চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

গোলপাহাড় মোড়ে অকারণে গুলি ছোড়েন ‘ঝুট আলম’

পিস্তলের লাইসেন্স বাতিলের সুপারিশ করবে পুলিশ

গোলপাহাড় মোড়ে অকারণে গুলি ছোড়েন ‘ঝুট আলম’

নাজিম মুহাম্মদ

১০ ডিসেম্বর, ২০২০ | ৩:১৯ অপরাহ্ণ

নগরীর গোলপাহাড় মোড়ে গভীর রাতে পিস্তল থেকে গুলি ছুড়েছিলেন আলমগীর আলম। গার্মেন্টসের ঝুট ব্যবসায়ী আলম সবার কাছে ‘ঝুট আলম’ হিসাবে পরিচিত। ঘটনার দিন ব্যবহৃত ঝুট আলমের গাড়িটি পুলিশ ইতিমধ্যে জব্দ করেছে।

পুলিশ জানিয়েছে পিস্তলটি আলমের নামে লাইসেন্স করা। অপব্যবহার করার কারণে পিস্তলটির লাইসেন্স বাতিলের সুপারিশ করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। গত ২ ডিসেম্বর রাত সাড়ে তিনটায় নগরীর গোলপাহাড় মোড়ে উপর্যুপরি গুলি ছোড়ার এ ঘটনা ঘটেছিল। ঘটনাস্থল থেকে পিস্তলের গুলির সাতটি খোসা উদ্ধার করে পুলিশ। পাঁচলাইশ থানা পুলিশের পাশাপাশি গুলি ছোড়ার বিষয়টির ছায়া তদন্ত করে নগর গোয়েন্দা পুলিশ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের বাসিন্দা আলম বায়েজিদ এলাকার বিভিন্ন গামেন্টসে ঝুটের ব্যবসা করেন। আতুরার ডিপো এলাকায় তার অফিস রয়েছে। নগরীর নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটির দুই নম্বর সড়কে বসবাস করেন। আলম নিজেকে নগর যুবলীগের কর্মী হিসাবে পরিচয় দিয়ে থাকেন।

নগর পুলিশের উত্তর জোনের উপ-কমিশনার (ডিসি) বিজয় বসাক জানান, গভীর রাতে গুলি ছোড়া ব্যক্তিকে আমরা শনাক্ত করেছি। তিনি নিজের নামে লাইসেন্স করা পিস্তল থেকে গুলি ছুড়েছেন। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ঘটনার দিন ব্যবহৃত প্রাইভেটকারটি পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে গোলপাহাড় এলাকার কয়েকজন ব্যক্তি জানান, ২ ডিসেম্বর রাত আনুমানিক তিনটা থেকে সাড়ে তিনটার দিকে হঠাৎ করে পর পর সাত-আটটি গুলির শব্দে লোকজনের ঘুম ভেঙ্গে যায়। ছোড়া কয়েকটি গুলি আশেপাশের বাসার জানালার কাঁচেও লাগে। একটি বাসার কাঁচ ভেদ করে গুলি ভেতরে ঢুকে যায়। ঘটনাস্থলের ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরায় (সিসি) ধারণকৃত গুলি ছোড়ার একটি ভিডিও ক্লিপসে দেখা যায়, গোলপাহাড় মোড়ের আরবি টাওয়ার ভবনের সামনে একটি কালো প্রাইভেটকার থামে রাত তিনটা ২০ মিনিটের দিকে। গাড়ি থেকে নামা চার যুবকের একজন পর পর গুলি ছোড়েন।

গুলি ছোড়ার বিষয়টি তদন্ত করছে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। গোয়েন্দা বিভাগের (উত্তর-দক্ষিণ) উপ-কমিশনার মো. আলী হোসাইন জানান, আলমগীর আলম নামে এক ব্যক্তি তার লাইসেন্স করা পিস্তল থেকে গুলি ছুড়েছিলেন। আলমকে আমরা ডেকেছিলাম। তিনি নিজের লাইসেন্স করা পিস্তল থেকে গুলি ছোড়ার করা স্বীকার করেছেন। কেন গুলি ছুড়েছেন তার সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারেননি তিনি।জিজ্ঞাসাবাদে আলম জানিয়েছেন, ওইদিন রাতে আলম তার এক বন্ধুকে নামিয়ে দিতে গোলপাহাড় এলাকায় গিয়েছিলেন। গাড়ি থেকে নামার পর ওখানে তাকে লক্ষ্য করে একজন গুলি ছুড়েছে। এর জবাব দিতে তিনিও পাল্টা গুলি ছুড়েছেন।

সিএমপির উপ-কমিশনার আলী হোসাইন বলেন, আলমগীর আলমের বক্তব্য আমাদের কাছে সত্য বলে মনে হয়নি। কারণ ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরায় তাকে লক্ষ্য করে কেউ গুলি করেছে এমন তথ্য মেলেনি।

ডিসি আরও জানান, প্রকাশ্যে জনসমাগমস্থলে কোনো কারণ ছাড়া এভাবে গুলি করা ঠিক হয়নি। তার গুলি ছোড়ার কারণে ওই এলাকায় বসবাসরত মানুষের মাঝে ভীতি ছড়িয়েছে। এতে কোনো পথচারী হতাহতের ঘটনাও ঘটতে পারতো। তিনি অস্ত্রের লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ করেছেন। এ ব্যাপারে কেউ মামলা দায়ের করলে তাকে গ্রেপ্তার করা যেতো। কিন্তু কেউ মামলা করেননি। তবে তার অস্ত্রটি জব্দ করার পাশাপাশি লাইসেন্স বাতিলের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠানো হবে।

মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মো. ফখরুদ্দিন জানান, আত্মরক্ষার জন্য নেয়া লাইসেন্স করা অস্ত্রের অপব্যবহার করলে ওই অস্ত্র পুলিশ জব্দ করতে পারে। অস্ত্রের লাইসেন্সের অনুমোদন দেন জেলা প্রশাসক। লাইসেন্স করা অস্ত্রের মালিকের বিরুদ্ধে পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল করলে জেলা প্রশাসন তা গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নিয়ে থাকে।

 

 

 

 

পূর্বকোণ/পি-আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট