চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

ইয়াবা কেলেংকারির শাস্তি পাননি এস আই সিদ্দিক, বদলি হয়েছেন

নাজিম মুহাম্মদ

১৬ জুন, ২০১৯ | ২:০৫ পূর্বাহ্ণ

ইয়াবা কেলেংকারির কারণে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিয়ে বদলী করা হয়েছিলো এসআই সিদ্দিকুর রহমানকে। নগর ট্রাফিকে বদলী হবার পর দুই টাউন উপ-পরিদর্শকুু (টিএসআই) সিদ্দিক ও টিএসআই বাবলু খোন্দকার মিলে ফের ইয়াবা ব্যবসা করেছেন। শুক্রবার বিকেলে র‌্যাব ও কাউন্টার টেরোরিজমের যৌথ অভিযানে টিএসআই সিদ্দিকুর রহমান ১০ হাজার ইয়াবা নিয়ে ধরা পড়ার পর পরই আত্মগোপন করেছেন রেলওয়ে থানার টিএসআই বাবলু খোন্দকার। সিদ্দিকুর জয়পুরহাট জেলার জয়পুরহাট থানার পাবর্তীপুর গ্রামের মৃত তায়েজ

উদ্দিনের ছেলে। আগ্রাবাদ সিজিএস কলোনীতে থাকতেন। এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে ৮০ পিস ইয়াবাসহ মহীরুল নামে এক পুলিশ কনস্টেবলকে গ্রেপ্তার করেছে বন্দর থানা পুলিশ। মহীরুল কর্ণফুলী থানা থেকে ইপিজেড থানায় বদলী হয়ে আসেন একমাস আসে। কর্ণফুলী থানার আগে তিনি বন্দর থানায় কর্মরত ছিলেন। ইয়াবা বিক্রির অভিযোগে এ নিয়ে দুই দিনে দুই পুলিশ সদস্য গ্রেপ্তার হলেন।
অনুসন্ধানে জানাযায়, টিএসআই সিদ্দিকুর রহমান ২০১৫ সালের ২৮ নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ১৩ মে পর্যন্ত প্রায় চার বছর কর্ণফুলী থানার শিকলবাহা পুলিশ ফাঁড়িতে কর্মরত ছিলেন। মূলত ঐ সময় তিনি ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িত হন। ইয়াবা সংক্রান্ত বিষয়ে তার বিরুদ্ধে এর আগেও অভিযোগ উঠেছিলো। বিষয়টি জানতে পেরে তাকে সম্প্রতি কর্ণফুলী থানা থেকে বদলি করা হয়।
জানা যায়, চলতি বছরের মার্চ মাসে মইজ্জ্যার টেক চেকপোস্টে রাজিয়া বেগম ও তার ছেলে তানভীর হোসেনকে এক হাজার পিস ইয়াবা নিয়ে আটক করা হয়েছিলো। তাদের বাড়ি মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ে। দুইজনকে আটক করার বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে আর্থিক সুবিধা নিতে রাজিয়াকে ছেড়ে দিয়ে তানভীরকে থানায় না নিয়ে শিকলবাহা পুলিশ ফাঁড়িতে আটকে রাখেন এস আই সিদ্দিকুর ও এএসআই বাপ্পী দে। পরদিন বিষয়টি জানাজানি হলে কর্ণফুলী থানা পুলিশ রাজিয়াকে ফের আটক করে। তানভীরকে শিকলবাহা ফাঁড়ি থেকে থানায় নিয়ে আসে। পরে রাজিয়া ও তানভীরের বিরুদ্ধে কর্ণফুলী থানায় নিয়মিত মামলা দায়ের হয়। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানলেও সিদ্দিকুরের বিরুদ্ধে কোন শাস্তিমুলক ব্যবস্থা না নিয়ে তাকে ট্রাফিকের বন্দর জোনে বদলী করা হয়। বদলী হয়ে নগরীতে এসে সিদ্দিকুর যথারীতি ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে যান। বদলীর একমাসের মাথায় ইয়াবা নিয়ে ধরা পড়েন সিদ্দিকুর। একই সময়ে এএস আই বাপ্পী দেরও বদলী হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিকলবাহার এলাকার স্থানীয় লোকজন জানান, সিদ্দিকুর শিকলাবাহা ফাঁড়িতে কর্মরত থাকাকালীন কর্ণফুলী নদীর বিভিন্ন ঘাটে ইয়াবা খালাসের ঘটনা বাড়ে।
এদিকে টিএসআই বাবলুর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ জানিয়ে উর্ধ্বতন কর্র্তৃপক্ষের কাছে রেলওয়ে থানা থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। সিদ্দিকুর রহমানের কাছ থেকে ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনায় গতকাল শনিবার দুপুরে ডবলমুরিং থানায় দুই টিএসআইকে আসামি করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করেছেন সিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগের এসআই সঞ্জয় গুহ।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, শুক্রবার সন্ধ্যে সাতটার সময় সিদ্দিকুর রহমান তার মোটর সাইকেলের (চট্টমেট্টো-১৪-৯৭১১) সিটের জালির ভিতরে একটি শপিং ব্যাগে ইয়াবাগুলো নিয়ে যাচ্ছিলেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব ও কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট যৌথ অভিযান চালিয়ে ১০ হাজার ইয়াবাসহ টিএসআই সিদ্দিকুর রহমানকে আটক করে। এ সময় তার কাছ থেকে ৮০ হাজার টাকাও উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে টিএসআই সিদ্দিকুর রহমান জানান, রেলওয়ে থানার টিএসআই বাবলু খোন্দকার ও অজ্ঞাতনামা আরো একজন ব্যক্তির কাছ থেকে তিনি ইয়াবাগুলো নিয়েছেন। তারা পুলিশের পোশাকে মোটরসাইকেল নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে নগরীতে ইয়াবা ব্যবসা করছেন। সিদ্দিকুর ধরা পড়ার পর পরই আত্মগোপন করেন টিএসআই বাবলু খোন্দকার।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেড় বছরের বেশি সময় ধরে জিআরপি থানায় টিএসআই হিসাবে কর্মরত আছেন বাবলু খোন্দকার। তার পরিবার ঢাকায় থাকে। রেলে ডিউটি করার সুবাদে তিনি নিয়মিত ঢাকা-চট্টগ্রাম আসা যাওয়া করতেন। ধারনা করা হচ্ছে- বাবলু ডিউটি করাকালীন সময়ে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় ইয়াবা আনা নেয়া করতেন।
জানতে চাইলে জিআরপি থানার পরিদর্শক (ওসি) মোস্তাফিজ ভূঁইয়া জানান, টিএসআই সিদ্দিকুর শুক্রবার নিয়মিত ডিউটিতে অনুপস্থিত ছিলেন। শনিবারও (গতকাল) তিনি ডিউটিতে আসেননি। টিএসআই সিদ্দিকুর রহমান গ্রেপ্তার হবার পর থেকে বাবলুকে দেখা যায়নি। কারো ব্যক্তিগত অপরাধের দায়ভার প্রতিষ্ঠান নেবে না বলে জানান ওসি মোস্তাফিজ ।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট