চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

পটিয়া উপজেলা ক্রীড়া সংস্থা: ‘আকাশের ঠিকানা’য় কার্যক্রম!

পটিয়া উপজেলা ক্রীড়া সংস্থা: ‘আকাশের ঠিকানা’য় কার্যক্রম!

মিটু বিভাস

৭ ডিসেম্বর, ২০২০ | ১২:৩১ অপরাহ্ণ

‘ভাল আছি ভাল থেকো, আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো’ কবি রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর সে বাউলের মতোই ঠিকানাহীন পটিয়া উপজেলা ক্রীড়া সংস্থা। গত ছয় বছর ধরে প্রতিষ্ঠানের কাজ চলছে যেন শূন্যে ভেসে। সংস্থার ২৫ সদস্যের বসার নির্দিষ্ট কোন স্থান নেই। অথচ চট্টগ্রামের অন্যান্য উপজেলা থেকে বেশ সচল ছিল এ সংস্থাটি।

স্বাধীনতা পরবর্তী এখানকার খেলাধুলায় নেতৃত্ব ছিল পটিয়া যুব গোষ্ঠীর হাতে। তবে কালের আবর্তে হারিয়ে গেছে ক্লাবটি। বর্তমানে ব্রাদার্স, আবাহনী, মোহামেডান, রাসেল স্মৃতি ও আবদুস ছোবাহান নামে পাঁচটি সংগঠন পটিয়ার বিভিন্ন ক্রীড়া ইভেন্টে নিয়মিত অংশ নিচ্ছে। স্থানীয় সংগঠকরা উপজেলাজুড়ে বিভিন্ন টুর্নামেন্ট আয়োজন করে মাতিয়ে রাখে পটিয়ার ক্রীড়াঙ্গনকে।

এছাড়া সিজেকেএস ফুটবল লিগেও নিয়মিত অংশ নিচ্ছে উপজেলা ক্রীড়া সংস্থা। একসময় প্রিমিয়ার লিগে থাকলেও রেলিগেশনে পড়ে বর্তমানে প্রথম বিভাগে খেলছে দলটি। করোনা মহামারীতে উপজেলায় দীর্ঘদিন খেলাধুলা বন্ধ থাকলেও খুব শীঘ্রই শুরু হচ্ছে পটিয়া ক্রিকেট লিগ নামের একটি নতুন টুর্নামেন্ট।

নিজস্ব মাঠ না থাকলেও পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের বিশাল মাঠে চলে সংস্থার ক্রীড়াযজ্ঞ। তিন একরেরও বেশি জায়গাজুড়ে থাকা এ মাঠটির একপাশে রয়েছে গ্যালারি। তবে অস্থায়ী পশুর হাট বসানোর কারণে বছরের অনেকটা সময় ব্যবহার অনুপযোগী থাকে এ মাঠটি। সবকিছু ছাপিয়ে প্রধান সমস্যা হল, সংস্থার নেই কোন স্থায়ী-অস্থায়ী কার্যালয়। ২০১৪ সাল পর্যন্ত পুরাতন আদালত ভবনে ছিল সংস্থার কার্যালয়। স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশে সে সময় স্কুল নিমার্ণের জন্য জায়গাটি ছেড়ে দিতে হয়।

গত ছয় বছরে নতুন অফিস না পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আলহাজ এম এ কাসেম বলেন, গত বছরের নভেম্বরে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে বাসায় বসে চলছে সংস্থার কার্যক্রম। এছাড়া পুরাতন অফিসের কাগজপত্রসহ যাবতীয় মালামালও এখনো বুঝে পাইনি। করোনা মহামারীর আগে মার্চের ২২ তারিখ পর্যন্ত ফুটবলারদের ক্যাম্প চালু ছিল। যাতে প্রায় ১১ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য কার্যক্রমও চালু রেখেছি। কিন্তু কার্যালয়ের ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।

এ ব্যাপারে ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী জসীম উদ্দিন পূর্বকোণকে বলেন, তৎকালীন মুহাম্মদ আবুল হাশেম ক্রীড়া সংস্থার জন্য নতুন একটি অফিস বরাদ্দের আশ্বাস দিলেও অদ্যাবদি পাঁচজন নির্বাহী কর্মকর্তা বদল হয়, কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।

তিনি বলেন, তৎকালীন ইউএনও এর নির্দেশে অফিসের আসবাবপত্রসহ সকল মালামাল উপজেলা কৃষি অফিসের এক কক্ষে রক্ষিত আছে। এছাড়া দায়িত্ব ছাড়ার সময় সকল কাগজপত্র ও সংস্থার অর্জনকৃত বেশকিছু ট্রফি সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাবিবুল হাসানের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে সাবেক ও বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা লক্ষ্য করা গেছে।

প্রতিটি উপজেলার প্রাণকেন্দ্র উপজেলা পরিষদ। তবে পটিয়া ক্রীড়াসংস্থার সাথে উপজেলা পরিষদের বন্ধন কেমন যেন ছন্নছাড়া। ক্রীড়া সংস্থার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে তেমন কোন ধারণা নেই গত অক্টোবরে দায়িত্ব নেয়া উপজেলা কর্মকর্তা ফয়সল আহমেদের।

উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার নিজস্ব অফিস নেই জেনে অবাক তিনি বলেন, দায়িত্ব পাওয়ার পর সংস্থার সদস্যদের সাথে শুধুমাত্র পরিচিতি সভা হয়েছে। সংস্থার পক্ষ থেকে এসব বিষয়ে এখনো কিছু জানানো হয়নি।

তিনি বলেন, পরিষদের সীমাবদ্ধতা অনেক। তবে সংস্থার পক্ষ থেকে আবেদন করলে তিনি সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন। পদাধিকার বলে ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি তিনি। তবে অন্যান্য উপজেলার মত দায়িত্ব নিজের হাতে মুঠোবন্দী করেননি। পটিয়া ক্রীড়া সংস্থার কার্যক্রম চালানোর পুরো দায়িত্ব নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে। তারা আরো একটু সচল-আন্তরিক হলে চট্টগ্রামে আদর্শ প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠতে পারে পটিয়া উপজেলা ক্রীড়া সংস্থা।

 

 

 

 

পূর্বকোণ/পি-আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট