চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

হাটহাজারী : ক্রীড়াঙ্গনে প্রাণ ফেরানোর চেষ্টা

মিটু বিভাস

৩ জানুয়ারি, ২০২১ | ৪:৪৩ অপরাহ্ণ

পৌষের সকালে শীতের কামড় উপেক্ষা করে মাঠে ছুটে চলছে একদল ক্ষুদে ফুটবলার। রানিং, স্ট্রেচিং শেষে ফুটবলের কারিকুরি নিয়ে নিজেদের মধ্যে লড়াইয়ে মত্ত তারা। ক্রীড়ায় সুন্দর আগামীর স্বপ্ন বুকে নিয়ে মাঠে নামা একঝাঁক শিশুর কলকাকলিতে এভাবে প্রতিদিন মুখর হয়ে থাকে হাটহাজারী কলেজ মাঠ।

 

উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সহযোগিতায় হাটহাজারী খেলোয়াড় সমিতির উদ্যোগে ফুটবলারদের এ প্রশিক্ষণ ক্যাম্প দিয়ে করোনা স্থবিরতা কাটিয়ে সচল হয়ে উঠছে স্থানীয় ক্রীড়াঙ্গন। সীমিত পরিসরে বিভিন্ন টুর্নামেন্ট আয়োজন করেও ক্রীড়াকে সচল রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় ক্রীড়া সংস্থা। ক্রীড়াঙ্গনের উর্বর ভূমি হাটহাজারী। এখান থেকে বেড়ে উঠে জাতীয় দলের হয়ে ফুটবলে মাঠ মাতিয়েছেন জাহেদ পারভেজ। জাতীয় অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে খেলছেন মোহাম্মদ জমির।

 

শুধু ফুটবল নয়, ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন, দাবাসহ বিভিন্ন টুর্নামেন্টে বছর জুড়ে সরব থাকে এ উপজেলা। উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সহযোগিতায় হাটহাজারীর বিভিন্ন ক্রীড়া সংগঠন আয়োজন করে থাকে এসব টুর্নামেন্ট। এরমধ্যে হাটহাজারী খেলোয়াড় সমিতি, জাগৃতি, ইছাপুর খেলোয়াড় সমিতি, ছিপাতলী ফুটবল একাদশ, গুমানমর্দ্দন খেলোয়াড় সমিতি, পেশকার হাট খেলোয়াড় সমিতি, কাটিরহাট একাদশ, কাটিরহাট খেলোয়াড় সমিতি, সরকারহাট মির্জাপুর খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতি, ফতেয়াবাদ ফুটবল একাদশ, মাদার্শা খেলোয়াড় সমিতিসহ বিভিন্ন সংগঠন উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তে আয়োজন করে থাকে বিভিন্ন টুর্নামেন্টের। এসব আয়োজন সফল হওয়ার পেছনে আয়োজকদের চেয়েও বড় অবদানটা দর্শকদের। উপজেলায় টুর্নামেন্ট হলেই নেমে পড়ে দর্শকের ঢল।

 

ক্রীড়ায় দর্শকের এমন আগ্রহে গর্বিত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রুহুল আমীন। তিনি বলেন, যে কোন টুর্নামেন্ট হোক, হাটহাজারীতে দর্শক থাকবে। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, ক্রীড়া বিমুখ পদাধিকার বলে ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি মোহাম্মদ রুহুল আমীন। গত দুই বছরে ক্রীড়া উন্নয়নে কোন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারেননি তিনি। উপজেলা থেকে ক্রীড়ায় আলাদা কোন বরাদ্দও পায়নি সংস্থাটি। এ প্রতিবেদককে সংস্থার সর্বশেষ নির্বাচন কবে হয়েছে এব্যাপারে সঠিক কোন তথ্য দিতে পারেননি তিনি।

সভাপতি ক্রীড়াবান্ধব না হলেও মাঠে খেলা আছে নিয়মিত। তবে গত কয়েক বছর ধরে এসব আয়োজনে স্থানীয় ক্রীড়া সংগঠকদের প্রাণবন্ত উপস্থিতি অনেকটাই কম। ২০১৭ সালে বর্তমান ক্রীড়া সংস্থা গঠনের পর থেকেই ক্রীড়া সংগঠকদের একটা অংশ নিষ্ক্রিয়। তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেগম আফসানা বিলকিসের সময়ে করা সংস্থার কমিটিতে বেশ কয়েকজন পরীক্ষিত ক্রীড়া সংগঠকদের কমিটি থেকে বাদ দেওয়ারও অভিযোগ আছে।

 

সংস্থার সাবেক সদস্য আবদুল মান্নান দৌলত বলেন, গত কয়েক বছর ধরে সংস্থার কোন কার্যক্রমে তাদের আর ডাকা হচ্ছে না। এব্যাপারে জানতে চাইলে সংস্থার বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জাফর বলেন, নতুন কমিটিতে বেশ কয়েকজন নবীন সদস্য অন্তর্ভুক্ত করার কারণে পুরোনো কিছু সদস্য বাদ পড়েছেন। তবে আমি দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে প্রত্যেকটি আয়োজনে স্থানীয় সংগঠকদের নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করেছি। বর্তমানে ক্রীড়া সংস্থার সহযোগিতায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে ফুটবল প্রশিক্ষণ কর্মসূচি এবং মহিলাদের ফ্রি কারাতে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু আছে। উপজেলায় ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে খ্যাতি আছে সংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমানে সিজেকেএস সাঁতার কমিটির সাধারণ সম্পাদক আসলাম মোর্শেদের।

 

তবে বর্তমান কমিটি দায়িত্ব নেয়ার পর তিনিও অনেকটা নিষ্ক্রিয়। সরাসরি স্বীকার না করলেও তিনি বলেন, বর্তমান কমিটি যে কোন প্রয়োজনে ডাকলে তিনি পাশে থাকবেন। তিনি আরো বলেন, বর্তমান সাধারণ সম্পাদকও ক্রীড়া প্রিয় মানুষ। তবে গত কয়েক বছরে উপজেলায় ক্রীড়ার আয়োজন অনেকটা কম। উপজেলা প্রশাসন থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা না পেলে সংস্থার কার্যক্রম গতিশীল রাখা অনেকটা কঠিন বলে জানান তিনি। উপজেলার ক্রীড়া সচল রাখতে পুরোনো সংগঠকদের এগিয়ে আসার কোন বিকল্প নেই বলেও তিনি মনে করেন।

তবে একটা ক্ষেত্রে চট্টগ্রামের অন্য উপজেলা থেকে ব্যতিক্রম হাটহাজারী। উপজেলা পরিষদের পল্লী ভবনের তিন তলায় রয়েছে খেলোয়াড়দের সুযোগ সুবিধা সম্বলিত একটি সুন্দর কার্যালয়। এখন এক ছাদের নীচে বর্তমান ও অতীত ক্রীড়া সংগঠকদের নিয়ে আসতে পারলে হাটহাজারীর ক্রীড়াঙ্গন হবে আরো উজ্জ্বল।

 

পূর্বকোণ/পি-মামুন

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট