চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

বাগানবাজারে নানারবাড়ি বেড়াতে এসে লাশ হয়ে ফিরলো তারা

ফেনী নদীতে এক ভাইকে বাঁচাতে গিয়ে ডুবে গেল ৩ ভাই

নিজস্ব সংবাদদাতা , রামগড়

১৪ জুন, ২০১৯ | ২:২৪ পূর্বাহ্ণ

রামগড় উপজেলা সীমানা লাগোয়া ভূজপুরের বাগানবাজার এলাকায় ভারত সীমান্তবর্তী ফেনী নদীতে গোসল করতে নেমে ডুবে যাওয়া এক ভাইকে বাঁচাতে গিয়ে একেএকে প্রাণ গেল ভাইয়ের। মর্মান্তিক এ ঘটনাটি ঘটেছে বৃহষ্পতিবার(১৩ জুন)। ফায়ার সার্ভিস, যুব রেড ক্রিসেন্ট ও স্থানীয় লোকজনের দীর্ঘ চার ঘণ্টার প্রাণপণ চেষ্টার পর বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৫টায় ডুবে যাওয়া তিনটি শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহতরা হচ্ছে, বাগানবাজারের গ্রীস প্রবাসী মো. বোরহান উদ্দিনের দুই শিশু পুত্র মো. জোবায়ের হোসেন মুকুল (১৪) ও মো. আজহার হোসেন (১২) এবং পূর্ব হলুদিয়া গ্রামের ইফতেখার হোসেন আলীর পুত্র তৌহিদুল আলম সাইফ (৮)। মুকুল ও আজহার সাইফের আপন খালাতভাই। তারা সবাই ৩-৪দিন বাগানবাজারে তাদের নানার বাড়িতে বেড়াতে এসেছিল। ফায়ার সার্ভিসকর্মী ও স্থানীয় লোকজন জানান, বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে মুকুল, আজহার, সাইফ ও মাহিম(৮) তাদের নানার বাড়ির পাশের সীমান্তবর্তী ফেনী নদীতে গোসল করতে যায়। নাব্যতাহীন নদীর জলে তারা সবাই মিলে দৌঁড়ঝাঁপ দিয়ে খেলাধুলা করছিল। এক পর্যায়ে সাইফ নদীর গভীর পানির একটি অংশে পড়ে গিয়ে হাবুডুবু খাচ্ছিল। এটি দেখে তার খালাত ভাই মুকুল তাকে বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে ঐ গভীর জলে। সেও ডুবে যাচ্ছে দেখে তার ছোটভাই আজহারও ওদের বাঁচাতে একইভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে । একেএকে তিন ভাইয়ের ডুবে যাওয়ার দৃশ্য দেখে তাদের আরেক খালাত ভাই মহিম দৌঁড়ে বাড়িতে গিয়ে স্বজনদের খবরটি জানায়। পরে বাড়ির লোকজন ও বাজার এলাকার শত শত মানুষ নদীর ঐ গভীর জলের অংশে ঝাঁপিয়ে পড়ে শিশুদের উদ্ধারে। রামগড় ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ইনচার্জ
। ৯ম পৃষ্ঠার ৫ম ক.

ডলার ত্রিপুরার নেতৃত্বে একটি ইউনিট বেলা একটার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার অভিযান শুরু করে। পরে তাদের সাথে যোগ দেয় রামগড় যুব রেড ক্রিসেন্টের ১০ সদস্য। স্থানীয় লোকজন, ফায়ার সার্ভিস ও যুব রেড ক্রিসেন্টের উদ্ধারকর্মীরা টানা সাড়ে ৩ ঘণ্টা প্রাণপণ চেষ্টা করে বিফল হওয়ার পর বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে চট্টগ্রাম বিভাগীয় দপ্তর থেকে ফায়ার সার্ভিসের তিনজন ডুবুরী এসে যোগ দেন উদ্ধার অভিযানে। ডুবুরী সদস্য প্রথমেই উদ্ধার করে আনে মুকুল ও আজহার এ দুভাইয়ের মরদেহ। পরে উদ্ধার করা সাইফের লাশ। নিহতদের স্বজন আকবর হোসেন বলেন, জোবায়ের হোসেন মুকুল রামগড়ের ফেনীর কুল নুরানী মাদ্রাসা থেকে কোরানে হাফেজ হয়েছে। তার ছোট ভাই আজহার রামগড় মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে পিএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন এ প্লাস পেয়ে পাশ করার পর রামগড় সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে এখন ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়তো আর সাইফ নুরানীর শিশু শ্রেণীতে পড়তো। তিনি বলেন, ৩-৪ দিন আগে তারা সবাই বাগানবাজারে তাদের নানা নুরুল ইসলাম মেম্বারের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিল। আজই দুপুরের খাওয়া দাওয়ার পর বিকালে তারা নিজ নিজ বাড়ি ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। ফিরেছে ঠিকই, তবে লাশ হয়ে।
এদিকে উদ্ধারের পরই নিহতদের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। জেলা প্রশাসকের অনুমতিতেই ময়নাতদন্ত ছাড়া লাশ হন্তান্তর করা হয় বলে জানায় দাঁতমার তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ।
ফেনী নদীর কূল ঘেঁষে প্রায় ২০ ফুট উঁচু টিলার উপরই নিহতদের নানার বাড়ি। রামগড় ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ইনচার্জ ডলার ত্রিপুরা বলেন, নদীতে সামান্যই জলপ্রবাহ। পানির স্রােত পাহাড়ের সাথে ধাক্কা খেয়ে নদীর একটি স্থানের গভীরতা সৃষ্টি হয়েছে। প্রায় ১৫-১৬ ফুট গভীর ঐ স্থানেই শিশু তিন ডুবে যায়। তিনি আরও বলেন, ওখানে নদীর তীর সংরক্ষণের জন্য সিসি ব্লক ও বালুর বস্তা ফেলা হয়েছে। ব্লক ও বালুর বস্তার কারণে উদ্ধার কাজ বিলম্বিত হয়। তিনটি শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় রামগড়সহ আশে পাশের এলাকা থেকে হাজারও মানুষ ছুটে আসে ঘটনাস্থলে। ডুবুরীরা একে একে তিনটি মরদেহ উদ্ধার করে আনলে কান্নার রোল পড়ে যায় পুরো এলাকায়। শোকে আকাশ ভারী হয়ে উঠে।
এদিকে এ মর্মান্তিক ঘটনার খবর পেয়ে ফটিকছড়ির উপজেলা চেয়ারম্যান এইচএম আবু তৈয়ুব , উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মুশফিকুর রহমান, বাগানবাজারের ইউপি চেয়ারম্যান রুস্তম আলী বিকালে ঘটনাস্থলে আসেন। তারা নিহতদের শোকসন্তপ্ত পরিবারকে সমবেদনা জানান।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট