চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

১১ ডিসেম্বর ওয়াপদা অফিসে রাজাকার ক্যাম্পে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নিই

বীর মুক্তিযোদ্ধা কবির আহমদ

১১ ডিসেম্বর ওয়াপদা অফিসে রাজাকার ক্যাম্পে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নিই

অনুপম কুমার অভি

১১ ডিসেম্বর, ২০২০ | ২:৪৮ অপরাহ্ণ

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সেই দিনের ঐতিহাসিক ভাষণের পর পাকহানাদার বাহিনী এদেশের রাজাকার আলবদরদের সাথে নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে নারী পুরুষদের শারীরিক নির্যাতন ও ঘরবাড়িতে অগ্নি সংযোগ শুরু করে। তাদের এই নির্যাতনের চিত্র দেখে মনের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এসময় এসএসসি পরীক্ষার্থী অবস্থায় যুদ্ধে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি।

কথাগুলো বলছিলেন বাঁশখালীর বীর মুক্তিযোদ্ধা কবির আহমদ। যুদ্ধ শুরুকালীন ভারতের দেমাগ্রী থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে পাহাড়ি পথ বেয়ে গ্রুপ কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম বাঁশখালী পুকুরিয়া ও বাণীগ্রাম কু- স্টেট পাহাড়ে অবস্থান নেন। ওই সময় তিনি এলাকার উঠতি বয়সী মুজিব ভক্ত ১৮/২০ জন যুবককে একত্রিত করে কু- স্টেট (বর্তমান চা বাগানে) পাহাড়ে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে প্রশিক্ষণ দেন। পরে ভারী অস্ত্র শস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে একমাস বিশ দিন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে বাণীগ্রাম পাহাড়ি এলাকায় অবস্থান নেন বীর মুক্তিযোদ্ধা কবির আহমদ।

তিনি আরো বলেন, বাঁশখালীতে ১৯৭১ সালের ১৯ মে পাকবাহিনী ও দেশীয় রাজাকার আলবদর বাহিনীর সদস্যরা প্রথম হানা দেয়। ওইদিন ১০টি সাজোয়া বহর নিয়ে বাণীগ্রাম এলাকায় আক্রমণ শুরু করে। পুইছড়ির নাপোড়া এলাকা পর্যন্ত পাকবাহিনীর সদস্যরা নিরীহ মানুষদের উপর গুলি, নির্যাতন ও অগ্নিসংযোগ শুরু করে। তখন বিভিন্নভাবে বাঁশখালী গ্রুপের সাথে সোর্সের মাধ্যমে যোগাযোগ করা শুরু করেন। ক্যাম্প থেকে খরব আসে বাঁশখালী ডিগ্রি কলেজ সংলগ্ন জঙ্গলে ৪০ জন ও বাণীগ্রাম মধ্য পাড়া পুকুর পাড়ে ২২ জন লোককে হত্যা করে গর্ত করে পুঁতে ফেলা হয়েছে।

এসময় বাঁশখালী, কুতুবদিয়া, দক্ষিণ চট্টগ্রামের মুক্তিবাহিনীর কমান্ডারগণ একত্রিত হয়ে বি.এল.এফ কমান্ডার ডা. আবু ইউসুফ চৌধুরী ও আনোয়ারা-বাঁশখালী কমান্ডার মোক্তার আহমদ বাঁশখালীর মুক্তিযোদ্ধাদের পেছনে নেতৃত্বে থাকেন এবং সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর নিতে থাকেন। ১৯৭১ সালের ১৭ নভেম্বর বাণীগ্রাম ও পুকুরিয়া ক্যাম্পের মুক্তিযোদ্ধারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে পাকিস্তানি সৈন্য ও রাজাকারদের অবস্থান নেয়া সাধনপুর ইউনিয়ন পরিষদে রাজাকার ক্যাম্পে আক্রমণ চালান। এসময় পাকিস্তানি ও রাজাকার সৈন্যদের গুলিতে রাতের তাঁদের সাথে থাকা বরিশালের বাসিন্দা সার্জেন্ট মহিউল আলম শহীদ হন।

এছাড়া গুনাগরী ওয়াপদা রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণের জন্য বাঁশখালীর পাঁচটি মুক্তিযোদ্ধা গ্রুপের প্রায় শতাধিক সদস্য ১০ ডিসেম্বর রাতে অবস্থান নিয়ে ১১ ডিসেম্বর ভোরে গুণাগরী ওয়াপদা অফিস রাজাকার ক্যাম্পে সম্মুখযুদ্ধে অবতীর্ণ হন। বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ হয়ে রাজাকারদের উপর আক্রমণ শুরু করেন তাঁরা। ওই সময় রাজাকার আলবদর সদস্যদের লক্ষ্য করে শত শত রাউন্ড গুলি বর্ষণের ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে পাকিস্তানি দোসর রাজাকার আলবদর সদস্যরা আত্মসমর্পণ করে। ওই ক্যাম্প থেকে অর্ধশতাধিক রাজাকার আলবদর সদস্য এবং গোলাবারুদসহ তাদেরকে বাণীগ্রাম ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। ১৯৭১ সালের ১২ ডিসেম্বর বাঁশখালী পাকহানাদার মুক্ত হয়। ১৪ ডিসেম্বর বাঁশখালী থানার অস্ত্রাগার দখলে নেয়া হয়।

পুকুরিয়া ইউনিয়নের রওয়াজো পাড়ার মৃত হামিদ আলী ও মৃত গোলাফ জানের ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা কবির আহমদ ২ সন্তানের জনক। ব্যক্তিগত জীবনে একসময় ইউপি সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করলেও বয়সের ভারে এখন নুয়ে পড়েছে। তার মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ক্রমিক নং- ৬৪৩৯, সনদ নং- ১৬২৫৫৯, গেজেট নং- ৪১৮৪, লাল মুক্তিবার্তার ক্রমিক নং- ২০২০৫০০৬২।

তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযোদ্ধাদের মানোন্নয়নে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বৃদ্ধি, বসতবাড়ি নির্মাণ, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের চাকুরির ব্যবস্থা করেছেন। এজন্য সরকারের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।

 

 

 

 

 

পূর্বকোণ/পি-আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট