চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

পতেঙ্গার বাতাসে টিএসপির গ্যাস

কারখানার নির্গত গ্যাসে অসুস্থ হয়ে ৪ জন হাসপাতালে ভর্তি

পতেঙ্গার বাতাসে টিএসপির গ্যাস

ঝলসে গেছে জমির ফসল, কারণ খুঁজতে ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি

১০ ডিসেম্বর, ২০২০ | ১১:৪৮ পূর্বাহ্ণ

নগরীর পতেঙ্গায় টিএসপি (ট্রিপল সুপার ফসফেট) কারখানার নির্গত গ্যাসে (সালফিউরিক) আশপাশের বহু মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এর মধ্যে গুরুতর শ্বাসকষ্ট নিয়ে চার ব্যক্তি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আশপাশের কৃষি জমির ফসল ঝলসে গেছে। পতেঙ্গার বাতাসে ছড়িয়ে পড়া বিষাক্ত গ্যাসে মঙ্গলবার মধ্যরাতে স্থানীয় বাসিন্দাদের শ্বাসকষ্টে চরম অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে।

এ ঘটনায় টিএসপি কর্তৃপক্ষ চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। একইসঙ্গে অসুস্থদের দেখতে গিয়ে তাদেরকে সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা নিয়েছেন। অসুস্থদের যাবতীয় ব্যয়ভার বহনের পাশাপাশি প্রয়োজনে উন্নত চিকিৎসা প্রদানের ব্যবস্থা নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বিষাক্ত গ্যাসে অসুস্থ হয়ে সিমেন্টক্রসিং এলাকার সিটি জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হোন এক তরুণীসহ চার যুবক।

তারা হলেন : ওমর সাইদ (২২), মো. জহির (২৫), মনির হোসেন (২০) ও শারমিন আক্তার (১৮)। তবে স্থানীয়রা জানান, গ্যাস লিকেজের কারণে আরও একাধিক মানুষও শ্বাসকষ্টে ভুগেছিলেন। যদিও এ ঘটনায় বড় কোন দুর্ঘটনা ঘটেনি। তবে ক্ষতির মুখে পড়েছে পতেঙ্গা এলাকায় বহু সংখ্যক ফসলের জমির। সিটি জেনারেল হাসপাতালে কর্মকর্তা আশরাফুল্লাহ আকাশ পূর্বকোণকে বলেন, ‘রাত সাড়ে ১২টার দিকে শ্বাসকষ্ট নিয়ে চারজন ভর্তি হয়। এদের মধ্যে একজনের অবস্থা খারাপ ছিল। যদিও পরবর্তীতে চিকিৎসা শেষে বুধবার বিকেলে বাসায় ফিরেছেন।’

কারখানা সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, কেমিক্যাল সংক্রান্ত কারখানাগুলোর উৎপাদন কাজের সময় এসিডসহ বিষাক্ত গ্যাস নির্গত হয়ে থাকে। জমে যাওয়া এসব গ্যাস বিশেষ প্ল্যান্টে নিয়ে কিছুদিন পর পর নষ্ট বা পুড়িয়ে ফেলা হয়। তবে টিএসপি কারখানা প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এ ধরণের কোন প্ল্যান্ট সেখানে প্রতিষ্ঠা করা হয়নি। যে কারণে এ সার কারখানায় জমে যাওয়া গ্যাসগুলো বিশেষ কৌশলে বাতাসের গতি দেখে ছেড়ে দেয়া হয়ে থাকে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও যুব নেতা ওয়াহিদ হাসান জানান, ‘প্রতিবছরই এমন ঘটনা ঘটে থাকে। যদিও এ গ্যাস ছাড়লে বাতাসের সাথে উড়ে চলে যায়। তবে এ দিন কুয়াশা থাকার কারণে তা নিচে নেমে আসে। তাছাড়া এমন কারখানা অসংখ্য আছে, যাতে এসব গ্যাস নষ্ট বা পুড়িয়ে ফেলতে নিজস্ব প্ল্যান্টও থাকে। তবে দুর্ভাগ্যে টিএসপিতে তা নেই। এতে করে আশপাশের মানুষ ক্ষতির মুখে পড়ছে, ক্ষতি হচ্ছে পরিবেশরও।’

‘যদিও ঘটনার পরপরই টিএসপি কর্তৃপক্ষ অসুস্থদের দেখতে হাসপাতালে গিয়েছেন এবং তাদের খরচ ও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পাশে দাঁড়ানোর, বিনামূল্যে সার ও বীজ বিতরণসহ পরিবেশ ভারসাম্য রক্ষায় এলাকার বৃক্ষ রোপনের কথা জানানো হয় বলেও জানান স্থানীয় বাসিন্দা ওয়াহিদ।

এদিকে, এ ঘটনায় টিএসপি কর্তৃপক্ষ চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটিকে যথাশীঘ্র প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়।

টিএসপির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ইঞ্জিনিয়ার মো. আতাউর রহমান পূর্বকোণকে বলেন, ‘৪৫ বছরের পুরোনো এ কারখানা। যেহেতু এখানে গ্যাসসহ বিভিন্ন কেমিক্যাল রয়েছে, তাই এসব বিষয়ে খুবই সচেতনতার সাথে কাজ করা হয়। তবে এদিন রাতে ৪/৫ ঘণ্টা মেশিন বন্ধ থাকার পর চালু করা হয়। যদিও গ্যাসগুলো বাতাসের সাথে উপরে চলে যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু কুয়াশার কারণে তা উপরে উঠতে পারেনি। বিষয়টি নজরে আসার সাথে সাথেই তাৎক্ষণিক কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়। একই সাথে যারা অসুস্থ হয়েছেন, তাদের খোঁজ খবর থেকে শুরু করে ভর্তি হওয়া অসুস্থদের চিকিৎসার সব ব্যয় বহন করে কর্তৃপক্ষ। ঘটনায় ইতোমধ্যে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। আমরা এসব বিষয়ে আগে থেকেই সচেতন আছি। সামনে যেন এমন ঘটনা না ঘটে, তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

 

 

পূর্বকোণ/পি-আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট