চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

তিন দশকে বিলুপ্ত ৫৬ প্রজাতির মাছ

মোহাম্মদ আলী 

২৯ ডিসেম্বর, ২০২০ | ১:১৬ অপরাহ্ণ

বিগত শতাব্দীর ৯০ দশকেও সুস্বাদু ভেটকি, মেনি, তপসি, মধু পাবদা, চান্দা, কাকিলা, রিটাসহ প্রায় ২১৬ প্রজাতির মাছের ভরপুর ছিল হালদা ও কর্ণফুলী নদী। কিন্তু তিন দশকের ব্যবধানে এ দুইটি নদীতে প্রায় বিলুপ্ত হয়েছে ৫৬ প্রজাতির মাছ। নদীতে পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ১৬০ প্রজাতির মাছ। এখন মেলে না ভেটকি, মেনি, তপসি, মধু পাবদা, চান্দা, কাকিলা, রিটাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ।

বর্তমানে যেসব মাছ পাওয়া যাচ্ছে তার সংখ্যাও তুলনামূলক কমে গেছে। দূষণ, দখল ও বাঁধ নির্মাণসহ নানা সমস্যার কারণে মাছের এ সংকট তৈরি হয়। এ প্রসঙ্গে হালদা বিশেষজ্ঞ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর ড. মো. মনজুরুল কিবরীয়া দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘কর্ণফুলীতে প্রায় ১৪০ প্রজাতির মাছ ছিল। এর মধ্যে বিলুপ্ত প্রায় ৩০ প্রজাতির মাছ। অপরদিকে হালদায় ৭৬ প্রজাতির মাছের মধ্যে ২৬ প্রজাতি বিলুপ্ত হয়েছে। মূলত নদী দূষণ, দখলসহ নানা কারণে নদীতে মাছের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে।’

নদী সংশ্লিষ্ট লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মিঠা, মিশ্র (মিঠা ও লবণাক্ত) ও সামুদ্রিক (নোনা) প্রজনন মাছের বিচরণক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত এ নদীতে তিন দশক আগেও প্রায় ১৪০ প্রজাতির মাছ পাওয়া যেত। এর মধ্যে মিঠা পানির ৬৬ প্রজাতি, মোহনায় লবণাক্ত পানিতে ৫৯ প্রজাতি এবং সামদ্রিক নোনা পানির ১৫ প্রজাতির মাছ ছিল। এর মধ্যে মিঠা পানির ২০ প্রজাতি এবং মিশ্র পানির ১০ প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত প্রায়। অর্থাৎ গত প্রায় তিন দশকের মধ্যে প্রায় ৩০ প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হওয়ার পথে। এ কারণে কর্ণফুলী নদীর জেলেদের দুর্দিন চলছে।

দূষণের কারণে এ নদীর পরিবেশও বিপন্ন হওয়ার পথে। এরই মধ্যে বিলুপ্ত হওয়ার পথে নদীর অনেক উদ্ভিদ ও অন্যান্য প্রাণী প্রজাতি। মাছের প্রজনন ও বংশ বিস্তারে সমস্যা হচ্ছে। দূষণ ছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান শিকার কর্ণফুলী নদী। কর্ণফুলীর শাখা নদী-খালে স্লুইস গেট নির্মাণে নাব্যতা হ্রাস ও কাপ্তাই বাঁধে পানি প্রবাহ বাধা পেয়ে নদীর স্বাভাবিক গতি কমে গেছে। দখল হয়েছে ব্যাপকভাবে, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ইতোমধ্যে প্রায় ২৫০০ দখলদার চিহ্নিত করেছে। এতে প্রতি বছরই নদীতে মাছের পরিমাণ কমে যাচ্ছে।

হালদা : হালদা পৃথিবীর একমাত্র জোয়ার-ভাটার নদী, যেখান থেকে সরাসরি রুই জাতীয় মাছের নিষিক্ত ডিম সংগ্রহ করা হয়। পৃথিবীর আর কোন জোয়ার-ভাটার নদী থেকে সরাসরি ডিম আহরণের নজির আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। এ কারণে হালদা নদী বাংলাদেশের জন্য এক বৈশ্বিক উত্তরাধিকারও বটে।

পরিসংখ্যানে জানা গেছে, হালদা নদীতে ৭৬ প্রজাতির মাছ পাওয়া যেত। কিন্তু দূষণসহ নানা কারণে মাছ কমে ৫০ প্রজাতিতে নেমে এসেছে।

চট্টগ্রামের হালদা, কর্ণফুলী এবং সাঙ্গু নদীতে শুশুক বা ডলফিনের আগমন, বিস্তৃতি এবং অবস্থান এখনো রহস্যাবৃত। ডলফিনের নামকরণ, ইতিহাস ও বিস্তার পর্যালোচনা করে জানা যায়, ভারতের গঙ্গা ও এর শাখা নদীগুলোতে এদের বাসস্থান রয়েছে। ভৌগলিকভাবে হালদা, কর্ণফুলী এবং সাঙ্গু নদীর অবস্থান অনুযায়ী গঙ্গা ও এর শাখা নদীগুলোর সাথে চট্টগ্রামের এই নদীগুলোর কোন সংযোগ নেই। এমনকি অতীতেও সংযুক্ত থাকার কোন প্রমাণ এ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। আইইউসিএন- এর রেড লিস্ট ২০১২ অনুযায়ী এই নদীর ডলফিনগুলোকে আলাদাভাবে ‘অতি বিপন্ন’ তালিকাভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে। হালদা নদী এ গুরুত্বপূর্ণ জলজ স্তন্যপায়ী প্রাণী প্রজাতির এক আদর্শ আবাসস্থল। দূষণ ও খাদ্যাভাবের ফলে হালদা থেকেও আশঙ্কাজনক ভাবে এদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। তাই বিশ্বের অতি বিপন্ন জলজ স্তন্যপায়ী প্রাণীর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য হালদা নদীকে সংরক্ষণ এবং ডলফিনের অভয়াশ্রম ঘোষণা করা অত্যন্ত জরুরী।

সাঙ্গু : মৎস্য সম্পদের ক্ষেত্রে সাঙ্গু নদীর উপর একটি খন্ডিত গবেষণা পত্রে ৩৬টি মৎস্য প্রজাতির অস্থিত্ব উল্লেখ থাকলেও স্থানীয়দের প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণে এ নদী এখনো পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এ নদীতে এক সময় বিপুল পরিমাণের মহাশোল পাওয়া যেত। কিন্তু এটিও এখন বিলুপ্তির পথে।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট