চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

ত্রাণ বিক্রি করে দিচ্ছে রোহিঙ্গারা

কায়সার হামিদ মানিক , উখিয়া

১৪ জুন, ২০১৯ | ১:০৯ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজারে উখিয়ার বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা অর্ধেকের বেশি ত্রাণ বিক্রি করে দিচ্ছে। যার পরিমাণ দৈনিক কোটি টাকা বলে জানান সংশ্লি­ষ্টরা। আর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ত্রাণ বিক্রি করা এবং তাদের সিন্ডিকেটের কারণেই বেশি সহিংসতার ঘটনা ঘটছে বলেও মনে করেন তারা।
এদিকে রোহিঙ্গাদের ত্রাণ বিক্রি করার জন্য কক্সবাজার শহর সহ প্রতিটি উপজেলাতেই গড়ে উঠেছে স্থায়ী রোহিঙ্গা দোকান। আর রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ত্রাণের মাল সংগ্রহ থেকে শুরু করে দোকান পর্যন্ত পৌঁছে দিতে রয়েছে বেশ কয়েকটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট।
অন্যদিকে রোহিঙ্গাদের ত্রাণের মালামাল খোলাবাজারে বিক্রির কারণে স্থানীয় দোকানগুলোতে বিরূপ প্রভাব পড়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। আর দাম কম বলে মেয়াদোত্তীর্ণ এবং নি¤œমানের এসব খাবার খেয়ে এবং জিনিস ব্যবহার করে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে স্থানীয় মানুষ জন। তবে রোহিঙ্গাদের এসব ত্রাণের মালামাল খোলাবাজারে বিক্রি করলেও প্রশাসন কোন বাধা না দেয়ায় তা আইনি স্বীকৃতি পাচ্ছে বলে জানান সচেতন মহল। টেকনাফ মুছনী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ১ নং সেটের বাসিন্দা রোহিঙ্গা মনজিলা বেগম (৪০) জানান, আমার পরিবারে ৮ জন সদস্য আমাদের সরকারিভাবে যে ত্রাণ দেয়া হয় তা আমাদের জন্য পর্যাপ্ত তাই আমরা অর্ধেকের বেশি ত্রাণ বাইরে বিক্রি করে ফেলি। বিক্রি করে দেয়া ত্রাণের মধ্যে আছে তেল, সাবান, চাল, বিস্কুট, মশারী, চা পাতা, দুধ ইত্যাদি। আসলে আমাদের ঘরে কম বেশি সবাই বাইরে গিয়ে টাকা আয় করতে পারে তাই এত ত্রাণ দিয়ে আমরা কি করবো তাই কিছু বাড়তি টাকার জন্য ত্রাণ বিক্রি করি। আর ত্রাণের জিনিস আমাদের বাসাবাড়ি থেকে সংগ্রহ করে রমিজ ও ছালামত। তারা আবার বাইরের ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে।
বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নবিউল আলম বলেন, শুধু আমি নয় এখানে বেশিরভাগ মানুষ ত্রাণের জিনিসপত্র বিক্রি করে টাকা নিয়ে যায়। ১৫ দিন পর পর সরকারিভাবে আমাদের ত্রাণসামগ্রী দেয়া হয়। সেখানে অনেক জিনিস আমাদের অতিরিক্ত হয়ে যায় তাই সেগুলো বিক্রি করে দিই। এখানে সবাই ত্রাণের জিনিস বিক্রি করে দেয়। এ সময় মনির নামের এক রোহিঙ্গা বলেন, সরকার আমাদের ত্রাণ হিসাবে চাল, ডাল, সাবান, তেল দিচ্ছে কিন্তু মাছ তরকারিতো আর দিচ্ছে না তাই কিছু জিনিস বিক্রি করে মাছ তরকারির টাকা জোগাড় করি এখানে দোষের কি আছে ?
কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কর্মরত আইওএমের মাঠ কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, রোহিঙ্গারা অর্ধেকের বেশি ত্রাণ বাইরে বিক্রি দেয়। প্রতিদিন ত্রাণের জিনিসগুলো নেয়ার জন্য এখানে বাইরে থেকে ব্যবসায়ীরা আসে। এর আগে কিছু রোহিঙ্গা নেতারা ত্রাণের মালামাল গুলো আগে সংগ্রহ করে। তারা আবার কিছুটা বাড়তি দামে বিক্রি করে দেয় বাইরে। তারা আবার উখিয়া টেকনাফের অনেক জায়গায় বড় বড় গুদাম করেছে রোহিঙ্গাদের ত্রাণের মালামালগুলো রাখার জন্য। সেখান থেকে ব্যবসায়ীরা কক্সবাজার শহরে এমনকি ঢাকা চট্টগ্রামেও পাঠিয়ে দেয়। আর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মাঝে মধ্যে মারামারি হয় সব কিন্তু ত্রাণ বিক্রি নিয়ে। উখিয়া রাজাপালং ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী বলেন, স্বাভাবিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত ত্রাণ পাচ্ছে বলেই রোহিঙ্গারা ত্রাণ বাইরে বিক্রি করছে। আমার জানা মতে এখানে অনেক এনজিও রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা করে, তাই তাদের মধ্যে সঠিক সমন্বয় নাই।
সুজন টেকনাফ কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন রাজু বলেন, রোহিঙ্গারা বিভিন্ন ত্রাণসামগ্রী বাজারে বিক্রি করাতে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যেমন- রোহিঙ্গাদের চাল বাজারে পাওয়া যাচ্ছে ১৭০০ বা ১৮০০ টাকা (৫০) কেজি। আর স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বিক্রি করছে ২৩০০ থেকে ২৫০০ টাকায়। তেল রোহিঙ্গারা বাজারে বিক্রি করছে কেজি ৭০ টাকা আর স্থানীয় বাজারে ৯০ থেকে ১০০ টাকা। ডাল স্থানীয় বাজারে ৯০ টাকা রোহিঙ্গাদের ডাল পাওয়া যাচ্ছে ৫০ টাকায়। টুথপেস্ট রোহিঙ্গাদের ৪০ টাকা, ব্রাশ ১০ টাকা, সাবান ২০ টাকা, লবন ২০ টাকা এছাড়া মোমবাতি থেকে শুরু করে সব কিছুই পাওয়া যায় রোহিঙ্গা দোকানে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট