চট্টগ্রাম বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৪

প্রিপেইড মিটার নেই ৬০% বিদ্যুৎ গ্রাহকের

তাসনীম হাসান

২৫ ডিসেম্বর, ২০২০ | ১:২৭ অপরাহ্ণ

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) চট্টগ্রামের ৬০ শতাংশ গ্রাহক এখনো প্রিপেইড মিটারের আওতায় আসেনি। এখন যেসব প্রিপেইড মিটার আছে সেগুলোর বেশিরভাগেরই স্থাপন কাজ শেষ হয় তাও প্রায় দুই বছর আগে। এরপর নতুন করে প্রিপেইড মিটার স্থাপনে কোনো প্রকল্প পায়নি সংস্থাটি। ফলে ম্যানুয়েল মিটার ব্যবহার করা বৃহৎ সংখ্যক গ্রাহকের ভোগান্তি লেগেই আছে।

চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও তিন পার্বত্য জেলা নিয়ে বিতরণ দক্ষিণাঞ্চল হিসাবে পরিচিত পিডিবি, চট্টগ্রাম। এই পাঁচ জেলায় মোট সাড়ে ১১ লাখ গ্রাহক রয়েছেন। এদের মধ্যে মাত্র ৪ লাখ ৬০ হাজার গ্রাহক প্রিপেইড মিটারের আওতায় এসেছেন। অর্থাৎ মাত্র ৪০ শতাংশ গ্রাহক প্রিপেইড মিটারের সুবিধা পাচ্ছেন। আবার এই গ্রাহকদের প্রায়ই চট্টগ্রাম নগরীর বাসিন্দা। প্রিপেইড মিটার নিয়ে বেশ কিছু অভিযোগ থাকলেও গ্রাহকেরা আগের তুলনায় সাচ্ছন্দ্যে আছেন। এই মিটারের কারণে ভুতুড়ে বিল থেকে তাঁরা রেহাই পেয়েছেন। পাশাপাশি বিদ্যুৎ খরচেও সাশ্রয়ী হয়েছেন। শুধু গ্রাহকেরা নন, পিডিবিও প্রিপেইড মিটারের কারণে সুবিধায় আছে। কারণ, প্রিপেইড মিটারে গ্রাহককে আগে টাকা রিচার্জ করতে হয়; তারপর বিদ্যুৎ ব্যবহার করা যায়। ফলে যেসব এলাকায় প্রিপেইড মিটার আছে সেখানে বিল আদায়ের জন্য পিডিবির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মানুষের দুয়ারে দুয়ারে দৌঁড়তে হয় না। এ ছাড়া ওই সব এলাকায় বিদ্যুৎ চুরি আর অপচয়ও কমে গেছে। বর্তমানে পিডিবির ২৩৫ কোটি টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া আছে। সেসবের সিংহভাগই ম্যানুয়েল গ্রাহকের কাছ থেকে পাওনা। ৬০ শতাংশ গ্রাহক আওতার বাইরে।

পিডিবির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পিডিবি চট্টগ্রামের অধীনে সবমিলিয়ে ২১টি বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ রয়েছে। এর মধ্যে ১২টির অবস্থানই চট্টগ্রাম নগরীতে। ২০১৬ সালের ২৮ অক্টোবর ‘প্রিপেমেন্ট মিটারিং প্রজেক্ট ফর ডিস্ট্রিবিউশন সাউদার্ন জোন’ এর আওতায় চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ, স্টেডিয়াম, পাহাড়তলী ও খুলশী এই চার বিতরণ বিভাগে প্রিপেইড মিটার স্থাপনের কাজ শুরু করা হয়। প্রথম পর্যায়ে চারটি বিভাগে ১ লাখ ৩৯ হাজার গ্রাহককে প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনা হয়। এরপর ধাপে ধাপে পাথরঘাটা, কালুরঘাট, ষোলশহর, বাকলিয়া, মাদারবাড়ী, হালিশহর, নিউমুরিং, রামপুর বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের গ্রাহকেরা প্রিপেইড মিটারের আওতায় আসতে থাকে। এর মধ্যে দ্বিতীয় পর্যায়ে দেড় লাখ এবং তৃতীয় পর্যায়ে ১ লাখ গ্রাহক প্রিপেইড মিটার পান। এই ৩ লাখ ৮৯ হাজার প্রিপেইড মিটার স্থাপন কাজ শেষ হয় ২০১৮ সালের শুরুতেই। এরপর মাঝে মাঝে কিছু কিছু মিটার স্থাপন করা হয়। এসব মিলিয়ে বর্তমানে ৪ লাখ ৬০ হাজার গ্রাহক এই মিটার পেয়েছেন। ১৪০ কোটি টাকায় এসব মিটার কেনা হয়েছে চীন থেকে। সেদেশের ‘হেক্সিং ইলেকট্রিক্যাল কোম্পানি’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান এসব মিটার সরবরাহ করে।

চান্দগাঁওয়ের সোনালি আবাসিক এলাকার বাসিন্দা কামরুল হাসান পূর্বকোণকে বলেন, প্রিপেইড মিটারে অতিরিক্ত লোড না নেওয়া, হঠাৎ ব্যাটারির চার্জ নষ্ট ও লক হয়ে যাওয়াসহ নানা ভোগান্তি আছে বটে। এরপরেও এই মিটারের ফলে আমরা ভুতুড়ে বিল থেকে রেহাই পেয়েছি। আবার সাশ্রয়িও হয়েছি।’

তার ঠিক উল্টো বক্তব্য পাওয়া গেল ম্যানুয়েল মিটার ব্যবহার করা পতেঙ্গা এলাকার বাসিন্দা সাহেদ হাসানের কাছ থেকে। তিনি বলেন, প্রায় একই রকম ব্যবহারের পরেও এক মাসে একেক রকম বিল আসে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মিটার না দেখেই বিল করা হয়। প্রিপেইড মিটার থাকলে এই ভোগান্তি হতো না।

পিডিবি চট্টগ্রামের প্রধান প্রকৌশলী মো. শামছুল আলম পূর্বকোণকে বলেন, ‘আমরাও চাইÑদ্রুত সব গ্রাহককে প্রিপেইড মিটার দিতে। কারণ, এতে আমাদেরও জন্যও ভলো হতো। গ্রাহকের ঘরে ঘরে গিয়ে কথা বলতে হতো না। বিদ্যুৎ চুরি, অপচয় ও বকেয়া কমে যেত। তাই প্রিপেইড মিটারের নতুন প্রকল্পের জন্য আমরা মন্ত্রণালয়ে অনেক আগেই চিঠি দিয়েছি। তবে করোনার কারণে এখন এখনো প্রকল্প মেলেনি।’

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট