চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

নতুন বছর নিয়ে বিশিষ্টজনের প্রত্যাশা

নিজস্ব প্রতিবেদক

১ জানুয়ারি, ২০২১ | ১:৪৩ অপরাহ্ণ

২০২১-এর প্রথম দিন আজ। নতুন বছর নিয়ে সবারই একটি প্রত্যাশা থাকে। নতুন বছর নিয়ে বিশিষ্টজনের প্রত্যাশাই পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-

খোরশেদ আলম সুজন, চসিক প্রশাসক

 

নতুন বছরের প্রত্যাশা প্রসঙ্গে পূর্বকোণকে বলেন, আল্লাহ পাক নগরবাসীসহ দেশবাসীকে করোনার করালগ্রাস থেকে রক্ষা করুক। আমার স্বপ্ন আছে, বন্দরনগরী পরিচ্ছন্ন, স্বাস্থ্যকর এবং মানবিক শহর হিসেবে গড়ে উঠুক। গত ২৬ বছর ধরে আল্লাহ পবিত্র হজ করার সুযোগ দিয়েছিলেন। এবার সুযোগ দেননি তাই যেতে পারিনি। আল্লাহ এর কাছে প্রার্থনা সবকিছু যেন স্বাভাবিক করে দেন। সবাইকে করোনামুক্ত করে দেন।

‘গত বছরে প্রাপ্তির মধ্যে ছিল বিনা কারণে প্রশাসক মনোনীত হওয়া।’ আমার কাছ থেকে নগরবাসী কী পেয়েছে তা তারা বলবেন। আমি যখন দায়িত্ব নিই তখন ‘ঘরে থাকুন, নিরাপদে থাকুন’ এই স্লোগান সবার মুখে মুখে। কিন্তু দায়িত্ব নেয়ার পর আমি ঘরে বসে থাকিনি। আমার যতটুকু সামর্থ্য আছে নগরবাসীর মঙ্গলের জন্য ব্যয় করেছি। প্রতিটি মিনিটকে গুরুত্ব দিয়েছি। এই সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে যতটুকু করতে পেরেছি এর মধ্যে যদি ভাল কিছু থাকে তা নগরবাসীকে উৎসর্গ করলাম। আর ব্যর্থতার দায়ভার আমার। কারণ এমন একটা পরিস্থিতিতে দায়িত্ব নিয়েছি যখন ঘরে বসে থাকাটাই নিরাপদ। হাজারো সীমাবদ্ধতার মাঝে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সেবা কাজে কিছুটা পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেছি। এখনো করে যাচ্ছি। এর মাধ্যমে সেবার মান কতটুকু বেড়েছে তা নগরবাসীই মূল্যায়ন করবেন।

 

প্রফেসর ড. মুহাম্মদ সিকান্দার খান উপাচার্য, ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি

করোনাকে এক সময় আমাদের জয় করা হয়ে যাবে। পৃথিবীতে কিছুদিন পর পর দুর্যোগ আসে। প্রত্যেক দুর্যোগ থেকে আমাদের শিক্ষা নেয়ার আছে। করোনাকে মোকাবেলা করতে গিয়ে আমাদের মাঝে এক ধরনের সুসম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছে। আগামী বছর মানুষ করোনামুক্ত স্বাভাবিক জীবনের স্বাদ নিতে পারবে, এটাই প্রত্যাশা করছি।
ইংরেজিতে একটি কবিতা রয়েছে। যার বাংলা অর্থ হচ্ছে- ‘মৃত্যুতে সবাই সমান হয়ে যায়।’ মৃত্যুতে সমান হওয়ার আগে, আমরা যে সবাই সমান ছিলাম, সমান আছি এটা প্রমাণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে মানুষের কাজ। মানুষ কখনো একে অন্যকে ঘৃণা করে উন্নতি করতে পারবে না। আমাদের উন্নতি করতে হলে আমাদের চার পাশের সবাইকে নিয়ে করতে হবে। এটা নিজের জন্য যেমন সত্য, পুরো দেশের জন্যও সত্য। এখন থেকে যদি আমরা পারস্পরিক সহানুভূতিবোধ বৃদ্ধি করি, এটাই হবে একটি কাজের কাজ। করোনা শেষ হলে এই সহানুভূতিবোধ আমাদের আরো উচ্চধাপে নিয়ে যাবে।
হয়তো কিছুপর করোনার ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে। কিন্তু আমরা যদি প্রথমে সবচেয়ে বেশি অর্থবৃত্ত সম্পন্নদের ভ্যাকসিন দিই, এরপর তার পরের ধাপের অর্থবৃত্তদের ভ্যাকসিন দিই এবং সর্বশেষে দরিদ্রদের ভ্যাকসিন দিই তাহলে তো হবে না। ওই দরিদ্ররাই তো করোনায় বেশি আক্রান্ত হবে এবং তাদের থেকে আবার সবার কাছে ছড়িয়ে পড়বে। তাই ভ্যাকসিন সবার মাঝে সমান ভাবে বিতরণ করতে হবে।

মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী,  ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ

নতুন বছরের প্রত্যাশা হল বাংলাদেশে উন্নয়ন এবং গণতন্ত্রের যে অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা চলছে তা যেন অব্যাহত থাকে। । আমি চাই মানুষের দুঃখ বেদনা মুছে যাক। বাংলাদেশ এবং বিশ্ববাসী সুখে-শান্তিতে থাকুক। করোনামুক্ত হোক। করোনার ছোবল থেকে সবাই রক্ষা পাক। বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে অনেকেই মৃত্যুবরণ করেছেন। করোনার কারণে অনেক সহযোদ্ধাকে হারিয়েছি। তাদের হারানোর বেদনা অত্যন্ত করুণ। তাদের হারিয়ে আমি দুঃখিত, শোকার্ত। আন্দোলন সংগ্রামে তারা আমাদের সহযোদ্ধা ছিলেন।

প্রাপ্তির কথা বলে শেষ করা যাবে না। শেখ হাসিনা গনতন্ত্রকে মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ করছেন। সোনার বাংলার স্বাদ মানুষের ঘরে পৌঁছে দিচ্ছেন। আজ পদ্মা পাড়ের মানুষ উৎসব করছে। রোহিঙ্গারা ভাসানচরে যাচ্ছে। মানুষ সুখে থাকুক, শান্তিতে থাকুক। সবার ঘরে আজ হাসি। একসময় আমরা গণতন্ত্রকে হারিয়ে ফেলেছিলাম। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তা ফিরে পেয়েছি। চট্টগ্রামে ফ্লাইওভার হয়েছে। টানেল হচ্ছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হচ্ছে। এসব কাজ যখন সমাপ্ত হবে তখন মানুষ বুঝবে, তারা যা চেয়েছেন তার দ্বিগুন পেয়েছেন। আজ মধ্যম আয়ের দেশ থেকে উন্নত দেশে উন্নীত হয়েছি। এটা বড় প্রাপ্তি।

অপ্রাপ্তিও কম নয়, বঙ্গবন্ধু আমাদের হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা এখনো পুরোপুরিভাবে গড়ে তুলতে পারিনি। স্বাধীনতা অর্জনের পর স্বৈরশাসনের কারণে আমরা ২০ টি বছর হারিয়েছি। সেই সময় যদি আমরা পেতাম তাহলে বাংলাদেশ আরো অনেক বেশি এগিয়ে যেত। অগণতান্ত্রিক অবস্থায় ২০টি বছর চলে গেল। এখনো এদেশে মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে চায়। তারা স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও বুঝতে পারেনি এদেশের মানুষ কি চায়। তারা আমার পিতার ভাস্কর্য ভাঙচুর করতে চায়। এরা কারা। এর ৭১ এর পরাজিত শত্রু। যারা এখনো স্বাধীনতাকে মানতে পারেনি। যারা ৩০ লাখ ভাইকে হত্যা করেছে। তিন লাখ মা-বোনের ইজ্জত লুণ্ঠন করেছে। সেই মৌলবাদ, জঙ্গিবাদকে এখনো আমরা দূর করতে পারিনি। এটাই আমার অপ্রাপ্তি। আগামি ২৭ জানুয়ারি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। আশা করি ৭১ এর অবিনাশী বীর মুক্তিযোদ্ধা এম রেজাউল করিম চৌধুরীকে নির্বাচিত করে জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ হঠানোর কাজে চট্টগ্রামবাসী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করবে।

 

ডা. শাহাদাত হোসেন, আহ্বায়ক, মহানগর বিএনপি

ঘটনাবহুল ২০২০ সাল আমাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছে। সুন্দর আগামীর প্রত্যাশা নিয়ে ২০২১ সালকে আমরা স্বাগত জানাই। গতকাল বুধবার দৈনিক পূর্বকোণকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি একথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘করোনা মহামারী এবং রাজনীতির বিভিন্ন চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে ২০২১ সালকে আমরা এমন একটি বছর হিসেবে দেখতে চাই, যেখানে মানুষ তাদের গণতান্ত্রিক অধিকারগুলো চর্চা এবং তাদের ভোটের অধিকার ফিরে পাবে। উৎসবমুখর পরিবেশে চসিক নির্বাচনে ভোট দিতে পারবে। কারণ বিগত বছরগুলোতে নির্বাচনের নামে প্রহসন করা হয়েছে। মানুষের ভোটাধিকার হরণ, মৌলিক অধিকার, কথা বলার স্বাধীনতা ও বিরোধী দলসহ সামাজিক সংগঠনগুলোর দাবি নিয়ে মাঠে কাজ করতে বাধা দেওয়া হয়েছে। দিনের ভোট রাতে নিয়েছে। ইভিএমের নামে মানুষের সাথে প্রতারণা করা হয়েছে। ইভিএমে মানুষের নিজস্ব মতামতের প্রতিফলন ঘটে না। ইভিএমে পরিকল্পিতভাবে যে সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয় তা সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে পারে না। এখানে ধানের শীষে ভোট দিলে তা চলে যায় নৌকা প্রতীকে। এসব বন্ধ করতে হবে।’

ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আইসিটি অ্যাক্টের নামে সরকার কৌশলে সংবাদপত্রের টুটি চেপে ধরেছে। গণমাধ্যমের নিজস্ব স্বকীয়তা ও স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে। করোনা মহামারীর মধ্যে মানুষ তাদের চিকিৎসা পাওয়ার মৌলিক অধিকারগুলো ঠিকমতো পাচ্ছে না। সরকারের সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবে তা ব্যাহত হয়েছে। সাধারণ মানুষ তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এমতাবস্থায় করোনার টিকা নিয়ে কোন একটি দেশের উপর নির্ভর না করে অন্যান্য দেশ থেকে সংগ্রহের মাধ্যমে মানুষের জন্য সহজলভ্য করে দিতে হবে। বেসরকারি খাতে দিয়ে হলেও মানুষ যাতে এই টিকা সহজভাবে পায় সেটাই হবে নতুন বছরের প্রত্যাশা।’

ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘নতুন বছরে আমার আরো প্রত্যাশা থাকবে, মানুষ যেন তাদের মৌলিক অধিকার, চিকিৎসা সেবার সুবিধা, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পরিবেশ পায়। বিরোধীদল যাতে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনে নিশ্চয়তা পায়। পুলিশ ও প্রশাসন যন্ত্র দিয়ে সরকার বিরোধীদলের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। এ ধরনের অগণতান্ত্রিক পরিবেশ আমরা চাই না। ধারাবাহিকভাবে দেশের উন্নয়ন হবে, উন্নয়নকে আমরা সমর্থন করি। কিন্তু উন্নয়নের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়ে যাচ্ছে। আমরা তার বিরোধিতা করছি। এসব লুটপাটকারীদের চিহ্নিত করে যে টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে তা ফেরত আনার ব্যবস্থা নিতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর হচ্ছে দেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি। এই বন্দর চট্টগ্রামে হলেও এর আশেপাশের এলাকার যাদের ভূমি অধিগ্রহণ করে বন্দর গড়ে ওঠেছে ওইসব এলাকার মানুষ বন্দরে চাকরি পায় না। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে প্রায় দুই হাজার পদ খালি রয়েছে। এতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চট্টগ্রামের মানুষকে নিয়োগ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। চট্টগ্রাম বাঁচলেই বাংলাদেশ বাঁচবে। চট্টগ্রামকে একটি সুন্দর, স্বাস্থ্য সম্মত পর্যটন নগরী, পরিচ্ছন্ন, আধুনিক বাণিজ্য নগরী হিসাবে প্রতিষ্ঠার জন্য প্রত্যাশা রাখি। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে সকল বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। যে লক্ষ্য নিয়ে ১৯৭১ বীর মুক্তিযোদ্ধারা আত্মত্যাগ করেছেন তাদের ত্যাগ যেন বৃথা না যায়।’

 

মাহবুবুল আলম, প্রেসিডেন্ট, চিটাগাং চেম্বার

বিদায়ী ২০২০ সালের বছরটি ছিল সারা বিশ্বের ব্যবসায়ীদের জন্য চ্যালেঞ্জিং বছর। করোনার মহামারীর কারণে সব শ্রেণির ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাংলাদেশ তথা চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরাও এর বাইরে ছিল না। এতোসব প্রতিকূলতা ও বাধা ডিঙিয়ে ব্যবসায়ীরা চেষ্টা করে গেছে কোনভাবে টিকে থাকতে। জীবন ও জীবিকার জন্য জীবনবাজি রেখে পরিশ্রম করে গেছে। চেষ্টা করেছে দেশের অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখতে। এর মাঝেও আমরা অনেক প্রথিতযশা ব্যবসায়ীকে হারিয়েছি।

এমন পরিস্থিতি মোকাবেলায় ব্যবসায়ীদের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছে সেটির মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা অনেকটা পথে বসা থেকে রক্ষা পেল। এই প্রণোদনা প্যাকেজের ফলে ব্যবসায়ীদের মনে সাহস এসেছে এবং ঘুরে দাঁড়ানোর একটা সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে ব্যবসায়ীরা কৃতজ্ঞ।

তবে নতুন বছরকে ব্যবসায়ীরা সম্ভাবনা ও ঘুরে দাঁড়ানোর বছর হিসেবে দেখছেন। কারণ ইতিমধ্যে করোনার ভ্যাকসিন আসার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। ২০২১ সালে এই ভ্যাকসিনে করোনা দূর হয়ে আবার ব্যবসা চাঙা হবে এমনটা প্রত্যাশা সকল ব্যবসায়ীদের। একই সাথে সরকার থেকে আরো ব্যবসাবান্ধব পদক্ষেপ কামনা করে ব্যবসায়ীরা।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট