চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

নুরুর সাম্রাজ্যে পুলিশের হানা

নাজিম মুহাম্মদ 

২৭ ডিসেম্বর, ২০২০ | ১:৫২ অপরাহ্ণ

আনুমানিক ত্রিশ বছরের যুবক নুর আলম। আকবরশাহ থানার নাছিয়া ঘোনা এলাকায় মানুষের কাছে নুরু নামে পরিচিত। থাকেন আকবরশাহ থানার নাছিয়া ঘোনার পাহাড়ি এলাকায়। সরকারি পাহাড় কেটেই বিলাসবহুল জীবন যাপন করেন তিনি।  ১৮ মামলার আসামি নুরু পাহাড় দখল-মাদক ব্যবসা অস্ত্র-বেচাকেনা কাঠপাচার হেন কাজ নেই করেন না। তার রয়েছে নিজস্ব বাহিনী। দীর্ঘদিন পুলিশ তাকে খুঁজলেও কখনো দেখা পায়নি। রীতিমতো লোহার গেইট নির্মাণ করে তালা লাগিয়ে দিনরাত সমান তালে পাহাড় কেটে গড়ে তুলেছে বিশাল সাম্রাজ্য। দীর্ঘদিন পর সাম্রাজ্যে অভিযান চালালে বেজায় রেগে যান নুরু। নিজেই নেতৃত্ব দিয়ে রীতিমতো সদলবলে হামলা করে শতাধিক পুলিশের ওপর। পুলিশও তাদের ছত্রভঙ্গ করতে প্রায় পঞ্চাশ রাউন্ডের বেশি শর্টগানের ফাঁকা গুলি ছুড়ে। ঘটনাস্থল থেকে আজম নামে নুরুর এক সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

গতকাল শনিবার বেলা তিনটায় সরেজমিন নাছিয়া ঘোনা এলাকায়  গেলে দেখা মেলে নুরুর বিশাল সাম্রাজ্যের। আকবর শাহ থানা, নগর গোয়েন্দা বিভাগ (বন্দর জোন) ও রিজার্ভের শতাধিক পুলিশ সদস্য  অভিযানে যায় পূর্ব ফিরোজশাহ কলোনির নাছিয়া ঘোনা এলাকায়। পাহাড় কেটে চলাচলের পথ তৈরি করেছে নুরু। ঢালু পাহাড়ি পথ পার হতেই দেখা মিললো ঈসা ভবন নামে বিশাল লোহার গেইট। পার হতেই  রয়েছে একটি মসজিদ, আল মাদরাসাতুল ইসলামিয়া দারুল কুরআন ও এতিমখানা লেখা আরো একটি বিশাল গেইট।

স্বাভাবিক দৃষ্টিতে দেখলে মনে হবে কোন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। বাস্তবতা হচ্ছে এতিমখানায় কোন এতিম নেই।  মসজিদের ভেতরে দুজন লোক ঘুমিয়ে আছে। মূলত মসজিদ আর এতিমখানার সাইনবোর্ডের আড়ালে সরকারি পাহাড় কেটে নুরু গড়ে তুলেছে নিজের সাম্রাজ্য। মসজিদের পেছনে রয়েছে কয়েকশ কবুতরের একটি খামার, রয়েছে গরু-ছাগলেরও খামার। নাম দেয়া হয়েছে ইছা ভবন এগ্রোফার্ম। লালমাটির পাহাড়ের বুক কেটে একপাশে তৈরি করা হয়েছে ফার্নিচার তৈরির কারখানা। সেখানে বসানো হয়েছে মিনি ইলেক্ট্রিক করাত কল। থরে থরে সাজানো রয়েছে সেগুন কাঠের সাইজ করা কাঠ। স্বাভাবিক দৃষ্টিতে দেখলে বোঝা যায় কিছুক্ষণ আগেও সেখানে কোন কাঠ মিস্ত্রি কাজ করেছে।

কয়েক কদম এগিয়ে গেলেই দুই পাহাড়ের মাঝখানে মাটির সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতেই দেখা মিললো কয়েকশো বাড়ি। যেটি নুরুর কলোনি হিসাবে পরিচিত। কলোনিতে প্রবেশের মুখেই রয়েছে নুরুর দৃষ্টিনন্দন বাড়ি। বাসার ভেতরে দামি টাইলস  আর  সোফা। বেলা সাড়ে তিনটা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত পাহাড়তলী জোনের সহকারী কমিশনার আরিফ হোসেনের নেতৃতে শতাধিক পুলিশ সদস্য চষে বেড়ালেও কোথাও দেখা মেলিনি নুরুর। বেলা পাঁচটার দিকে পুলিশ সদস্যরা যখন নুরুর খামার এলাকায় পৌঁছে তখন হঠাৎ করে চারদিক থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে বৃষ্টির মতো ইট পাটকেল মারা শুরু হয়। প্রায় আধ ঘন্টারও বেশি সময় ধরে পুলিশের সাথে তাদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলে। নুরুর  নেতৃত্বে পুলিশের অভিযানে হামলা চালানো হয়।

নগর পুলিশের পশ্চিম জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার হুমায়ন কবির জানান, নুরু পেশাদার সন্ত্রাসী। কাঠ পাচার, ইয়াবা ব্যবসা, অস্ত্র ব্যবসা এমন কোন কাজ নেই নুরু করে না। নাছিয়া ঘোনা এলাকায় পাহাড় কেটে নিজের সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে। তার বিরুদ্ধে আকবরশাহ থানায়  মাদক, অস্ত্র ও কাঠ পাচার আইনে আঠারোটি মামলা রয়েছে। তাকে ধরতে গেলে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল ছঁড়ে।

এডিসি হুমায়ন কবির বলেন, আশপাশের সাধারণ মানুষের কথা ভেবে আমরা ফাঁকা ফায়ার করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছি। তবে নুরুকে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক যুবক জানান, পুলিশ আসার খবর অনেক আগেই পেয়ে যায় নুরু। স্থানে স্থানে তার লোকজন রয়েছে। পুলিশ আসার আগেই খবর পৌঁছে যায় তার কাছে। নুরুর বাবা ধনু মিয়া নাছিয়া ঘোনা এলাকায় এসেছে অনেক আগে। নুরুর জন্ম, বেড়ে উঠা এখানেই। এ এলাকায় নুরুর কথা ছাড়া  ধুলোও নড়ে না। এক নম্বর ঝিল এলাকায় সরকারি পাহাড় কেটে প্লট বিক্রি করছে নুরু। গাউসিয়া হাউজিং ব্যানারে এসব প্লট বিক্রির ব্যবসা করে নুরু।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট