চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ব্যাটারি রিকশা: এসআই কাজলের টোকেন মানেই বৈধ!

পুলিশের সহায়তায় ব্যাটারি রিকশা চালানোর সুযোগ নেই: ওসি, চান্দগাঁও

ব্যাটারি রিকশা: এসআই কাজলের টোকেন মানেই বৈধ!

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

৯ ডিসেম্বর, ২০২০ | ১:৫১ অপরাহ্ণ

সড়ক-মহাসড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও টোকেন মধু ছাড়তে পারছেন না কালুরঘাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ কাজল সরকার। তিনি কাপ্তাই রাস্তার মাথা ফাঁড়ির ইনচার্জ থাকাকালীন থেকে অবৈধ ব্যাটারি রিকশা চলে আসছে। মাঝে-মধ্যে তা বন্ধ থাকলেও বার বার চলে আসছে কাজল সরকারের নাম। কাজলের টোকেনে চলে আসছে এই অবৈধ ব্যাটারি রিকশা।

কাজল সরকারের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আপনি ওসি সাহেবের সঙ্গে কথা বলেন। একটি থানার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উনিই দেখভাল করেন।’

চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আতাউর রহমান খন্দকার পূর্বকোণকে বলেন, ‘প্রতিদিনই আমরা ব্যাটারি রিকশা টো করে ডাম্পিং করছি। গতকালও ৭টি টো করেছি। ব্যাটারি রিকশা চলাচল নিষিদ্ধ হওয়ায় পুলিশকে কড়া নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে। তাই পুলিশের সহায়তায় চলাচলের কোনো সুযোগ নেই। হয়তো বা অলিগলিতে দু-একটা চলাচল করতে পারে। তবে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’

২০১৮ সালে চট্টগ্রাম মহানগরে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধ করার জন্য দুটি সংগঠনের পক্ষ থেকে রিট পিটিশন দায়ের করা হয়েছিল। সেই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধের নির্দেশনা দেন। উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চান্দগাঁও এলাকায় নির্বিঘেœ চলাচল করছে ব্যাটারি রিকশা।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একাধিক পুলিশ সদস্যের ব্যাটারি রিকশা রয়েছে। তবে ব্যাটারি রিকশা চলাচলের নেপথ্যের নায়ক হচ্ছেন কালুরঘাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ কাজল সরকার। কাজল সরকার দীর্ঘদিন ধরে কাপ্তাই রাস্তার মাথা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ছিলেন। তখন থেকে ব্যাটারি রিকশা চলাচল বেপরোয়া ছিল।

কাজল সরকারের ইন্ধনে চান্দগাঁও এলাকার বিভিন্ন সড়কে চলছে ব্যাটারি রিকশা। পুলিশের নামে চাঁদার বড় অংশের ভাগ নেন কাজল সরকার। কাজল সরকার এখন কালুরঘাট ফাঁড়ির ইনচার্জ। তার টোকেনে চলাচল করে ব্যাটারিচালিত রিকশা। সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করেন এই কাজল সরকার।

নগরীর চান্দগাঁও থানার মোহরা, কাপ্তাই রাস্তার মাথা, সিএন্ডবি এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে ব্যাটারিচালিত অবৈধ রিকশা। উচ্চ আদালতের নির্দেশনার পর গত বছর বন্ধ হয়েছিল অবৈধ রিকশা চলাচল। কিন্তু চলতি বছরের শুরুতে পুনরায় রিকশা চলাচল শুরু হয় আরাকান সড়কে। অভিযোগ রয়েছে, বন্ধ হওয়ার পরও কালুরঘাট ও কাপ্তাই রাস্তার মাথা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জের প্রত্যক্ষ ইশারায় বার বার ব্যাটারি রিকশা চলাচল শুরু হয়।

দৈনিক পূর্বকোণে একাধিকবার সচিত্র সংবাদ প্রকাশিত হলে রিকশা চলাচল বন্ধ হয়। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই ফের চলাচল শুরু হয় অবৈধ ব্যাটারি রিকশার। প্রধান সড়ক ছাড়াও উপসড়ক এবং অলিগলিতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এসব রিকশা।

গতকাল দেখা যায়, আরাকান সড়কের কালুরঘাট সেতু থেকে কাপ্তাই রাস্তার মাথা সংলগ্ন মাজার গেট পর্যন্ত দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যাটারি রিকশা। এছাড়াও বিভিন্ন গলিতেও চলছে এসব রিকশা। জানা যায়- মহিউদ্দিন, বেলাল, ইসমাইল, লিটন ও সেলিম কোম্পানি নামে ৫ জন তা নিয়ন্ত্রণ করেন। তারা পুলিশের নামে রিকশাপ্রতি দৈনিক একশ টাকা চাঁদা আদায় করেন। পুলিশ ছাড়াও টাকার ভাগ পান স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও বিদ্যুৎ বিভাগের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারী।

বেলাল কোম্পানির কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কালুরঘাট এলাকায় ট্যাক্সিতে আছেন বলে লাইন কেটে দেন। পরে ফোন দিলেও লাইন কেটে দেন। লিটন কোম্পানিও পূর্বকোণের পরিচয় পেয়ে লাইন কেটে দেন।

দেখা যায় কালুরঘাট, মোহরা, মৌলভী পুকুর পাড়, কাপ্তাই রাস্তার মাথা মাজার গেট, সিএন্ডবি মোড়, সিএন্ডবি শিল্প এলাকা, হামিদচর, ওসমানিয়ার পুল, গোলাপের দোকান এবং কুয়াইশ এলাকায় বিভিন্ন সড়ক-উপসড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যাটারি রিকশা। নগরীর অন্যতম প্রধান সড়ক আরাকান সড়কে বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাসসহ বড় ও মাঝারি যানবাহনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দাপিয়ে চলাচল করছে ব্যাটারিচালিত রিকশা। এসব কারণে যানবাহনের স্বাভাবিক চলাচল বিঘিœত হচ্ছে। প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ও যানজট লেগে রয়েছে।

সিএন্ডবি এলাকায়ও চলাচল করে শতাধিক ব্যাটারি রিকশা। সিএন্ডবি মোড় ফায়ার সার্ভিস থেকে বিসিক ও হামিদচর এলাকায় চলাচল করে। ওসমানিয়াপুল, বিসিক ও সিএন্ডবি- এই অংশ নিয়ন্ত্রণ করেন ইসমাইল কোম্পানি। আর পাঠানিয়া এলাকা নিয়ন্ত্রণ করেন লিটন। প্রতি রিকশা থেকে দৈনিক একশ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হয়।

 

 

পূর্বকোণ/পি-আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট