চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

জহুর আহমেদ চৌধুরী বিভাগীয় স্টেডিয়াম

নিজভূমেই পরবাসী চট্টগ্রামের ক্রিকেট!

হুমায়ুন কবির কিরণ

১০ ডিসেম্বর, ২০২০ | ১২:২৬ অপরাহ্ণ

ক্রীড়াঙ্গনে চট্টগ্রামের রয়েছে সুপ্রাচীন ঐতিহ্য। ক্রিকেট কিংবা ফুটবল কিংবা অন্য কোন ইভেন্ট সময়ের ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রাম পেয়েছে ঈর্ষণীয় সব সাফল্য। ফুটবলে পৃথক কোন ভেন্যু না থাকলেও ক্রিকেটের জন্য রয়েছে দুটি আন্তর্জাতিক ভেন্যু। একটি চট্টগ্রামের ক্রীড়ার অন্যতম চালিকাশক্তি এম এ আজিজ স্টেডিয়াম, এই মাঠেই ২০০৫ সালে প্রথম টেস্ট জয়ের স্বাদ পেয়েছিল টাইগাররা।

অন্যটি জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম, যাকে অনেকেই বিভাগীয় বা সাগরিকা স্টেডিয়াম নামেও জানেন। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)’র নিয়ন্ত্রণে থাকা বিভাগীয় স্টেডিয়াম শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্যই বরাদ্দ। বিসিবির আয়োজনে বিভিন্ন লিগ, টুর্নামেন্টের খেলাও এই ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠিত হয় এ দলের ম্যাচও।

চট্টগ্রামের ঘরোয়া ক্রিকেটেও কিছু কিছু ম্যাচ এই ভেন্যুতে গড়ায়। বিশেষ করে জেলা ক্রীড়া সংস্থার প্রিমিয়ার ও প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগের বেশ কিছু ম্যাচ অনিয়মিতভাবে বিভাগীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়। আইসিসির ভেন্যু গাইডলাইন অনুসরণের প্রক্রিয়ায় অনেক ক্ষেত্রেই বিসিবি সর্বস্তরের ঘরোয়া ক্রিকেট আয়োজন করতে পারে না ভেন্যুটিতে।

আধুনিক ক্রিকেটে একটি আন্তর্জাতিক ভেন্যুকে টিকে থাকতে গিয়ে অনেকগুলো শর্তই মেনে চলতে হয়। এর মধ্যে অন্যতম, নির্দিষ্ট মাসে একটি পিচ যাতে কোনভাবেই ৬-৭ দিনের বেশি ব্যবহার করা না হয়। আছে কোন সফরের আগে ভেন্যু প্রস্তুতি প্রসঙ্গও। তারপরও বিসিবি প্রায়ই চেষ্টা করে জেলা ক্রীড়া সংস্থার কোন আয়োজনে মাঠটিকে পরিকল্পিত উপায়ে ব্যবহার করতে। কারণ, আন্তর্জাতিক সুচির বাইরে ভেন্যুটিতে ঘরোয়া ক্রিকেট আয়োজনে কোন বাধা নেই।

এ প্রসঙ্গে বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সিরাজউদ্দিন মো. আলমগীর ও সহ-সভাপতি আলী আব্বাস বলেন, ‘সাগরিকা স্টেডিয়ামটি বাংলাদেশ ক্রিকেটের গর্ব। আন্তর্জাতিক ভেন্যু হিসাবে সেখানে নিয়মিত চট্টগ্রামের ঘরোয়া ক্রিকেট আয়োজন কষ্টসাধ্য। তাছাড়া অনেক ক্লাবই আছে যারা বহুবিধ কারণেই এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে খেলতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। তবে সিজেকেএস সাধারণ সম্পাদক যেহেতু বিসিবিরও পরিচালক, চাইলে আন্তর্জাতিক সূচির সাথে ঘরোয়া ক্রিকেটের যথোপযুক্ত সমন্বয় করে বিভাগীয় স্টেডিয়ামে নিয়মিতই চট্টগ্রামের অভ্যন্তরীণ ক্রিকেট আয়োজন করতে পারে।’

কিছুটা ভিন্নভাবে নিজের অভিমত জানালেন সিজেকেএস ক্রিকেট সম্পাদক আব্দুল হান্নান আকবর। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন অজুহাতে আমরা মাঠ পাই না। চট্টগ্রামের ঘরোয়া ক্রিকেট সাধারণত ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি-মার্চ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়। এই সময় আন্তর্জাতিক সূচি ছাড়া অন্যান্য আয়োজন সম্ভব হলে দেশের অন্য ভেন্যুতে দিয়ে মাঠটি চট্টগ্রামের জন্য বরাদ্দ দিলে দারুণ উপকৃত হতো এখানকার ক্রিকেট। নির্দিষ্ট ক্যালে-ার পেলে আমরা সেভাবেই সূচি সাজাতে পারতাম।’

বিভাগীয় স্টেডিয়ামে চট্টগ্রামের ঘরোয়া ক্রিকেটের নিয়মিত আয়োজন প্রসঙ্গে স্টেডিয়ামটির ভেন্যু ম্যানেজার ফজলে বারী খান রুবেল বলেন, ‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সূচির বাইরে ভেন্যুতে নিয়মিতই সিজেকেএস’র প্রিমিয়ার ও প্রথম বিভাগ ক্রিকেট অনুষ্ঠিত হয়। তবে যেহেতু এটি আন্তর্জাতিক ভেন্যু তাই আইসিসির গাইডলাইন মেনেই যে কোন খেলা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে বোর্ড। আন্তর্জাতিক সূচিতে ব্যস্ত থাকলে সঙ্গত কারণেই অনেক সময় ঘরোয়া আয়োজনের সুযোগ কমে যায়। একইসাথে বিসিবির লিগ বা টুর্নামেন্ট এবং আন্তর্জাতিক ম্যাচের সূচির বাইরে ভেন্যুতে ঘরোয়া আয়োজন অনুষ্ঠানে কোন বাধাই নেই।’

প্রসঙ্গত আন্তর্জাতিক ভেন্যু হিসাবে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের জন্ম ২০০৬ সালের জানুয়ারিতে। তার আগে ২০০৪ সালে আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়েছিল এখানে। টাইগারদের ধারাবাহিক সাফল্যের জন্য ভেন্যুটি বাংলাদেশ ক্রিকেটের লাকি গ্রাউন্ড নামেও পরিচিত।

জানা যায়, ভেন্যুটিতে দায়িত্বে থাকা বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও রক্ষণাবেক্ষণে মাসে ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা খরচ হয়। পুরো খরচই বহন করে বিসিবি। এই রক্ষণাবেক্ষণ ও আইসিসির মানদ- সঠিকভাবে অনুসরণ করতে গিয়েই নিজভূমে পরবাসী অবস্থা চট্টগ্রামের ঘরোয়া ক্রিকেটের।

 

 

পূর্বকোণ/পি-আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট