১৫ জুন, ২০১৯ | ২:০৮ পূর্বাহ্ণ
ইফতেখারুল ইসলাম
বর্ষা এসে গেল
হ ভাড়াটিয়ারাই পাহাড়ের পাদদেশে, বসতির মালিকরা বরাবরই আড়ালে।
হ ১৭টি পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে
৮৩৫টি পরিবারের বসবাস।
আজ আষাঢ় মাসের প্রথম দিন। শুরু হয়ে গেল বর্ষাকাল। আষাঢ়-শ্রাবণ দুইমাস ভারী বৃষ্টিপাতের সময়। ভারী বৃষ্টিপাত হলে বালির পাহাড়গুলি পানি ধারণ করে একসময় ধসে পড়ে। তাতে প্রাণহানি ঘটে। চট্টগ্রামের জন্য এই ধরনের প্রাণহানি নতুন কোন ঘটনা নয়। কিন্তু তাতেও বসবাসকারি কিংবা প্রশাসন কারো শিক্ষা হয়নি।
চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির ১৯তম সভা থেকে বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নান গত ১৬ এপ্রিল এক মাসের সময় দিয়ে নগরীর ঝুঁকিপূর্ণ ১৭ পাহাড় অবৈধ দখলমুক্ত করার নির্দেশ দেন। সেই একমাস পেরিয়ে এখন দুই মাস পূর্ণ হল। কিন্তু এখনো ঝুকিঁপূর্ণ বসবাস রয়ে গেছে। বলতে গেলে কেউ সরেনি।
সার্কিট হাউজের ওই সভায় পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) দেলোয়ার হোসেন জানান, চট্টগ্রামে সরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি মালিকানাধীন মিলিয়ে ১৭টি পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে ৮৩৫টি পরিবার বসবাস করছে। এসব পাহাড়ের মধ্যে ১০টি ব্যক্তি মালিকানাধীন এবং বাকি সাতটির মালিক সিটি কর্পোরেশন, রেলওয়ে, চট্টগ্রাম ওয়াসা, গণপূর্ত ও জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ। হালনাগাদ তালিকা মতে, নগরীর রেলওয়ের লেকসিটি আবাসিক এলাকা সংলগ্ন পাহাড়ে আছে ২২টি পরিবার, পূর্ব ফিরোজ শাহ ১ নম্বার ঝিল সংলগ্ন পাহাড়ে আছে ২৮টি পরিবার এবং জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের মালিনাকানাধীন কৈবল্যধামস্থ বিশ্ব কলোনি পাহাড়ে আছে ২৮টি পরিবার, পরিবেশ অধিদপ্তর সংলগ্ন সিটি কর্পোরেশন পাহাড়ে আছে ১০টি পরিবার, রেলওয়ে, সড়ক যোগাযোগ বিভাগ, গণপূর্ত অধিদপ্তর ও ওয়াসার মালিকানাধীন মতিঝর্ণা ও বাটালি হিল সংলগ্ন পাহাড়ে আছে ১৬২টি পরিবার, ব্যক্তি মালিকানাধীন এ. কে খান এ- কোম্পানির পাহাড়ে আছে ২৬টি পরিবার, হারুন খানের পাহাড়ে আছে ৩৩টি পরিবার, খাস খতিয়ানভুক্ত পলিটেকনিক কলেজ সংলগ্ন পাহাড়ে আছে ৪৩টি পরিবার, মধুশাহ পাহাড়ে আছে ৩৪টি পরিবার, ফয়’স লেক আবাসিক এলাকা সংলগ্ন পাহাড়ে আছে ৯টি পরিবার, ফরেস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট সংলগ্ন পাহাড়ে আছে ৩৩টি পরিবার, ভিপি সম্পত্তি লালখান বাজার জামেয়াতুল উলুম মাদ্রাসা সংলগ্ন পাহাড়ে আছে ১১টি পরিবার, এম আর সিদ্দিকীর পাহাড়ে ৮টি পরিবার, মিয়ার পাহাড়ে ৩২টি পরিবার, ভেড়া ফকিরের পাহাড়ে ১১টি পরিবার, আামিন কলোনি সংলগ্ন ট্যাংকির পাহাড়ে ১৬টি পরিবার ও আকবরশাহ আবাসিক এলাকা সংলগ্ন পাহাড়ে আছে ২৮টি পরিবার।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলা প্রশাসনের ছয়জন সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর তৈরি এই তালিকার বাইরেও নগরীতে আরো অনেক ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস রয়েছে। বিশেষ করে ছলিমপুর এলাকায় সরকারি পাহাড় কেটে সাবাড় করা হচ্ছে। সেখানে পাহাড়ের খাঁজে বসবাস করে হাজারো পরিবার।
পাহাড়ের আশপাশের স্থানীয় প্রভাবশালীরা পাহাড় কিংবা পাহাড়ের পাদদেশ কেটে সমতল করে কাঁচা-পাকা ঘর নির্মাণ করে আসার অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে। এ নিয়ে সরকারি-বেসরকারি পাহাড়ের মালিকরা থাকেন নীরবে। বরং রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় এসব পাহাড়ে অবৈধভাবে স্থাপনা তৈরি করা হয়। প্রতিবার বর্ষা এলে কিছু লোক দেখানো উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়। কিছু কিছু ঘরের গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হলেও কিছুদিন পর তারা আবারো ফিরে আসে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে। মূলত তারা ভাড়াটিয়া হিসেবেই পাহাড়ের পাদদেশে বসতি গড়ে। এসব বসতির মালিকরা বরাবরই আড়ালে থেকে যায়। একারণে পাহাড় ধসে মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হতে থাকে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াছ হোসেন পূর্বকোণকে জানান, ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারিদের যথেষ্ট সময় দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে হয়তো কেউ কেউ নিরাপদ স্থানে চলে গেছেন। যারা এখনো রয়ে গেছে, সেসব ঝুঁকিপূর্ণ বসতি উচ্ছেদে প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা প্রশাসন। অচিরেই উচ্ছেদ অভিযান শুরু হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ বসতির মালিক যতই প্রভাবশালী হোক না কেন, কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। তিনি বলেন, এবার উচ্ছেদ অভিযান চালানোর পর সেখানে যাতে আর কেউ ফিরে আসতে না পারে সেই ব্যবস্থা করা হবে। প্রশাসনের পাশাপাশি প্রয়োজনের জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতাও নেয়া হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই না কেউ অকারণে পাহাড় ধসে প্রাণ হারাক’। তাদের নিরাপত্তার স্বার্থেই এবার কঠোর অভিযান পরিচালনা করা হবে।