চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

৬ মাসের প্রশিক্ষণে ভাগ্যবদল বিলকিসের

৬ মাসের প্রশিক্ষণে ভাগ্যবদল বিলকিসের

ইমরান বিন ছবুর

১১ ডিসেম্বর, ২০২০ | ৮:০৬ অপরাহ্ণ

বিলকিস আক্তার (৩০)। নিজের আগ্রহ এবং অভাবের তাড়নায় আয়ত্ত করেন ইলেকট্রিক্যাল কাজ। কিন্তু সে কাজে ডাক পায় না বাইরে। কাজের জন্য কয়েক জায়গায় ধরনা দিলেও লাভ হয় না তাতে। চাকরীর জন্য বিলকিসের কাছে চাওয়া হয় অভিজ্ঞতা কিংবা প্রশিক্ষণের সনদ। এভাবে ঘুরতে ঘুরতে পার করেন বেশ কয়েক মাস। মাঝেমধ্যে পরিচিতদের মাধ্যমে কয়েকটি কাজ পেতেন। তবে সে আয়ও খুব সামান্য। কাজ করতে গিয়ে বিলকিস উপলব্ধি করেন এই কাজে অবশ্যই প্রশিক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে। সেই উপলব্ধি থেকে ২০১৬ সালে বিলকিস ভর্তি হন যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণে। ইলেকট্রিক্যালের উপর ছয় মাসের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এছাড়াও প্রশিক্ষণ নেন রেফ্রিজারেশন ও এয়ারকন্ডিশনের উপর। এরপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি বিলকিস আক্তারকে।

প্রশিক্ষণ শেষে ২০১৬ সালে বিলকিসের মেয়ে ইলমার নামে নগরীর খুলশী আমবাগান এলাকার ফ্লোরাপাস রোডে ‘ইলমা রেফ্রিজারেশন এন্ড এসি সার্ভিস’ নামে একটি দোকান দেন। দোকানে বর্তমানে ছয় জন কর্মচারী রয়েছে। চাঁদপুর সদর উপজেলার বিক্রমপুর গ্রাম থেকে উঠে আসা বিলকিসের সততা-পরিশ্রম এবং এই দোকানের মাধ্যমে বদলাতে থাকে ভাগ্য। দারিদ্রতা কাটিয়ে বিলকিস হয়ে উঠেন স্বাবলম্বী। সেই সাথে এলাকায় দক্ষতার সাথে কাজ করে সুনাম কুড়িয়ে নেন বিলকিস আক্তার। পর্যায়ক্রমে তার কাজ শুধু এলাকায় সীমাবদ্ধ থাকেনি। বর্তমানে কাজ করেন নগরীর সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থায়। এসি-ফ্রিজ কিংবা বিদ্যুৎ গোলযোগ দেখা দিলে ফোন আসে বিলকিসের মোবাইলে। সাথে সাথে ছুটে যান তিনি। এ পর্যন্ত বিলকিস থেকে ১০ থেকে ১২ জন ছেলে-মেয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন এ পেশায় জড়িত রয়েছে বলেও জানান বিলকিস।

গত সোমবার বিলকিসের সাথে কথা হয় তার ইলমা রেফ্রিজারেশন এন্ড এসি সার্ভিস দোকানে। কাজের ফাঁকে কথা বলেন দৈনিক পূর্বকোণের এই প্রতিবেদকের সাথে। তুলে ধরেন নিজের স্বাবলম্বী হওয়ার গল্প।

প্রশিক্ষণ গ্রহণের কারণ জানতে চাইলে বিলকিস আক্তার বলেন, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে প্রশিক্ষণের আগেও আমি ইলেকট্রিক্যালের কাজ জানতাম। তবে অভিজ্ঞতা ও প্রশিক্ষণের সনদ না থাকায় কেউ আমাকে কাজ দেয়নি। তাই ২০১৬ সালে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। ছয় মাসের প্রশিক্ষণ শেষে আমার বাসার পাশে আমবাগানে আমার মেয়ের নামে একটি দোকান দিই। আমার প্রতিটি কাজে আমার স্বামী সব সময় সাপোর্ট করেছে। তিনি সহযোগিতা না করলে হয়তো আমার প্রশিক্ষণ এবং দোকান কোনটিই হতো না।

তিনি আরো বলেন, প্রথম যখন দোকান দিই, সব কাজ আমি নিজেই করতাম। শুরুর দিকে অনেকেই বলতেন, এগুলো ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। একজন মেয়ে এগুলো কিভাবে করবে? কিন্তু যারা আমাকে দিয়ে একবার কাজ করিয়েছে তারা বুঝতে পারে আমি কতটা দক্ষতার সাথে কাজ করি। এভাবে আস্তে আস্তে যখন আমার কাজের পরিধি বেড়ে যায় আমি একজন ছেলে ও একজন মেয়ে নিয়োগ দিই। এলাকার যে কোন বাসায় বিদ্যুৎ বা ফ্রিজ-এসির সমস্যা দেখা দিলেই আমার কাছে কল আসে। আমি যেখানে একবার কাজ করেছি, তারা আর বাইরের কাউকে দিয়ে কাজ করায় না। এটায় আমার প্রাপ্তি। বর্তমানে আমাদের দোকানে মোট ছয় জন ছেলে কাজ করছে। দোকান শুরুর দিকে তিনজন মেয়ে আমার কাছে কাজ শিখেছিল। আমি চাই আমাকে দেখে অন্য মেয়েরাও এ কাজে আসুক।

বর্তমানে কাজের ক্ষেত্র’র কথা উল্লেখ করে বিলকিস আক্তার বলেন, আমার অভিজ্ঞতা ও সততায় আমি এখন নগরীর বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অফিসে কাজ করছি। ইসলামি ফাউন্ডেশনের মসজিদ ভিত্তিক অনেক কাজ আমি করি। এরমধ্যে আন্দরকিল্লা জামে মসজিদ, জামিয়াতুল ফালাহ জামে মসজিদের এসি ও ফ্রিজ এবং হাজি ক্যাম্পে ফ্যানের কাজ করি। এছাড়া, টাইগার পাস মোড়ের নৌবাহিনী অফিস, বন্দরটিলা এলাকার নেভার এভিনিউ’র এসি ও ফ্রিজের কাজ। সার্জিস্কোপ হাসপাতালের ইউনিট ১ ও ২ এর কাজও আমি গিয়ে করি।

বিলকিস আক্তারের স্বামী ইয়াসিন আরাফাত বিটু বলেন, বিলকিস যেহেতু বিদ্যুতের মত জরুরি সেবা এবং ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে বিভিন্ন সময় তাকে ঘরের বাইরে যেতে হয়। সে তার মত করে কাজ করে। আমি সরকারি একটি অফিসের ড্রাইভিং পেশায় রয়েছি। আমার কাজের নির্ধারিত সময় থাকলেও, তার কাজের কোন নির্ধারিত সময় নেই। কিছুদিন আগে রাত ১টার দিকে আমাদের এক প্রতিবেশীর ঘরের বিদ্যুৎ চলে যায়। তারা এসময়ে বিলকিসকে জানালে সে তাৎক্ষণিক গিয়ে তা সারিয়ে আসে।

শুধুমাত্র বিলকিস আক্তার নয়। বিলকিস আক্তারের মত হালিমা, শিরিন, তানজিলা আক্তার, ইরফাত আরা ইরাসহ অসংখ্য নারী যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হয়েছেন।

এ সম্পর্কে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. ইসহাক জানান, আমাদের চট্টগ্রামের শহর ও উপজেলা অফিস থেকে প্রতি বছর প্রায় ১০ হাজারের মত ছেলে-মেয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। আমাদের বিভিন্ন মেয়াদের আবাসিক-অনাবাসিক প্রশিক্ষণ শেষে তারা নিজের পায়ে দাঁড়াতে সক্ষম হয়। কেউ স্বাবলম্বী হয় চাকরীর মাধ্যমে। আবার কেউ নিজেই প্রতিষ্ঠান খুলে বিলকিসের মত নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি অন্যদের চাকরী দিয়ে সহায়তা করেন।

 

 

 

 

 

পূর্বকোণ/পি-আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট