চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে: বন্দরের অনুমতি, কাটছে জটিলতা

ইমরান বিন ছবুর 

২২ ডিসেম্বর, ২০২০ | ১:৪৩ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রামের সবচেয়ে বৃহৎ ফ্লাইওভার ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে’ নির্মাণে জটিলতা কাটতে শুরু করেছে। নির্মাণ কাজ শুরুর প্রায় দুই বছরের মাথায় বন্দর অংশে কাজ করার জন্য অনুমতি দিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। গতবছরের ফেব্রুয়ারিতে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এরপর পতেঙ্গা বিচ অংশ থেকে সল্টগোলা রেল ক্রসিং পর্যন্ত অধিকাংশ পিলারের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তবে চট্টগ্রাম বন্দর ও সিএমপির ট্রাফিক বিভাগের আপত্তির কারণে লালখান বাজার থেকে বারিক বিল্ডিং পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রথম অংশের কাজ শুরু করতে পারেনি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। সম্প্রতি এই জটিলতা কাটতে শুরু করেছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রথম অংশের মধ্যে সল্টগোলা রেল ক্রসিং থেকে কাস্টম পর্যন্ত কাজ করার জন্য গত সপ্তাহে অনুমতি দিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে এই অংশে কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন সিডিএ’র প্রকল্প পরিচালক। একই সাথে আগ্রাবাদ এলাকায় ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ করতে সিএমপি’র ট্রাফিক বিভাগ থেকে আর কোন বাধা থাকবে না বলে জানিয়েছেন টিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্সের ডেপুটি ম্যানেজার মো. রাফি সাজ্জাদ।

এ সম্পর্কে জানতে চাইলে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক মো. মাহফুজুর রহমান জানান, সল্টগোলা রেল ক্রসিং থেকে কাস্টম পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ করার জন্য সম্প্রতি বন্দর আমাদের অনুমতি দিয়েছে। বন্দর অংশে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ শুরু করার জন্য ইতোমধ্যে সেখানে নির্মাণ সামগ্রী আনা হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যে সেখানে কাজ শুরু হবে।

প্রকল্প পরিচালক আরো বলেন, বন্দরের জায়গার ভিতর দিয়ে অর্থাৎ বন্দরের পোর্ট কলোনির সামনে রেল লাইনের পাশ দিয়ে চট্টগ্রামের এই বৃহৎ ফ্লাইওভারটি যাবে। এজন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ থেকে প্রায় সাত একর জায়গা আমাদের অধিগ্রহণ করতে হবে। আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভার মাধ্যমে মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত দিবে বন্দরকে আমরা কি পরিমাণ টাকা পরিশোধ করবো। তবে আমাদের হিসাব অনুযায়ী প্রায় ১৮০ কোটি টাকার মত বন্দরকে পরিশোধ করতে হবে। এছাড়াও, নকশা পরিবর্তনের ফলে বন্দরের অংশ ছাড়াও আরো পাঁচ একরের মত জায়গা আমাদের অধিগ্রহণ করতে হবে।  টিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্সের ডেপুটি ম্যানেজার মো. রাফি সাজ্জাদ জানান, এ পর্যন্ত আমাদের ৩৯ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। পতোঙ্গা থেকে সল্টগোলা রেল ক্রসিং পর্যন্ত অধিকাংশ জায়গায় আমরা পিলার নির্মাণের কাজ শেষ করেছি। শুধুমাত্রা লালখান বাজার থেকে বারিক বিল্ডিং পর্যন্ত অংশে বন্দর ও সিএমপি’র ট্রাফিক বিভাগের অনুমতি না পাওয়ায় সেখানে ফ্লাইওভারের কাজ শুরু করতে পারিনি। তবে গত সপ্তাহে সল্টগোলা থেকে কাস্টম পর্যন্ত কাজ করার জন্য বন্দর আমাদের অনুমতি দিয়েছে। অন্যদিকে, আগ্রাবাদ অংশে কাজ করার জন্য সিএমপি’র ট্রাফিক বিভাগ অনুমতি দিয়েছে। বন্দর অংশে এই সপ্তাহে এবং আগ্রাবাদ অংশে আগামী সপ্তাহ থেকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ শুরু হবে।

জানতে চাইলে সিডিএ চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষ বলেন, বন্দর কর্তৃপক্ষ আমাদের সহযোগিতা করছে। সম্প্রতি বন্দর অংশে কাজ করার জন্য আমাদের অনুমতি দিয়েছে। মানুষের ভোগান্তি না হয় মত আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে ওই অংশে কাজ শেষ করবো।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা বিচ পর্যন্ত চার অংশে ভাগ করা হয়েছে। লালখান বাজার থেকে বারিক বিল্ডিং পর্যন্ত প্রথম অংশ। বারিক বিল্ডিং থেকে সিমেন্ট ক্রসিং পর্যন্ত দ্বিতীয় অংশ। সিমেন্ট ক্রসিং থেকে কাটগড় পর্যন্ত তৃতীয় অংশ এবং কাটগড় থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত চতুর্থ অংশ হিসেবে ধরা হয়েছে। এরমধ্যে পতেঙ্গা থেকে সল্টগোলা ক্রসিং পর্যন্ত অধিকাংশ পিলার নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে।

সিডিএ সূত্র থেকে জানা যায়, ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ৭টি পয়েন্টে ১৬টি র‌্যাম্প ও লুপ থাকার কথা রয়েছে। তবে র‌্যাম্প ও লুপের সংখ্যা কয়েকটি বাড়তে ও কমতে পারে। র‌্যাম্প এবং লুপসহ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মোট দৈর্ঘ্য দাঁড়াবে প্রায় ২৪ কিলোমিটারের মত।

উল্লেখ্য, বিমানবন্দর কেন্দ্রিক যানজট নিরসনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করে। তিন হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ব্যয়ে লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পটি ২০১৭ সালের ১১ জুলাই একনেকে অনুমোদন পায়। ২০১৯ বছরের ফেব্রুয়ারীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ উদ্ভোধন করেন।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট