চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

মাধবকে ঠাণ্ডা মাথায় কৌশলে একাই খুন করেন বিথী

আদালতে জবানবন্দি

মাধবকে ঠাণ্ডা মাথায় কৌশলে একাই খুন করেন বিথী

নিজস্ব প্রতিবেদক

৭ ডিসেম্বর, ২০২০ | ১২:১৩ পূর্বাহ্ণ

খাটের নিচে পরকীয়া প্রেমিক মাধবের লাশ রেখেই দুইদিন কাটিয়ে দিলেন প্রেমিকা-ভাবী বিথী দেবনাথ। লাশের পচাগন্ধে স্বামী পিন্টু দেবনাথ গন্ধের উৎস খুঁজতে গিয়ে খাটের নিচে মাধবের লাশ দেখতে পান। এরপর কোতোয়ালী থানায় ফোন করলে পুলিশ এসে মৃতদেহ উদ্ধার করে, এছাড়া বিথীকে শনিবার (৫ ডিসেম্বর) নগরীর টেরিবাজার থেকে গ্রেপ্তার করে। রবিবার (৬ ডিসেম্বর) বিকেলে বিথী চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার জাহানের আদালতে জবানবন্দিতে মাধবকে খুনের বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে দেন।

২ ডিসেম্বর দিনগত রাতে নগরীর টেরিবাজার অফিস গলির পিন্টু দেবনাথের ভাড়াবাসার শয়নকক্ষে খুন হন মাধব। বিথীর জবানবন্দি থেকে জানা যায়, মাধবের সাথে তার (বিথী) প্রেমের সম্পর্ক ছিন্ন করতে চাইলে মাধব কিছু নগ্ন ভিডিও দিয়ে বিথীকে ব্ল্যাক মেইল করেন। ওই ভিডিও উদ্ধার করতে মাধবকে প্রেমের অভিনয় করে ঠা-া মাথায় কৌশলে একাই খুন করেন বিথী।

বিথী জবানবন্দিতে আরো উল্লেখ করেন, তার (বিথী) বাড়ি কুমিল্লায়। ২০১৮ সালে স্বর্ণকার পিন্টু দেবনাথের সাথে পারিবারিকভাবে বিয়ের পর তার লালদিঘির ভাড়া বাসায় চলে আসেন। স্বামী পিন্টুর সাথে স্বর্ণকারের কাজ শিখতেন স্বামীর পিসতুত ভাই মাধব। মাসিক ৩৫০০ টাকায় তিনি পিন্টুর বাসায় দু’ বেলা খেতেন। তবে, ওই বাসায় মাধব থাকতেন না। বাসায় আসা যাওয়ার সুবাদে মাধবের সাথে বিথীর কথাবার্তা হতো। বিয়ের কয়েকমাস পর অসুস্থ হয়ে গেলে একমাস পিন্টুর বাসায় থাকেন মাধব। মাধবকে সেবাযত্ন করতেন বিথীর শাশুড়ি। মাধবের সেবায় সহযোগিতা করতেন বিথী। একপর্যায়ে দু’জনের মধ্যে পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে ওঠে। স্বামীর সাথে কাজের সুবাদে বাসায় কখন কেউ থাকে না তা জানতেন মাধব। ঘর খালি থাকলে মাধব চলে আসতেন বিথীর কাছে। এভাবে সম্পর্ক হওয়ার পর কোভিডের কারণে লকডাউন শুরু হলে মাধব গ্রামের বাড়ি চলে যান। সেখান থেকে বিথীর স্বামীর ফোনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একটি এপসে ভিডিওতে কথা হতো দু’জনের। একপর্যায়ে মাধবের অনুরোধে বিথী কিছু অর্ধনগ্ন ভিডিও দেন মাধবকে। ভিডিওগুলো মুছে ফেলার কথা থাকলেও সেগুলো ডিলিট না করে রেখে দেন মাধব। লকডাউনের পর মাধব শহরে ফিরে। এরপর তার কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা ধার নেয় পিন্টু । ওই টাকার জন্য পিন্টু ও মাধবের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটলে বিথীর সাথে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায় মাধবের। যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়া মানতে না পেরে মাধব নানাসময় ফোন করতেন বিথীকে। বিথী বাবার বাড়িতে বেড়াতে গেলে সেখানে বিথীর ভাবীর মোবাইলে ফোনে কথা বলেন। বিথী সম্পর্ক রাখা সম্ভব নয় বলায় বেনামে একটি এফবি আইডি খুলে বিথীর অর্ধনগ্ন ভিডিও পাঠান পিন্টুকে। একই ভিডিও পাঠানো হয় বিথীর শ্বশুরপক্ষের আত্মীয়দের কাছে। এ ব্যাপারে মাধবকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞাসা করলে ভিডিও দেয়ার কথা অস্বীকার করে। এরপর বিথীর সাথে দেখা করে সামনাসামনি কথা বলতে চান মাধব। কিন্তু নানা কারলে বিথী দেখা করতে পারেননি। এতে ক্ষিপ্ত হন মাধব। বিথীকে ফোনে জানান, মাধবের কথা মতো না চললে আগের সব ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেবেন।

গত ২ ডিসেম্বর টেরিবাজারের অফিস গলিতে রাতে আগুন লাগে। আগুন লাগার পর পিন্টুদের বাসার সবাই আগুন নেভাতে যায়। এ সুযোগে আগে থেকে ওঁৎপেতে থাকা মাধব ঢুকে পড়েন বিথীর শয়নকক্ষে। রাত সাড়ে ১০ টায় সবাই ফিরে এলে বিথী শয়নকক্ষে ঢুকে মাধবকে দেখতে পান। এসময় মাধব বাসায় কীভাবে ঢুকেছে তার বর্ণনা দেন। একপর্যায়ে বিথীকে বলেন আমি যেভাবে বলি সেভাবে না চললে ভিডিওগুলো বাজারে ছড়িয়ে দেবো। বিথী বুঝতে পারেন মাধবের কথামতো চললেও ভিডিওগুলো মাধব ছড়িয়ে দেবেন। প্রেমের অভিনয়ে কৌশলে মাধবকে ফ্লোরে শুইয়ে পিছমোড়া করে হাত বাঁধেন। পুরোনো ওড়না দিয়ে মাধবের পা বাঁধেন। দু’জনের অভিসারের শব্দ বাইরে যাতে না যায় এবং পাশের রুমে শাশুড়ির কানে না যাওয়ার অজুহাত দেখিয়ে গামছা দিয়ে মাধবের মুখ বাঁধেন। এরপর মাধবের উরুতে বসে মাধবের শরীর স্পর্শ করেন। একপর্যায়ে মাধবের পেটের উপর বসে সব শক্তি দিয়ে মাধবের গলাটিপে ধরেন বিথী। ৩-৪ মিনিট চেপে ধরার পর নাক দিয়ে রক্ত বের হয়। মাধব নিস্তেজ হয়ে যান। এরপর মৃতদেহটি খাটের নিচে ঢুকিয়ে রাখেন। মাধবের মোবাইল বের করে ভিডিও উদ্ধারের চেষ্টা করেন। প্যাটার্ন লক থাকায় মোবইল থেকে মাধবের সিম বের করে নিজ ফোনে সিমটা ঢোকান। তারপর স্বামীসহ সবাইকে মেসেজ দিয়ে জানান, বৌদি সম্পর্কে যা বলেছিলাম সব মিথ্যে। এরমধ্যে শাশুড়ি বিথীকে ভাত খাওয়ার জন্য ডাকলে তাকে (বিথী) ঘর্মাক্ত দেখে মাথায় পানি ঢালেন শাশুড়ি। প্রেসার মেপে ওষুধ খাওয়ান। রাত সাড়ে ১২টার দিকে বিথীর স্বামী বাসায় ফিরলে দু’জন শুতে যায়। দুইদিন মৃতদেহ খাটের নিচে থাকার পর রুম থেকে দুর্গন্ধ বের হয়। শনিবার দুর্গন্ধের উৎস খুঁজতে গিয়ে খাটের নিচে মাধবের লাশ দেখতে পান। পুলিশ এলে মৃতদেহ উদ্ধার করে। বিথীকে গ্রেপ্তার করে। মাধবের মোবাইলটিও উদ্ধার করে। রবিবার বিথী আদালতে স্বেচ্ছায় জবানবন্দি দেন।

 

 

 

 

 

পূর্বকোণ/পি-আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট