ্কাশনের জন্য স্থানে স্থানে প্লাস্টিকের পাইপ দেয়া হয়েছে। ব্লকের নিচে ৪ ইঞ্চি প্রথম শ্রেণীর ইটের কংকর দেয়ার নিয়ম আছে। স্থানভেদে কম বেশি ব্যবহার করতে হচ্ছে। কংকরের মানে ভাল-খারাপের মিশ্রণ রয়েছে। শ্যামা গ্রামের মাস্টার সুনীল দাশ জানান, অন্যায়ভাবে বসতঘর ভাঙার ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থার জন্য অসহায় পরিবারের পক্ষে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের নিকট আবেদন করে কোন সদুত্তর পাইনি। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট আবেদন পেশ করতে গিয়ে তিরস্কারের সুরে রাস্তায় মানববন্ধন করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

কাপ্তাই পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. শাহীন বলেন, প্রকল্পের কাজে বসতঘর ভাঙা ও মাটি ব্যবহারের কোন প্রাক্কলন নেই। পানি নিষ্কাশনেরও কোন পরিকল্পনা ছিল না। জলাবদ্ধতার দুর্যোগ দেখা দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

পূর্বকোণ/পি-মামুন

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট