চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

বেলার সেমিনারে বক্তারা

খাল উদ্ধার ছাড়া স্লুইস গেট নির্মাণ করে নগরীর জলাবদ্ধতা দূর হবে না

নিজস্ব প্রতিবেদক

১১ ডিসেম্বর, ২০২০ | ৩:৩৭ অপরাহ্ণ

নগরীতে আয়োজিত এক সেমিনারে বক্তারা বলেছেন, ১৯৬৯ সালের ফ্লাড ডিটেইল প্ল্যান অনুযায়ী নগরীর ৭১টি খাল উদ্ধার না করে শুধু স্লুইস গেট নির্মাণ করে চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা দূর করা সম্ভব নয়।

বক্তারা বলেছেন, জলাবদ্ধতা দূর করতে গত ১৪ বছরে শুধু চাক্তাই খালে ৩২৪ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। যা প্রতিবছর গড়ে ২৩ কোটি টাকা। কিন্তু চাক্তাই খাল আগের মতোই রয়ে গেছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে নগরীর লালখান বাজার এলাকার একটি রেস্তোরাঁয় বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) আয়োজিত ‘বৃহত্তর চট্টগ্রামের নদী, খাল ও জলাশয় রক্ষায় করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।

বক্তারা বলেন, চট্টগ্রাম মহানগরীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ-জলাবদ্ধতা নিরসন ও নিষ্কাশন ব্যবস্থার কর্ণফুলী নদীতে পড়া ২৩টি, হালদায় তিনটি এবং বঙ্গোপসাগরে পড়া ১৪টি খালের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে ৬৯টি পাম্প হাউস নির্মাণ ও চাক্তাই রাজাখালী মহেশ খালে স্লুইস গেট নির্মাণ একটি আত্মঘাতী পরিকল্পনা। নদীতে জোয়ারের সময় স্লুইস গেট বন্ধ থাকলে এবং ওই সময় নগরীতে ১০০ মিলি লিটারের অধিক বৃষ্টিপাত হলে অধিকাংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। এরমধ্যে স্লুইস গেট নির্মাণ করা মানেই হচ্ছে খালকে চিরতরে হত্যা করা।

বক্তারা অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, মিরসরাই ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগর’ এর জন্য মোহরা পানি শোধনাগার ফেজ-২ স্থাপন করে দৈনিক ১৪ কোটি লিটার পানি উত্তোলন করা হলে হালদার জীববৈচিত্র ধ্বংস হয়ে যাবে। অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন, পাহাড় কাটা, জুম চাষ ইত্যাদি কারণে বৃহত্তম চট্টগ্রামের কর্ণফুলি ও তার উপ-নদীসমূহ রাইনখিয়াং, কাসালং, হালদা, ইছামতী এবং পাহাড়ি নদী বাকখালী সাঙ্গু মাতামুহুরী নাফ ফেনী নদী ভরাট হয়ে শুষ্ক মৌসুমে নাব্যতা সংকট এবং বর্ষাকালে বন্যায় নদী ভাঙ্গন এবং উভয় তীরের এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রফেসর ড. শাহ আলমের সভাপতিত্বে আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক জমির উদ্দিন। সেমিনারে লিখিত প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক আলীউর রহমান। বক্তব্য রাখেন বেলা’র হেড অব প্রোগ্রাম এডভোকেট খোরশেদ আলম, প্রোগ্রাম এন্ড ফিল্ড কোর্ডিনেটর এ এম এম মামুন।

সেমিনারে উত্থাপিত দশ দফা সুপারিশে মহানগর পর্যায়ে নদী কমিশন, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়, বন্দর কর্তৃপক্ষ, পরিবেশ অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং উপজেলা পর্যায়ে ইউএনও, ইউনিয়ন পরিষদের সমন্বয়ে নদী খাল ও জলাশয় রক্ষায় এক হয়ে কাজ করার উপর তাগিদ দেয়া হয়। এছাড়া পুকুর দিঘি জলাশয় ও নদীর সীমানা নির্ধারণ করে প্রয়োজনীয় গাইড ওয়াল নির্মাণ করে তা সংরক্ষণ করার সুপারিশ করা হয়।

সেমিনারে বক্তব্য রাখেন, সুপ্রভাত বাংলাদেশ এর চিফ রিপোর্টার ভূইয়া নজরুল, ক্যাব উপ-পরিচালক নাজের হোসাইন, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক সঞ্চয় বিশ্বাস, ব্লাস্ট এর এডভোকেট জিন্নাত আমিন, টিআইবি প্রতিনিধি তৌহিদ আলম, কর্ণফুলী নদী সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি এস এম পেয়ার আলী, সহ সভাপতি মোহাম্মদ লোকমান দয়াল প্রমুখ।

 

 

 

 

 

পূর্বকোণ/পি-আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট