চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

কিশোর জিসান কেন আসামি

যে সাতকানিয়া সদরেও কখনো ­একা যায়নি, সে কীভাবে ইয়াবা ­পাচারকারী হয়?’

নাজিম মুহাম্মদ

১১ ডিসেম্বর, ২০২০ | ৭:৫২ অপরাহ্ণ

সপ্তম শ্রেণির ছাত্র জিসান ট্রলারে চড়ে কখনো সাগর পাড়ি দেয়নি। বিগত কয়েক বছরে চট্টগ্রাম শহরেও আসেনি। জিসানের বাড়ি সাতকানিয়ার প্রত্যন্ত বাজালিয়ার বড়দুয়ারা গ্রামে। বাবা আলী আকবর দিনমজুরের কাজ করেন। খেয়ে না খেয়ে কোনমতে সংসার চলছিল জিসানদের। এর মধ্যেই পুলিশের কাছ থেকে চরম দুঃসংবাদ পেয়ে আলী আকবরের পরিবারের তো আকাশ থেকে পড়ার জোগাড়। অনাকাক্সিক্ষত সেই দুঃসংবাদটি হল, ছেলে জিসান ইয়াবা পাচার মামলার আসামি। ট্রলারে উত্তাল সাগর পথে মিয়ানমার থেকে ইয়াবা পাচারের সাথে জড়িত সে। আলী আকবর যখন অভিযোগটি শোনেন ঠিক তখনই ছেলে জিসান বাবার পাশে বসে পড়াশোনা করছিল।

আকবর আলীর প্রশ্ন, মাত্র ১৪ বছরের ছেলে জিসান যে সাতকানিয়া সদরেও কখনো একা যায়নি, সে কীভাবে ইয়াবা পাচারকারী হয়?

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে চান্দগাঁও পুলিশ জানায়, গত ২১ নভেম্বর নগরীর পুরাতন কালুরঘাট বিআরটিসি ঘাটে সাগর পথে ট্রলারে আনা এক লাখ ৪৮ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। এ সময় সোহেল উদ্দিন নামে এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়। ওই ঘটনায় উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোস্তাফিজুর রহমান বাদি হয়ে গত ২২ নভেম্বর চান্দগাঁও থানায় মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করেন। মামলায় তিন নম্বর আসামি করা হয়েছে ১৪ বছরের ওই কিশোর জিসানকে। এজাহারে দাবি করা হয়েছে, সোহেলকে যখন আটক করা হয় তখন দুইজন লোক পালিয়েছে। তাদের একজন ১৪ বছরের কিশোর জিসান।

মামলার বাদি এসআই মোস্তাফিজুর রহমান এ বিষয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি। তিনি বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছুই বলতে পারবো না। ওসি’র সাথে কথা বলেন।

মুঠোফোনে জিসানের মা লায়লা বেগম বলেন, জিসান বাজালিয়া শেরে বাংলা উচ্চ বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণীতে পড়ে। তার বাবা দিনমজুর। চার ভাই এক বোনের মধ্যে জিসান তৃতীয়। লকডাউনে স্কুল বন্ধ থাকায় বাবার সাথে মাঠে কাজ-কর্ম থাকলে তার ভালো লাগছিলো না। জিসানের মামাতো বোনের জামাই সোহেলকে আমরা বলেছিলাম ছেলেটিকে কোথাও একটি চাকরি দিতে পারলে উপকার হতো। সোহেল বলেছিলো চট্টগ্রামে তাকে একটি চাকরি দেবে। গত ২১ নভেম্বর জিসানকে চাকরিতে নিয়ে যাবার কথা জানিয়েছিল সোহেল। সে আশায় জিসান সকাল থেকে চট্টগ্রামে যাবার জন্য অপেক্ষায় ছিল। কিন্তু অপেক্ষার পরও সোহেল না আসায় সকাল আনুমানিক নয়টার দিকে জিসান আমার মোবাইল নম্বর থেকে (০১৩১০-৭৯১৭২২) সোহেলের মোবাইলে একাধিকবার ফোন দেয়। কিন্তু সোহেল কল ধরেনি। পরে জানতে পারি, সোহেল ইয়াবা নিয়ে চট্টগ্রামে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে।

বাজালিয়া শেরে বাংলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সজল কান্তি দাশ জানান, বাজালিয়া শেরে বাংলা উচ্চ সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে জিসান। তার রোল নম্বর ১৩১।

কিশোর জিসানকে সমুদ্র পথে ইয়াবা পাচার মামলার এজাহারভুক্ত আসামি করা প্রসঙ্গে চান্দগাঁও থানার পরিদর্শক (ওসি) আতাউর রহমান খন্দকার জানান, আমরা তো কাউকে চিনি না। ইয়াবা উদ্ধারের সময় দু’জন পালিয়েছে। গ্রেপ্তার সোহেল যাদের নাম বলেছে তাদেরকে এজাহারভুক্ত আসামি করা হয়েছে। তবে কে-কতটুকু জড়িত বা জড়িত নয় তা আমরা তদন্ত করে দেখছি।

 

পূর্বকোণ/পি-এম

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট