চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

লালখান বাজারে বিপাকে পুলিশ

নাজিম মুহাম্মদ 

২১ ডিসেম্বর, ২০২০ | ১:৪৭ অপরাহ্ণ

সরকার দলীয় বিবাদমান দুই গ্রুপের মারামারিতে অতিষ্ঠ নগরীর লালখান বাজারের দুই লাখ বাসিন্দা। এক পক্ষ ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও  নগর ছাত্রলীগ নেতা সুদীপ্ত হত্যা মামলার আসামি দিদারুল আলম মাসুম ও অন্য পক্ষ আওয়ামী লীগের দলীয় কাউন্সিলর প্রার্থী আবুল হাসনাত বেলালের অনুসারী। 

মূলত নগর ছাত্রলীগ নেতা সুদীপ্ত হত্যার পর থেকে গ্রুপিং মাথাচড়া দিয়েছে বেশি। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার ক্ষেত্রে খুলশী থানা পুলিশের কাছে কার্যত চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে লালখান বাজার। গত দুই বছরে লালখানবাজার কেন্দ্রিক সংঘর্ষের ঘটনায় খুলশী থানায় মামলা দায়ের হয়েছে ৫০টির বেশি। সেখানকার ঘটনাকে কেন্দ্র করে দিন দিন মামলার পরিসংখ্যান বাড়ছে। লালখান বাজার নিয়ে অনেকটা বিপাকে রয়েছে পুলিশ।   চাঁদাবাজি-দখল আর আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সেখানে দুই পক্ষের মধ্যে কয়দিন পর পরই সংঘটিত হচ্ছে সংঘর্ষ। কথায় কথায় সেখানে ঘটছে ছুরিকাঘাতের ঘটনা। গ্রেপ্তার হয়ে কারাভোগ করে জামিনে বের হয়ে ফের একই অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে তারা। সর্বশেষ গত শুক্রবার রাতে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে আলমগীর হোসেন নামে এক যুবককে। এ ঘটনায় মাসুমের অনুসারী আটজনকে অভিযুক্ত করে খুলশী থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। 

নগর পুলিশের উত্তর জোনের উপ-কমিশনার বিজয় বসাক (ডিসি) জানান, লালখান বাজারের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘটিত ঘটনায় থানায় ৫০ টির বেশি মামলা দায়ের হয়েছে। ২০১৯ সালের শেষের দিকে ঘটনা কিছুটা কম ঘটলেও সাম্প্রতিক সময়ে ফের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আমরা চেষ্টা করছি।  আট বর্গ কিলোমিটার আয়তনের ১৪ নম্বর লালখান বাজার ওয়ার্ডে প্রায় দু’লক্ষাধিক নারী পুরুষ বসবাস করে। স্বাধীনতা যুদ্ধে সবচেয়ে বেশি শহীদ হয়েছিলো এ লালখান বাজারে। যার কারণে এলাকাটি শহীদ নগর হিসাবে পরিচিত। শহীদ নগর নামে সেখানে একটি উচ্চ বিদ্যালয়ও রয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, লালখান বাজার কেন্দ্রিক মারামারিতে যারা অংশ নিচ্ছে তারা কেউ দিদারুল আলম মাসুম আবার কেউ আবুল হাসনাত বেলারের অনুসারী। আবার কেউ কেউ সাবেক কাউন্সিলর এফ কবির মানিকের অনুসারী।  তিনজনই সরকার দলীয় হওয়ায় মাঝখানে বিপাকে পড়েছে পুলিশ।

ঘুরে ফিরে একই আসামি : অনুসন্ধানে দেখা যায়, লালখান বাজার কেন্দ্রিক সংঘর্ষের ঘটনায় ঘুরে ফিরে এসেছে একই কিশোর ও যুবকের নাম। যারা একাধিক মামলার আসামি। লালখান বাজারের প্রায় প্রত্যেকটি ঘটনায় নেপথ্যে কিংবা প্রকাশ্যে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে মোহাম্মদ মাঈনুদ্দিন হানিফ ওরফে পিচ্চি হানিফের বিরুদ্ধে। সুদীপ্ত হত্যা মামলা ছাড়াও তার বিরুদ্ধে খুলশী থানায় মামলা রয়েছে আটটি। একধিকবার জেলে গেলেও জামিনে এসে ফের অপরাধে জড়িয়ে পড়ে হানিফ। একইভাবে জাহিদুর রহমান জাহেদের বিরুদ্ধে দশটি, মোক্তার হোসেনের সাতটি, মামুনুর রহমান রাব্বির তিনটি, আমির হোসেন বাবুর দুটি, খাইরুল নুর ইসলাম খায়েরের দুটি, ফয়সাল আহম্মেদ পাপ্পুর তিনটি, রুবেল কান্তি দে’র চারটি, সালাউদ্দিন লাভলু ওরফে ডিস সালাউদ্দিনের পাঁচটি, রাজিবুল ইসলাম রাজিবের তিনটি, ইব্রাহিম খলিল বাপ্পির পাঁচটি, জিয়াউল হক ফয়সালের দুটি, নিজাম উদ্দিন রুবেলের তিনটি, মিজানুর রহমান রাকিবের দুটি, দিদারুল আলম মাসুমের তিনটি, আইনুর কাদের নিপুর দুটি, মোহাম্মদ শামীমের দুটি, মো. মামুনের পাঁচটি, আমজাদ হোসেন বোক্ক্যার দুটি ও আবদুল রব নওশাদের বিরুদ্ধে চারটি মামলা রয়েছে। এদের কেউ দিদারুল আলম মাসুম, কেউ আবুল হাসনাত বেলাল কিংবা সাবেক কাউন্সিলর মানিকের অনুসারী।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দিদারুল আলম মাসুম জানান, বছরের পর বছর ধরে চলে আসা বিরোধ আমরা একাধিকবার সমাধানের চেষ্টা করেছি। আবুল হাসনাত বেলালের সাথে আমার বিরোধ নেই। কাউন্সিলর প্রার্থী হিসাবে নেত্রী তাকে মনোনীত করেছে। আমি তাঁর বিরুদ্ধে নয়। কিন্তু তিনি আমাকে প্রতিপক্ষ মনে করছেন।

কয়দিন আগে আলমগীর নামে যে ছেলেটিকে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে তার সাথে আমার ভাল সম্পর্ক। অথচ ওই ছুরিকাঘাতের ঘটনায় আমার অনুসারীদের আসামি করা হয়েছে।

ওই ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া জাহিদুর রহমান জাহেদের কাছ থেকে ফুল নেয়া প্রসঙ্গে মাসুম বলেন, জাহেদ আমাকে ফুল দিয়েছে বলে সে আমার লোক হবে, তা নয়। তাকে আমি গ্রহণ করেছি কিনা, তা দেখতে হবে।

জানতে চাইলে আবুল হাসনাত বেলাল বলেন, দিদারুল আলম মাসুম আমার বড় ভাই। তাঁর সাথে আমার ব্যক্তিগত কোন বিরোধ নেই। ছাত্রলীগ নেতা সুদীপ্ত হত্যার পর থেকে সবচেয়ে বেশি ঘটনা ও মামলা হয়েছে। তিনি ইচ্ছেমতো ঘটনা ঘটিয়ে যাকে ইচ্ছে তাকে আসামি করেছেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট