আজ ১২ ডিসেম্বর বাঁশখালী হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে বাঁশখালী উপজেলার মুক্তিসেনারা সংগ্রাম করে পাকবাহিনীর হাত থেকে বাঁশখালীকে হানাদার মুক্ত করেছিলেন। অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হানাদার পাক সেনার বিরুদ্ধে সাহসী বাঙালি টগবগে যুবকরা অসীম সাহসিকতার সঙ্গে ছোট বড় অন্তত ২৪টি স্থানে যুদ্ধ করে। বাঁশখালীর পবিত্র মাটি থেকে হানাদার পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকার আলবদরদের হটিয়ে মুক্ত করতে সক্ষম হয়েছিল।
হাজারো মুক্তিকামী মানুষের গগণ বিদারী জয় বাংলা স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠেছিল বাঁশখালীর মুক্তিযোদ্ধা সাবেক কমান্ডার অসিত সেন জানান, যুদ্ধকালীন সময়ে পাকিস্তানি রাজাকাল আল বদরের সদস্যরা বাঁশখালীর মুক্তিকামী ৯১ জন সদস্যকে গুলি করে নৃশংসভাবে হত্যা করে। মুক্তিযোদ্ধাদের ৫টি গ্রুপ একত্রিত হয়ে ১০ ডিসেম্বর রাতে আক্রমণ শুরু করি। ১১ ডিসেম্বর গুণাগরী ওয়াপদা অফিস রাজাকার ক্যাম্পে সম্মুখযুদ্ধে পাকিস্তানি সৈন্যদের দোসররা পরাজিত হয়ে আত্মসমর্পণ করে। ১৯৭১ সালের ১২ ডিসেম্বর বাঁশখালী পাক হানাদার মুক্ত হয়।
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কে এম সালাউদ্দীন কামাল বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি রক্ষার্থে ১৯৮৯ সালের ১৫ মার্চ বাঁশখালী কলেজ সংলগ্ন জঙ্গলে ১৮ জনের গণসমাধির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও ২০১১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাণীগ্রাম মধ্যপাড়ায় ২২ জনের গণসমাধির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন সর্বশেষ ২০১৪ সালের ১০ অক্টোবর মোট ৯১ জন শহীদ স্মৃতিস্তম্ভের ভিত্তি স্থাপন করেন ক্যাপ্টেন (অব.) আবদুল করিম বীর বিক্রম ও বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সাবেক ডেপুটি কমান্ডার খোন্দকার মোহাম্মদ ছমি উদ্দীন। ওই সময়ের ২০১৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ ফলক উন্মোচন করেন মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী এমপি।
মুক্তিযোদ্ধারা জানান, ১৯৭১ সালের ১৯ মে পাক বাহিনী ও দেশীয় রাজাকার আলবদর বাহিনীর সদস্যরা বাঁশখালীতে প্রথম সাজোয়া বহর নিয়ে বাণীগ্রাম এলাকায় আক্রমণ শুরু করে। পরে পুইছড়ি, নাপোড়া, কালীপুর, বাণীগ্রাম, জলদিতে পাক বাহিনীর সদস্যরা নিরীহ মানুষদের উপর গুলি, অত্যাচার, নির্যাতন ও অগ্নিসংযোগ শুরু করে।
এ সময় ভারতে প্রশিক্ষণ নেয়া মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিফোর্সের সদস্যরা এলাকায় ফিরে বাঁশখালী কুতুবদিয়া মুক্তিবাহিনীর বিএলএফ কমান্ডার ডা. আবু ইউসুফ চৌধুরী ও আনোয়ারা-বাঁশখালী কমান্ডার মোক্তার আহমদের সাথে থাকা মুক্তিযোদ্ধাসহ পুঁইছড়ির সোলতানুল কবির চৌধুরী গ্রুপ, জলদির নুরুল কবির চৌধুরী গ্রুপ, পুকুরিয়ার শফিকুল ইসলাম গ্রুপ, সাধনপুরের খন্দকার ছমি উদ্দীন চৌধুরী গ্রুপ, চাম্বলের ওয়াজেদ আলী খান গ্রুপের সদস্যরা পৃথক পৃথকভাবে ভারি অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে পাহাড়ি পথ বেয়ে পাকিস্তানি সন্যদের উপর আক্রমণ শুরু করেন।
পূর্বকোণ/পি-আরপি