চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

হালদাকে বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক 

২৪ ডিসেম্বর, ২০২০ | ৩:০৯ অপরাহ্ণ

প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত হালদা নদীকে বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ হিসেবে ঘোষণা করেছে সরকার। মুজিববর্ষের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী গত সোমবার (২১ ডিসেম্বর) এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এই প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে দীর্ঘদিনের একটি লালিত স্বপ্নের বাস্তবায়ন করলো সরকার। মৎস্য হেরিটেজ ঘোষণা করায় এখন থেকে এ নদীতে কেউ আর মাছ এবং জলজপ্রাণী শিকার করতে পারবে না।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ ও পরিবেশগত মান উন্নয়নের মাধ্যমে রুই জাতীয় মাছের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও গাঙ্গেয় ডলফিনের আবাসস্থল সংরক্ষণের লক্ষ্যে খাগড়াছড়ি জেলার রামগড় ও মানিকছড়ি উপজেলা, চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি, রাউজান, হাটহাজারী উপজেলা এবং চান্দগাঁও থানার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ৯৪ কিলোমিটার দীর্ঘ হালদা নদী এবং নদী তীরবর্তী ৯৩ হাজার ৬১২টি দাগের ২৩ হাজার ৪২২ একর জমিকে বঙ্গবন্ধু হেরিটেজ হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

পূর্ব প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় হালদা নদীকে বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ ঘোষণা করে। সরকারের গেজেট অনুযায়ী, বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ এলাকায় ১২টি শর্ত কার্যকর হবে।

শর্তগুলো হচ্ছে-

১. এ নদী থেকে কোনও প্রকার মাছ ও জলজ প্রাণী ধরা বা শিকার করা যাবে না। তবে মৎস্য অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে প্রতিবছর প্রজনন মৌসুমে নির্দিষ্ট সময়ে মাছের নিষিক্ত ডিম আহরণ করা যাবে।
২. প্রাণী ও উদ্ভিদের আবাসস্থল ধ্বংসকারী কোনও প্রকার কার্যকলাপ করা যাবে না।

৩. ভূমি ও পানির প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য নষ্ট/ পরিবর্তন করতে পারে, এমন সব কাজ করা যাবে না।

৪. মৎস্য ও অন্যান্য জলজ প্রাণীর জন্য ক্ষতিকর কোনও প্রকার কার্যাবলী করা যাবে না।

৫. নদীর চারপাশের বসতবাড়ি, শিল্পপ্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের পয়ঃপ্রণালী সৃষ্ট বর্জ্য ও তরল বর্জ্য নির্গমন করা যাবে না।

৬. কোনও অবস্থাতেই নদীর বাঁক কেটে সোজা করা যাবে না।

৭. হালদা নদীর সঙ্গে সংযুক্ত ১৭টি খালে প্রজনন মৌসুমে ( ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই) মৎস্য আহরণ করা যাবে না। ৮. হালদা নদী এবং এর সংযোগ খালের ওপর নতুন করে কোনও রাবার ড্যাম এবং কংক্রিট ড্যাম নির্মাণ করা যাবে না।

৯. বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ তদারকি কমিটির অনুমতি ব্যতিরেকে হালদা নদীতে নতুন পানি শোধনাগার, সেচ প্রকল্প স্থাপনের মাধ্যমে পানি উত্তোলন করা যাবে না।

১০. পানি ও মৎস্যসহ জলজ প্রাণীর গবেষণার ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ তদারকি কমিটির অনুমতিক্রমে হালদা নদী ব্যবহার করা যাবে।

১১. মাছের প্রাক প্রজনন পরিভ্রমণ সচল রাখার স্বার্থে হালদা নদী এবং সংযোগ খালের পানি প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না।

১২. রুই জাতীয় মাছের প্রাক প্রজনন এবং প্রজনন মৌসুমে (মার্চ- জুলাই) ইঞ্জিনচালিত নৌকা চলাচল করতে পারবে না।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, হালদা নদীতে রুই জাতীয় (রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালিবাউশ) মাছ জেনেটিক্যালি বিশুদ্ধ। তাই এপ্রিল-জুন মাসে প্রজনন মৌসুমে নদীতে রুই জাতীয় মাছের পর্যাপ্ত নিষিক্ত ডিম পাওয়া যায়।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সুবল বসু মনি বলেন, ‘হালদার দূষিত শিল্পকারখানা চিহ্নিত করতে এবং তাদের তরল ও কঠিন বর্জ্য নদীতে ফেলা থেকে বিরত রাখতে কিছু সময় লাগবে। আমাদের অবশ্যই হালদাকে মৎস্য হেরিটেজে ফিরিয়ে আনতে হবে। হালদা নদী এবং এর সঙ্গে সংযুক্ত এলাকাকে রুই মাছের জন্য একটি নিরাপদ প্রজননক্ষেত্র, প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ এবং পরিবেশগত মান উন্নয়নের মাধ্যমে গাঙ্গেয় ডলফিনদের জন্য একটি আবাসস্থল হিসেবে সুরক্ষিত করা হবে।’

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট