চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

সড়ক প্রশস্ত হয়, খুঁটি সরে না

তাসনীম হাসান 

২৪ ডিসেম্বর, ২০২০ | ১:৫০ অপরাহ্ণ

মুরাদপুর থেকে বহদ্দারহাট মোড়ে প্রায় এক কিলোমিটারের এই সড়কটি দুই বছর আগে প্রশস্ত করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। উভয়পাশে অন্তত পাঁচ হাত করে বাড়ানো হয়। কিন্তু উত্তর পাশে সড়কের ওপর থেকে সরানো হয়নি ২০টি বৈদ্যুতিক খুঁটি। ফলে সড়ক প্রশস্ত হলেও সুফল নেই।

আগেরমতোই দিন-রাত লেগে থাকে যানজট। উল্টো খুঁটিগুলোর কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে প্রায়শ। শুধু এই সড়কে নয়, সরেজমিন ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি), চট্টগ্রামের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নগরীর অন্তত ২০টি ব্যস্ত সড়কের ওপর এখনো দাঁড়িয়ে আছে প্রায় ১০০টি বৈদ্যুতিক খুঁটি। এর মধ্যে বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল সড়ক, সিরাজউদ্দৌল্লা সড়ক, মোহরা ভারী শিল্প এলাকা, চকবাজার, চট্টগ্রাম কমার্স কলেজ সড়ক, রহমতউল্লাহ চৌধুরী সড়ক, সাগরিকা, পোর্ট কানেক্টিং সড়ক ও হালিশহর হাইজিং এস্টেটের সড়কগুলো অন্যতম। এসব সড়কের বেশিরভাগই প্রশস্তকরণ কাজ শেষ হয়েছে অনেক আগে। আবার কিছু সড়কের প্রশস্তকরণ ও সংস্কার কাজ চলছে। কিন্তু বৈদ্যুতিক খুঁটিগুলো পোতা আছে আগের জায়গাতেই।

সড়কের ওপর খুঁটি রয়ে যাওয়ায় চার ধরণের সমস্যা দেখা যাচ্ছে। আগের মতো যানজট লেগে থাকছেই। খুঁটির কারণে সড়কের প্রশস্ত করা অংশটি বেদখল হয়ে যাচ্ছে। অনেক সময় দুর্ঘটনায় পড়ছে গাড়ি। আবার উচ্চ ভোল্টেজের তার টানানো এসব ঝুঁকিপূর্ণ খুঁটিতে গাড়ি ধাক্কা খেলে প্রাণহানীর মতো ঘটনাও ঘটতে পারে।

পিডিবি সূত্র জানায়, চসিক ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) কাছে পিডিবির পক্ষ থেকে অনেক আগেই এ বিষয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। চিঠিতে সড়ক প্রশস্তকরণের প্রকল্প হাতে নেওয়ার সময়েই খুঁটি সরানোর বিষয়েও অর্থ বরাদ্দ রাখতে অনুরোধ করা হয়।  কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, মূলত পিডিবির মাধ্যমে প্রকল্প এলাকায় বৈদ্যুতিক খুঁটি সরানোর নিয়ম থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে চসিক ও সিডিএর ঠিকাদারেরা পিডিবির সহযোগিতা নেন না। শুধু শাটডাউনের (বিদ্যুৎ-সংযোগ বন্ধ) আবেদন করে নিজেরাই খুঁটি সরিয়ে নেন। এটার মূল কারণ হলো পিডিবিকে দিয়ে খুঁটি সরানো হলে নির্ধারিত অর্থ পরিশোধ করতে হয়। কিন্তু নিজেরা নিজেদের মতো করে সরালে খরচ কম পড়ে। আবার এই খাতে বরাদ্দের অর্থও নিজেরা ভোগ করতে পারেন। অর্থ বরাদ্দ না থাকলে খুঁটি সরানো নিয়ে নীরবতায় থাকেন তাঁরা। তাই খুঁটিগুলো সরানো নিয়ে টানাটানি চলতে থাকে।

আবার সড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্পে খুঁটি সরানোর জন্য বরাদ্দ থাকলেও দেখা যায়, সড়কের কাজ পুরোপুরি শেষ হওয়ার পরেই সেই অর্থ ছাড় দেওয়া হয়। এতে ভালো সড়ক খুঁড়ে খুঁটি তোলে আবার সেটি স্থাপন করতে হয়। তখন খরচ দ্বিগুণ পড়ে যায়।

গত এক সপ্তাহে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে সড়কের ওপর খুঁটি থাকার চিত্র দেখতে পান এই প্রতিবেদক। এর মধ্যে দুই মাস আগ থেকে বহদ্দারহাঁট বাস টার্মিনাল থেকে

থেকে খরমপাড়া মোড় পর্যন্ত আধা কিলোমিটারজুড়ে সড়ক প্রশস্ত করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে মাটি আর ইটের কংকর দিয়ে সেই অংশ ভরাটও করা হয়েছে। কিছুদিন পরেই পিচ ঢালা হবে। কিন্তু খুঁটিগুলোর আগের জায়গায় রয়ে গেছে। একই দৃশ্য দেখা গেছে অলংকার মোড় থেকে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামগামী সড়কটিতেও। সেই সড়কটিতে ছোট খুঁটির পাশাপাশি উচ্চ ভোল্টেজের বড় খুঁটিও সড়কের ওপর রয়ে গেছে।

বিদ্যুৎ আইন ২০১৮-তে বৈদ্যুতিক খুঁটি কোন জায়গায় স্থাপন করতে হবে সে বিষয়ে স্পষ্ট কিছু লেখা নেই। তবে ঝুঁকি এড়াতে সড়কের এক পাশে, ফুটপাতের পাশে অথবা সুবিধাজনক স্থানে খুঁটি স্থাপন করা হয়। কিন্তু তা কোনোভাবেই সড়কের ওপর হওয়া যাবে না।

নিয়ম অনুযায়ী চসিক কিংবা সিডিএ আবেদন করলে এবং নির্ধারিত অর্থ জমা দিলে অবশ্যই বৈদ্যুতিক খুঁটি সরিয়ে নেওয়া হয় বলে জানান পিডিবি চট্টগ্রামের প্রধান প্রকৌশলী মো. শামছুল আলম। তিনি বলেন, ‘খুঁটি সরাতে খরচ পড়ে। শাট ডাউনের বিষয়ও আছে। তাই চাইলেই খুঁটি সরানো সম্ভব হয় না।’

তবে চসিকের প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল সোহেল আহমদ পূর্বকোণকে বলেন, ‘পিডিবিকে খুঁটিগুলো সরানোর বিষয়ে বলা আছে। সড়ক সংস্কার বা প্রশস্তকরণ করা হলে আমরা তাদের (পিডিবি) নির্ধারিত অর্থ দিয়ে চাহিদাপত্র পাঠাই। তারপর ধাপে ধাপে তারা খুঁটি সরানো হয়।’

সড়ক প্রশস্ত করার আগে খুঁটি না সরিয়ে পরে সরানোর বিষয়ে জানতে চাইলে লে. কর্নেল সোহেল আহমদ চসিকের অর্থ সংকট ও পিডিবির ধীরগতির কথা তুলে ধরেন।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট