চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ ও ভারতের অবস্থান অভিন্ন: দোরাইস্বামী

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ ও ভারতের অবস্থান অভিন্ন: দোরাইস্বামী

নিজস্ব প্রতিবেদক

২০ ডিসেম্বর, ২০২০ | ১১:৩৩ অপরাহ্ণ

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে ভারত ও বাংলাদেশের অবস্থান অভিন্ন উল্লেখ করে ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী বলেছেন, ‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ত্বরান্বিত করতে ভারত সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছে। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী হিসেবে ভারত সরকারও এ সমস্যার সমাধান চায়।’

চট্টগ্রামের সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন তিনি। গতকাল রবিবার বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক মিলনায়তনে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ভারতীয় হাইকশিনার আরও বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে বিতাড়িত লোকজনের তাদের আদি নিবাসে ফিরে যাওয়ার বিষয়টি ভারত সবসময় উৎসাহিত করে। আমরা চাই দ্রুত নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবাসনের লক্ষ্য পূরণ হোক।’

রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়ার কথা তুলে ধরে বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী আরও বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উদারতার প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা। তবে আমরা জানি, এটা বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জের। একইসঙ্গে আমাদের জন্যও উদ্বেগের। তাই আমরা মিয়ানমারকে অনুরোধ করেছি তাঁরা যাতে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়।’

অবৈধ অনুপ্রবেশ ও অবৈধ অর্থনৈতিক কর্মকা-ের কারণেই সীমান্তে হত্যার ঘটনা ঘটছে বলে জানান বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী। তিনি বলেন, ‘সীমান্তে ঘটনার ৯৫ শতাংশই ঘটছে ভারতের সীমান্তের ভেতরে। আর ৮৭ শতাংশ ঘটনাই ঘটছে রাত ১০ থেকে ভোর ৫ টার মধ্যে। এটি এমন নয় যে কেবল বাংলাদেশীরাই দুঃখজনকভাবে আহত হচ্ছে। বিএসএফসহ বহু ভারতীয়ও আহত হচ্ছেন। অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের কারণেই এসব ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনা থামাতে সীমান্তে বৈধ অর্থনৈতিক কর্মকা-ের উদ্যোগ নেওয়া দরকার।’

ভারতীয় হাইকমিশনার তাঁর বক্তব্যে ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্কের গভীরতা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘ভারতে আমরা বাংলাদেশকে আমাদের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু মনে করি। এই সম্পর্ক কখনো ভাঙার নয়। কারণ, এটি গড়ে উঠেছে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে দিয়ে। তাই বাংলাদেশের সঙ্গে আরও কীভাবে অংশীদারিত্ব বাড়ানো যায়, সেটি নিয়ে আমরা কাজ করছি।’

ভারতীয় হাইকশিনার তাঁর বক্তব্য শুরু করেন চট্টগ্রামকে নিয়ে। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম নানা সাংস্কৃতিক বৈচিত্রের শহর। এটি প্রায় ৪ শ বছরের বেশি সময় ধরে বিশ্বের কাছে বাণিজ্যের গেটওয়ে। এর সোনালি অতীত রয়েছে। ভবিষ্যতে চট্টগ্রামের গুরুত্ব আরও বেশি।’

মহান মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রামের ভূমিকার কথা তুলে ধরে বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী বলেন, ‘১৯৭১ সালে চট্টগ্রাম রেডিও, চট্টগ্রামের মানুষ ও পুলিশসহ সবাই বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন।’

চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি আলী আব্বাসের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সম্পাদক নজরুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রামে ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনার অনিন্দ ব্যানার্জি, প্রেসক্লাবের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি সালাহউদ্দিন মো. রেজা ও সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ। এ সময় ভারতীয় হাইকমিশনারে সহধর্মীণি সঙ্গিতা দোরাইস্বামী, ফাস্ট সেক্রেটারি সুভাশিষ সিনহাসহ সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ ও অন্যান্য অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে বিকেল তিনটায় প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের স্মৃতিবিজড়িত পাহড়তলীর ইউরোপিয়ান ক্লাবে যান ভারতীয় হাইকমিশনার। ক্লাবের প্রবেশমুখে থাকা ইউরোপিয়ান ক্লাবে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের আক্রমণ ও তাঁর আত্মাহুতির বর্ণনাটি তাঁকে পড়ে শোনান নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) বিজয় বসাক। পরে তিনি ক্লাবের ভেতরে রাখা প্রীতিলতার একটি পোট্রেটের পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তোলেন। এরপর অদূরে অবস্থিত প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের ভাস্কর্যে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান তিনি।

চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সভা শেষে বিকেল পাঁচটার দিকে ভারতীয় হাইকমিশনার জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসায় পরিদর্শনে যান। তিনি মাদ্রাসার আইসিটি, মাল্টিমিডিয়া ক্লাস, বিজ্ঞানাগার, লাইব্রেরি ও ভৌত অবকাঠামো দেখে অভিভূত হন। এ সময় তিনি অধ্যক্ষ অফিসে আনজুমান ট্রাস্টের সেক্রেটারি জেনারেল আলহাজ মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে এক আলোচনা সভায় মিলিত হন। সভায় অন্যদের মধ্যে গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশের চেয়ারম্যান আলহাজ পেয়ার মোহাম্মদ কমিশনার, যুগ্মমহাসচিব আলহাজ মুহাম্মদ মোসাহেব উদ্দিন বখতিয়ার, গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ চট্টগ্রাম মহানগরের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। পরে মোনাজাত পরিচালনা করেন মাদ্রসার অধ্যক্ষ আল্লামা মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ অছিয়র রহমান আল কাদেরী।

 

 

 

 

পূর্বকোণ/পি-আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট